ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জের হোসেনপুর গ্রামের মোহাম্মদ আকরাম মিয়া (২২) একটি ভালো জীবনের আশায় রাশিয়ায় গিয়েছিলেন। পরিবারটি আর্থিকভাবে দুর্দশাগ্রস্ত। বাবা মোরশেদ মিয়া কৃষিকাজ ও গরু পালন করেন। ছেলের ভবিষ্যতের আশায় ঋণ করে প্রায় সাড়ে ছয় লাখ টাকা দালালের হাতে তুলে দিয়ে তাকে বিদেশ পাঠান।
দালালরা আকরামকে চীনা একটি প্রতিষ্ঠানে ভালো বেতনের টেকনিশিয়ান পদের প্রতিশ্রুতি দেয়। কিন্তু সেখানে পৌঁছে তিনি হেলপারের পদ পান। এরপর দালালের আরেক প্রলোভনে পড়ে গত ৪ মার্চ রাশিয়ার সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। তাঁকে বলা হয়েছিল—রাশিয়ার নাগরিকত্ব, মাসিক প্রায় সাড়ে চার লাখ টাকার সমান বেতন দেওয়া হবে। মাত্র ১৫ দিনের সংক্ষিপ্ত প্রশিক্ষণ শেষে তাঁকে ইউক্রেনের যুদ্ধে পাঠানো হয়।শেষবার পরিবারের সঙ্গে কথা হয় ১৩ এপ্রিল। মা মোমেনা বেগমকে আকরাম বলেন, “এখান থেকে পালানোর সুযোগ নেই, পালালে গুলি করে মেরে ফেলবে। আমাকে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে।” এর একদিন পর, ১৪ এপ্রিল, ইউক্রেনীয় বাহিনীর হামলায় তিনি নিহত হন। তাঁর এক সহযোদ্ধা আফজাল হোসেন এই দুঃসংবাদটি পরিবারের কাছে পৌঁছে দেন।
আকরামের বাড়িতে শোকের মাতম চলছে। প্রতিবেশী ও স্বজনদের ভিড়ে কান্নার রোল উঠেছে। পরিবার জানায়, আকরাম রাশিয়ায় থাকাকালে কিছু টাকা দেশে পাঠিয়েছিলেন, তবে সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ার পর আর কোনো টাকা পাঠাতে পারেননি।আফজাল হোসেন নামে এক সহযোদ্ধা জানিয়েছেন, এখনো প্রায় ৪০-৫০ জন বাংলাদেশি যুবক রাশিয়ার পক্ষে যুদ্ধ করছেন, যারা সবাই দালালের ফাঁদে পড়ে এই পথে গেছেন। তিনি নিজেও দেশে ফিরতে চান।আকরামের বাবা সরকারের কাছে আবেদন জানিয়েছেন—ছেলের লাশ যেন দেশে ফিরিয়ে আনা হয় এবং যারা এখনো যুদ্ধক্ষেত্রে আটকে আছেন, তাদের যেন দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করা হয়।