চার কক্ষের পাকা বসতঘরে এক শিশুসহ পরিবারের পাঁচ সদস্য রাতে ঘুমিয়ে ছিলেন। ভারতের উজান থেকে আসা পাহাড়ি ঢলের পানিতে দালানের মেঝের নিচের বালু সরে দুটি কক্ষ ধসে পড়ে। বিকট শব্দে সবার ঘুম ভেঙে যায়। দৌড়ে কক্ষ থেকে বের হয়ে সবাই প্রাণ বাঁচান।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলার মোগড়া ইউনিয়নের নয়াদিল গ্রামের কালাম মিয়ার পরিবারে গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ১১টা থেকে সাড়ে ১১টার মধ্যে এ ঘটনা ঘটে। কালাম নয়াদিল গ্রামের মনু মিয়ার ছেলে।
কালাম মিয়া দীর্ঘ ২১ বছর ধরে দুবাইপ্রবাসী। দুই মাস আগে এক মাসের ছুটিতে দেশে আসেন। তিন বছর আগে উপজেলার হাওড়া নদী-সংলগ্ন নয়াদিল এলাকায় খালের পাড়ে ৩০ লাখ টাকা ব্যয় করে বাড়ি নির্মাণ করেন। কিন্তু বন্যার কারণে বাড়িটি এখন ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। পরিবারের সদস্যরা অন্যত্র গিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন।
পরিবারের সদস্যরা জানান, গত বৃহস্পতিবার রাতের খাবার খেয়ে পূর্ব দিকের কক্ষে স্ত্রী লুৎফা আক্তারকে নিয়ে ঘুমাতে যান কামাল। তৃতীয় কক্ষে তাঁর মা হোসেদা বেগম ও ছোট ভাই মালয়েশিয়াপ্রবাসী রুহুল আমিনের স্ত্রী আঁখি আক্তার তাঁর ১০ মাস বয়সী শিশু আবদুল্লাহকে নিয়ে ঘুমাতে যান। রাত ১১টা থেকে সাড়ে ১১টার দিকে পাহাড়ি ঢলের তোড়ে দ্বিতীয় ও চতুর্থ কক্ষের আসবাবসহ মেঝে, মেঝের নিচে থাকা মাটি ও বালু এবং বারান্দার পশ্চিম পাশের সম্পূর্ণ অংশের বালু ধসে পড়ে। বাকি দুটি কক্ষের মেঝের বালু ধসে পড়লেও মেঝে ভাঙেনি। তবে বিভিন্ন অংশে ফাটল দেখা দিয়েছে। রাতেই বিকট শব্দে ঘুম ভাঙলে দ্রুত ঘর থেকে দৌড়ে বেরিয়ে প্রাণ বাঁচান। স্থানীয় লোকজন এগিয়ে এসে তাঁদের সহায়তা করে দুই কক্ষ থেকে মালামাল বের করেন।
আজ শুক্রবার বেলা একটার দিকে সরেজমিনে দেখা গেছে, নয়াদিল এলাকার শাখাখালের পাশেই কালামের দালান। খালের পাশে থাকা সীমানাপ্রাচীরের পূর্ব দিকের সবটুকু ভেঙে গেছে। কালামের দালানকোঠার দুটি কক্ষের মেঝেসহ বারান্দার পশ্চিম দিকে অংশের নিচের বালু সরে যাওয়ায় খাল দিয়ে প্রবহমান পানি দেখা যাচ্ছে।
কালাম মিয়া বলেন, ‘আমি নিঃস্ব হয়ে গেছি। বৃহস্পতিবার রাতে আমার ঘরের দ্বিতীয় ও চতুর্থ কক্ষ ও বাড়ির বারান্দার পশ্চিম দিকে অংশ ধসে পানিতে পড়ে গেছে। বাড়ির বিভিন্ন অংশে ফাটল দেখা দিয়েছে। বাকি দুটি কক্ষের মেঝে যেকোনো মুহূর্তে ধসে পড়তে পারে। ৩০ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা বাড়িটি পাহাড়ি পানির কারণে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। তিন লাখ টাকার আসবাব পানিতে ভেসে গেছে। বিভিন্ন মানুষ খাবার দিয়ে সহায়তা করছেন। সেগুলো খাচ্ছি।’
কালামের মা হোসেদা বেগম বলেন, রাতে দুটি কক্ষ ধসে পড়ে। তখন অন্ধকার ছিল। কিছুই দেখা যাচ্ছিল না। ছোট ছেলের স্ত্রী ও সন্তানকে নিয়ে কোনোরকমে ঘর থেকে বেরিয়ে প্রাণ রক্ষা করি। সব আসবাব পানিতে ভেসে গেছে। এলাকাবাসী কিছু খাবার দিয়ে গেছেন। এগুলো এখন রান্না করছেন।
মোগড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এম এ মতিন বলেন, বৃহস্পতিবার রাতে নয়াদিল এলাকায় সেতুর এক পাশের মাটি ধসে পড়ে আখাউড়া-কসবা সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। সেখানে একটি বৈদ্যুতিক খুঁটি ধসে পড়ে এবং সেতুর পূর্ব দিকে কালামের বাড়ির দুটি কক্ষ ধসে গেছে।