কৃষিজমির পলিমাটি বালুর নিচে পড়ায় ওই সব জমিতে ফসল উৎপাদন ব্যাহত হবে বলে মনে করছেন চাষিরা।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় তিতাস নদ খনন করে উত্তোলন করা বালু ফসলি জমিতে ফেলে ভরাটের অভিযোগ উঠেছে। নদের তীরের প্রায় সাড়ে ১১ একর ফসলি জমি ওই বালুতে ভরাট হয়ে গেছে। এতে জমির পলিমাটি বালুর নিচে পড়ায় ওই সব জমিতে ফসল উৎপাদন ব্যাহত হবে বলে মনে করছেন চাষিরা।
জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা গেছে, ২০১৫ সালে ১৩৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার তিতাস নদের ৯০ দশমিক ৫৭ কিলোমিটার অংশ খননের কাজ শুরু হয়। বাংলাদেশ নৌবাহিনী নারায়ণগঞ্জ বন্দর সেনাকান্দার ডকইয়ার্ড অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কস লিমিটেড নামে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ২০২১ সালের ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত নদীর ৭২ দশমিক শূন্য ৬ কিলোমিটার অংশ খনন করে।
নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ না হওয়ায় ২০২১ সালের ২২ নভেম্বর তিতাসের সদর, বিজয়নগর ও আখাউড়ার ১৪ দশমিক ৩৬ কিলোমিটার অংশ খননের পুনরায় দরপত্র আহ্বান করা হয়। ১৭ ডিসেম্বর থেকে ২০২২ সালের ৩০ জুনের মধ্যে ১৪ কোটি ৯২ লাখ টাকা ব্যয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স লিবার্টি ট্রেডার্স এবং মেসার্স সিটি ট্রেড ইন্টারন্যাশনালকে খননের কার্যাদেশ দেওয়া হয়। পরে ২০২২ সালের ৩ এপ্রিল এক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে খননকাজের মেয়াদ ২০২৩ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়।
জানা গেছে, জেবি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে মেসার্স সিটি ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের পক্ষে নদ খননের কাজটি করছেন জেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. সালাউদ্দিন, পৌর শহরের ৩ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের নেতা কবির সিকদার, সরাইল উপজেলার নোয়াগাঁও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি হেলাল উদ্দিন।
তাঁরা মে মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত তিতাসের শিমলরাইলকান্দি ও ভাদুঘর অংশ থেকে খননের বালু উত্তোলন করে শিমরাইলকান্দি অংশের কৃষিজমিতে নিয়ে রেখেছেন। মের শেষ সপ্তাহ থেকে জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত তাঁরা সাড়ে চার থেকে পাঁচ লাখ ঘনমিটার বালু উত্তোলন করেন।
তিতাস নদের শিমরাইলকান্দি মৌজার সাড়ে ১৫ একর বা ১ হাজার ৫৫০ শতক জায়গায় তিতাস খননের বালু রাখা হচ্ছে। সাড়ে ১৫ একর জায়গার মধ্যে ২৬টি বিএস দাগে ১১ দশমিক ২৭ একর জায়গার শ্রেণি নাল। ২ বা ৩ ফসলি সমতল ভূমিকে নাল জমি বলা হয়। ১৮২০ বিএস দাগে ৩ দশমিক ৮৪ একর জায়গা ইটাখলা (ইটভাটা), ১৮২৩ ও ১৮১৭ বিএস দাগে ৩৯ শতক জায়গার শ্রেণি ভিটি।
শহরের পাওয়ার হাউস রোডের আশরাফুল আলম, শিমরাইলকান্দির সাদেক মিয়া ও মানিক মিয়া এই জায়গার মালিক। বর্ষার পানি চলে গেলে শিমরাইলকান্দি এলাকার অর্ধশতাধিক কৃষক সেখানকার কৃষিজমিতে ইরি, বিআর-২৮ ও ২৯ এবং সেখানকার নিচু জমিতে বোরো ধানের চাষ করতেন।
পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের ড্রেজিং ও ড্রেজড ম্যাটেরিয়াল ব্যবস্থাপনা নীতিমালা ২০২১ অনুসারে, উত্তোলিত ড্রেজড ম্যাটেরিয়ালের একটি পরিকল্পিত ব্যবস্থাপনা করতে হবে, যাতে এর সংলগ্ন কৃষিজমি, জলাভূমি ও জলাধার ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।
গত ২৫ জুন সরেজমিনে দেখা গেছে, বালু উত্তোলন করে শিমরাইলকান্দি মৌজার পূর্ব দিকের প্রায় সাড়ে ১৫ একর জায়গা ভরাট করা হয়েছে।
ঠিকাদার কবির সিকদার ও যুবলীগের নেতা সালাউদ্দিন বলেন, ‘জায়গাটি ভাড়া নিয়েছি বলতে একজনকে (শহরের অনেক প্রভাবশালী) বালু দিতে হবে বলে নিচু জায়গা হওয়ায় এখানে বালু রাখা হয়েছে। আমরা কোনো জায়গাও পাইনি। ১০ মাসের কাজ দেড় মাসে করতে বলেছে।’
জায়গার এক মালিক আশরাফুল আলম জানান, নদ খনন করায় বালু রাখতে জায়গাটি তাঁরা ভাড়া নিয়েছেন। তাঁরা জায়গাটি আগের অবস্থায় ফিরিয়ে দেবেন বলে জানিয়েছেন।
পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মনজুর রহমান বলেন, ব্যক্তিমালিকানাধীন জায়গায় বালু রাখার বিষয়ে চুক্তিপত্র জমা দিতে শর্ত দেওয়া হয়। কিন্তু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চুক্তিপত্র দেয়নি। পানি ব্যবস্থাপনা নীতিমালা অনুযায়ী, সুপারিশের আলোকেও মাটি-বালুর বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। যদি নিলামযোগ্য অতিরিক্ত মাটি থাকে, সে ক্ষেত্রে নিলামে বিক্রি করা হয়।