নিজস্ব প্রতিবেদক, মোঃ সাইফুল আলম – আখাউড়া ডট কম
আখাউড়ায় পর্যটন শিল্পে নতুন মাত্রা যোগ হচ্ছে মিনাকোট-ঘাগুটিয়া পদ্মবিল। শুধু মাত্র স্থানীয় পর্যটকরাই না, ধীরে ধীরে বিভিন্ন জেলার পর্যটকদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠছে মিনাকোট-ঘাগুটিয়া পদ্মবিল।
ভ্রমণ পিপাসু মানুষের কাছে দিন দিন নতুন স্থানের প্রতি আগ্রহ বাড়ছে। তাই নতুন দর্শনীয় স্থানের নাম শুনলে সেখানে যেতে উৎসুক হয়ে উঠে। গত দু’তিন বছর ধরে ঘাগুটিয়া পদ্মবিলের সৌন্দর্যের চর্চা চারদিকে ছড়িয়ে পড়েছে। বিশেষ করে সোশ্যাল মিডিয়ার কল্যাণে এবং বিভিন্ন সংবাদপত্রের পাতায় স্থান পেয়েছে আখাউড়ার ঘাগুটিয়ায় মনোমুগ্ধকর পদ্ম বিলের সৌন্দর্য।বিশেষ করে সৌন্দর্য্যের কারণে পদ্মফুলকে বলা হয় ফুলের রানী। আর এই পদ্মফুলের সৌন্দর্য্য দেখতে দর্শনার্থীদের পদচারনায় মুখরিত ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আখাউড়া উপজেলার মিনারকোট, ঘাগুটিয়া ও ধর্মনগর কালীবাড়ী পদ্মবিল।
প্রায় প্রতিদিনই কোন না কোন খবরের শিরোনাম হয়ে উঠে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার অন্যতম প্রধান উপজেলা আখাউড়া। এই উপজেলার মনিয়ন্দ ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী গ্রাম ঘাগুটিয়া। তার ওপারেই ভারতের পশ্চিম ত্রিপুরার আমতলী থানার মাধবপুর গ্রাম। বাংলাদেশ ও ভারতের এই দুটি গ্রামের মাঝখানেই এই বিশাল ঘাগুটিয়া পদ্ম বিলের (Ghagutia Poddo Beel) অবস্থান যা ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহর থেকে প্রায় ৩৫ কিলোমিটার দূরে। তবে বিলটার একটা বড় অংশই পড়েছে বাংলাদেশের ঘাগুটিয়া গ্রামে।
পদ্ম ফুলের মৌসুমে ফুলে ফুলে ভরে উঠে চারদিকে। দেখে মনে হয় যেন প্রকৃতিকে সাজিয়েছে এক অপরূপ সৌন্দর্যে। দূর থেকে মনে হয় যেন কেউ ফুলের বিছানা পেতে রেখেছে। সৌন্দর্য উপভোগ করতে প্রতিদিনই জেলাসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ভ্রমণ পিপাসু লোকজন এখানে ভিড় করে।
যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো থাকায় ব্যক্তিগত গাড়ি, সিএনজি অটোরিকশা, মোটরসাইকেলসহ বিভিন্ন যানবাহনে করে দর্শনার্থীরা এখানে আসছেন। ভ্রমণ পিপাসুরা যেন মাতিয়ে তুলেন পুরো এলাকা। সৌন্দর্য উপভোগ করতে আসা দর্শনার্থীরা নৌকায় ঘুরে বেড়ানো আর বিল জুড়ে পদ্মফুলের সাথে ছবি তোলে নিজেকে স্মৃীতির ফ্রেমে বন্দি করে রাখছেন অনেকেই।
আখাউড়ার স্থানীয় সাংবাদিক সাদ্দাম হোসেন বলেন, আমি গত দুই দিন বছরে ধরে নিয়মিত এখানে পরিদর্শনে আসছি। আশে পাশের মানুষের উচ্ছ্বাসের সাথে জেলার বাহিরে থেকেও অনেক পর্যটক চোখে পড়ছে। ধীরে ধীরে এটা আমাদের এলাকার জন্য সম্ভাবনার সেক্টরে পরিনত হচ্ছে। স্থানীয় প্রশাসন যদি এই দিকে নজর দেন তাহলে আশা করছি আরও বেশী পর্যটকের আনাগোনা ঘটবে।
পদ্মবিলে আগত জাতীয় সনদ প্রাপ্ত কবি আফজাল খান শিমূল বলেন, পদ্মবিলের সুন্দর্য্য দেখতে আসা অনেক দর্শনার্থীই অকারনে ফুলগুলো ছিড়ে নিয়ে যায়। এতে করে বিলের সন্দর্য্য নষ্ট হচ্ছে দিন দিন। তাই পদ্মবিলের সুন্দর্য্য রক্ষায় অকারণে বিলের ফুল না ছিড়ার প্রতি খেয়াল রেখে এটি রক্ষনাবেক্ষনের জোর দাবি জানাচ্ছি। এই বিলের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আমরা অনেক বেশী উপভোগ করছি।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিলের মধ্যে অসংখ্য দৃষ্টি নন্দন সাদা, লাল ও গোলাপী পদ্ম ফুলের ছড়াছড়ি। আকাশে সূর্য উকি দেওয়ার পরপরই ভ্রমন পিপাসু লোকজন আসতে শুরু করে। তবে বিকাল বেলায় এর সংখ্যা কয়েকগুন বেড়ে যায়। আজ থেকে প্রায় ১০০ বছর আগ থেকে বর্ষাকালে এই বিলগুলোতে প্রাকৃতিকভাবে পদ্মফুল জন্মে। আর এই কারণেই এই বিলগুলো পদ্ম বিল নামে বেশ পরিচিতি লাভ করেছে।
আখাউড়ার এই পদ্মবিলে আষাঢ় মাস থেকে কার্তিক মাস পর্যন্ত পুরো পাঁচ মাস পদ্মফুলে রঙ্গিন থাকে। এখানের পদ্মবিলটিকে যদি সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়, তাহলে আখাউড়ায় নতুন করে তৈরী হতে পারে সুন্দর একটি বিনোদনের স্থান এমনটাই জানিয়েছেন স্থানীয় এলাকাবাসীর।
আখাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রোমানা আক্তার বলেন, পদ্মবিল গুলোর গুরুত্ব বিবেচনা করে এর উন্নয়নকল্পে যা যা করা দরকার তা করার চেষ্টা করা হবে। এটিকে আখাউড়ার মধ্যে একটি পর্যটন কেন্দ্র হিসাবে গড়ে তুলার চেষ্টা করা হবে।
পদ্ম বিল যাবার সহজ রাস্তা ও খরচ:
ঢাকা থেকে ট্রেনে আখাউড়া রেলওয়ে স্টেশন। ট্রেনের শ্রেণিভেদে ভাড়া ৬৫ থেকে ২৫০ টাকা পর্যন্ত। স্টেশনে নেমেই সিএনজিচালিত অটোরিকশা রিজার্ভ নিলে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকায় পৌঁছা যাবে বিল ঘাগুটিয়ায়। অটোরিক্সা রিজার্ভ নিয়ে নিলেই ভালো। কেননা ঘাগুটিয়া এলাকায় অটোরিক্সা নিয়মিত পাওয়া যায় না।