ডিজিটাল ব্যাংকিং সেবায় ঝুঁকছে ব্যাংক

অনলাইন ব্যাংকিং সেবা এখন অনেকটাই পুরনো। কিছুদিন আগেও অনলাইন ব্যাংকিং এই খাতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল। এখন সেই গুরুত্ব চলে গেছে ডিজিটাল ব্যাংকিংয়ের কাতারে। 

তথ্যপ্রযুক্তির কল্যাণে ব্যাংক এখন হাতের মুঠোয় চলে এসেছে। ব্যাংকিং করতে গ্রাহকদের এখন আর ব্যাংকে যেতে হয় না। ঘরে বসেই এক ব্যাংক থেকে অন্য ব্যাংকে টাকা ট্রান্সফার করা যাচ্ছে। শুধু তাই নয়, ব্যাংক এখন অ্যাপভিত্তিক সেবা দেওয়া শুরু করেছে। শুধু ব্যাংক থেকে ব্যাংকে নয়, ব্যাংক থেকে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের সুবিধাও পাওয়া যাচ্ছে। সরকারি খাতের ও বেসরকারি খাতের সব ব্যাংকই ডিজিটাল সেবায় মনোযোগ দিচ্ছে।

রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংকও অ্যাপভিত্তিক ব্যাংকিং শুরু করছে। এখন ঘরে বসেই সোনালী ই-সেবার মাধ্যমে ব্যাংকটিতে অ্যাকাউন্ট খোলা যাচ্ছে। বেসরকারি খাতের ইসলামী ব্যাংক সেলফিন অ্যাপ দিয়ে গ্রাহকদের সেবা দিচ্ছে। এভাবে পুরনো ব্যাংকের পাশাপাশি নতুন প্রজন্মের ব্যাংকগুলোও ডিজিটাল ব্যাংকিং সেবায় মনোযোগ দিচ্ছে। অর্থাৎ গ্রাম থেকে গ্রামে, শহর থেকে শহরে, শহর থেকে গ্রামে এবং গ্রাম থেকে শহরে ব্যাংকিং সেবা পৌঁছে যাচ্ছে।  বিশেষ করে ঘরে বসেই ইসলামী ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট খোলা যাচ্ছে। ঘরে বসেই নিজের একাউন্ট থেকে অন্য শাখার যেকোনো একাউন্টে টাকা পাঠানো যাচ্ছে। ব্যাংকটি সম্প্রতি এটিএম বুথের সংখ্যাও বাড়িয়েছে। এই এটিএম বুথ থেকে সব ধরনের লেনদেন হচ্ছে। এখান থেকেই মোবাইল ব্যাংকিং এমক্যাশের টাকা উঠানো যাচ্ছে। এর সঙ্গে  বিভিন্ন থানা উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে উপশাখা ও এজেন্ট শাখা থেকে গ্রাহকরা ডিজিটাল ব্যাংকিং সুবিধা পাচ্ছেন।

অর্থাৎ ইসলামী ব্যাংকে না গিয়েও একাউন্ট খোলা যাচ্ছে। ব্যাংকে না গিয়েও টাকা উঠানো যাচ্ছে। চেক বই না থাকলেও টাকা উঠানো যাচ্ছে। শুধু মাত্র একটি মোবাইল হাতে থাকলেই যেকোনও এজেন্ট শাখা থেকে ফিঙ্গার দিয়ে টাকা উঠানো যাচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ মনিরুল মওলা বলেন, মানুষ যাতে সহজে সেবা পেতে পারে সেজন্য ইসলামী ব্যাংক তথ্যপ্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার করছে। তিনি বলেন, ডিজিটাল ব্যাংকিং সেবাকে তৃণমূল পর্যায়ে পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে এজেন্ট শাখা ও উপশাখা অন্যতম ভূমিকা পালন করছে।

গ্রাহকদের অনেকেই বলছেন, সাধারণ মানুষের কাছে আশীর্বাদ হয়ে এসেছে ব্যাংকের উপশাখা। স্থানীয় হাটবাজার বা বাড়ির কাছে ব্যাংকের স্থাপিত এসব এজেন্ট ও উপশাখায় ব্যাংক হিসাব খোলা, টাকা জমা ও উত্তোলন, আমানত রাখা, ঋণসুবিধা, ইউটিলিটি বিল জমাসহ সব ধরনের ব্যাংকিং সেবা পাওয়া যাচ্ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, প্রতিদিনই বাড়ছে নতুন গ্রাহক, আমানত ও ঋণ বিতরণের পরিমাণ। অন্যদিকে ব্যবস্থাপনা খরচ কম হওয়ায় ব্যাংকগুলোও এজেন্ট ও উপশাখা স্থাপনে দিন দিন আগ্রহী হয়ে উঠছে। ব্যাংকাররা বলছেন, এজেন্ট ও উপশাখার মাধ্যমে কম খরচে আর্থিক সেবার বাইরে থাকা সাধারণ মানুষের কাছে সরাসরি ব্যাংকের সেবা পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হচ্ছে। আবার গ্রাহকদের ওপর কোনও ধরনের বাড়তি ফি বা চার্জ চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে না। ফলে উপশাখার সেবা দিন দিন প্রসার ও জনপ্রিয় হচ্ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, আর্থিক সেবার বাইরে থাকা মানুষকে ব্যাংকিং সুবিধার আওতায় আনতে বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এরই অংশ হিসেবে এজেন্ট ও উপশাখা খোলার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এর মাধ্যমেও মানুষের দোরগোড়ায় যাচ্ছে ব্যাংকিং সেবা। এতে আর্থিক অন্তর্ভুক্তি ত্বরান্বিত হচ্ছে। এই খাতে কর্মসংস্থানও বাড়ছে।

এজেন্ট শাখা হলো একটি শাখা নিয়ন্ত্রণাধীন স্থানীয় উদ্যোক্তার তত্ত্বাবধানে শাখার আদলে ব্যাংকিং লেনদেন করা।  এক্ষেত্রে শাখা ও জোনাল অফিস এজেন্ট শাখাকে তদারকি করে। এজেন্ট শাখায় ৪/৫ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী কাজ করেন।

আর উপশাখা হলো ব্যাংকের শাখার আদলে ছোট পরিসরের ব্যবসাকেন্দ্র, যা আগে ব্যাংকিং বুথ নামে পরিচিত ছিল। এটি নিকটবর্তী কোনও শাখার অধীনে পরিচালিত হয়। উপশাখায় সর্বোচ্চ ১০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী কাজ করেন। তবে কোন কোনও উপশাখা ২/৩ জন কর্মকর্তাও চালাচ্ছেন। কম লোকবল ও সাজসজ্জার কারণে খরচও কম। এর ফলে ব্যাংকগুলো উপশাখা স্থাপনে দিন দিন আগ্রহী হয়ে উঠছে। এজেন্ট ও উপশাখায় বৈদেশিক বাণিজ্যিক কার্যক্রম ছাড়া ব্যাংকের সব ধরনের সেবা দেওয়া হচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে বেসরকারি ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের সাবেক চেয়ারম্যান ও মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের এমডি সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, ডিজিটাল ব্যাংকিং সেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলো এখন সবচেয়ে বেশি মনোযোগ দিচ্ছে। এক্ষেত্রে এজেন্ট শাখা ও উপশাখায় কম খরচে ভালো সেবা দেওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। তিনি উল্লেখ করেন, আমরা একটি শাখা খুলে যে বেনিফিট পাই, মোটামুটি একই রকম বেনিফিট উপশাখা খুলেও পাচ্ছি। এর মাধ্যমে কম খরচে ব্যাংকের নেটওয়ার্কও বিস্তৃত করা সম্ভব হচ্ছে। আবার শাখার মতো প্রায় সব ধরনের সেবা পাওয়ায় গ্রাহকদের জন্যও সুবিধা হচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, ডিজিটাল ব্যাংকিং সেবা ব্যাংকগুলোকে প্রতিযোগিতায় এগিয়ে রাখছে।যে ব্যাংক যত সহজ করছে গ্রাহকরা সেই ব্যাংকের প্রতি বেশি ঝুঁকছে। এর মাধ্যমে ব্যাংকগুলোও মানুষের আরও দোরগোড়ায় ব্যাংকিং সেবা নিয়ে যেতে সক্ষম হচ্ছে। এতে আর্থিক অন্তর্ভুক্তি ত্বরান্বিত হচ্ছে। অন্যদিকে কর্মসংস্থানও বাড়ছে। তিনি বলেন, এখন প্রত্যন্ত অঞ্চলেও ডিজিটাল সেবার মাধ্যমে ব্যাংকিং লেনদেন হচ্ছে।

২০১৮ সালের ডিসেম্বরে ব্যাংকিং বুথ স্থাপন সংক্রান্ত নীতিমালা জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে বলা হয়, ব্যাংকিং বুথের আয়তন হবে এক হাজার বর্গফুটের মধ্যে। এর পরই ব্যাংকগুলো বুথ স্থাপন জোরদার করে। আর গত ডিসেম্বরে ব্যাংকিং বুথের নাম পাল্টে উপশাখা করা হয়।

জানা গেছে, উপশাখায় সব রকম ব্যাংক হিসাব খোলা, নগদ টাকা জমা ও উত্তোলন, চেকবই ও পে অর্ডার ইস্যু, ক্লিয়ারিং চেক ও পে অর্ডার জমা, আমানত ও ঋণসুবিধা, রিয়েল টাইম অনলাইন ব্যাংকিং সুবিধা, ইউটিলিটি বিল জমাসহ সব ধরনের ব্যাংকিং সেবা প্রদান করা হয়।

Related Posts

About The Author

Add Comment