পারিবারিক পরিচয় বাদ দিন, শূন্য দশকের অন্যতম সফল ও ব্যস্ত সংগীত পরিচালক ছিলেন আরমান খান। জানান দিয়েছেন ঠিকই, শরীরে বইছে কিংবদন্তি সংগীত পরিচালক বাবা আলম খানের রক্ত।
শূন্য’র পুরো দশকটা মাত করে হঠাৎ নিরুদ্দেশ এই মেধাবী। অভিমানীও বলা যেতে পারে। সেই গল্প তোলা থাক। কারণ, সেসব ভুলে সংগীত পরিচালক আরমান খান এবার হাজির হচ্ছেন কণ্ঠশিল্পী পরিচয়ে। প্রথমবারের মতো গাইলেন গান, শিরোনাম ‘বন্ধু’। আগের মতোই কথা, সুর, সংগীতায়োজন করেছেন আরমান নিজেই।
মনে করিয়ে দিলেন প্রচলিত প্রবাদ, ‘অস্ত্র জমা দিয়েছি ঠিকই, ট্রেনিং তো ভুলি নাই’!
আরমান খান ঢাকার স্টুডিও সেটআপ আর রেকর্ডিংয়ের ব্যস্ত জীবন ফেলে গত ৮ বছর যাবৎ অবস্থান করছেন সিলেটের গ্র্যান্ড সুলতান হোটেলে। হোটেলটির সহকারী মহাব্যবস্থাপকের দায়িত্ব পালন করছেন নিষ্ঠার সঙ্গে। হোটেল কেন্দ্রিক ব্যস্ততার ফাঁকে আত্মার টানে গানটাকে চর্চায় রেখেছেন হোটেল রুমে রাখা নিজস্ব গিটার-পিয়ানোতে। মূলত সেই রেশ টেনে বাঁধলেন নতুন গান ‘বন্ধু’। এটি তৈরিতে শব্দ-প্রকৌশলে সহযোগিতা করেছেন তারই ছোট ভাই আদনান খান।
এটি প্রকাশ পাচ্ছে ২৪ ফেব্রুয়ারি জি সিরিজের ব্যানারে।
আরমান খান জানান, টানা ১০ বছর পর তার কোনও মিউজিক মুক্তি পাচ্ছে। আর ডামি ভয়েসের বাইরে প্রকাশের জন্য গাইলেন জীবনে প্রথম! তার কাছে প্রশ্ন ছিল—এই যে দূরে গিয়েও ফিরে আসা, সংগীতের কাছে শ্রোতাদের কাছে…, ‘সত্যি বলতে আমি ফেরত আসিনি। সংগীত তো আমার রক্তেই আছে। আমি ইন্ডাস্ট্রি থেকে দূরে এসেছি, কিন্তু সংগীতটাকে ছাড়তে পারিনি। ওটা ছাড়া সম্ভবও না। শুধু প্রফেশন হিসেবে ওটা থেকে দূরে সরেছি ১০ বছর হলো। এখন ব্যবসা ও গ্র্যান্ড সুলতান আমার প্রফেশনাল পরিচিতি।’
হতে পারে অভিমান—আরমান খান বাংলা ট্রিবিউনকে আরও বলেন, ‘হুম গান আমি প্রথম গাইলাম। না, এটা নিয়ে বাড়তি কোনও অনুভূতি আমার মধ্যে কাজ করছে না। মন চাইলো, গান করলাম। বিষয়টি এরকমই।’
অনেকেরই ভুলে যাওয়ার কথা আরমান খানের নাম, তবে তার সুরসৃষ্টির নথি টানলে জিহ্বা কামড়াবেন পাঠকরা!
মমতাজের গাওয়া ‘নান্টু ঘটক’, বিপ্লবের ‘চান্দের বাতির কসম দিয়া’, হাসানের কণ্ঠে ‘শীত নয় গ্রীষ্ম নয় এসেছে বসন্ত’, ‘লাল বন্ধু নীল বন্ধু’-সহ এমন অনেক হিট ও প্রশংসিত গানের স্রষ্টা আরমান খান। পাশাপাশি নাটকের আবহসংগীতকার হিসেবে শূন্য দশকের সবচেয়ে ব্যস্ত পরিচালক ছিলেন তিনিই।
২০১১ সালের দিকে গান থেকে পুরোপুরি আড়ালে চলে যান। দুই বছরের মধ্যে ঠিকানা খুঁজে নেন সিলেটের গ্র্যান্ড সুলতানে। টানা ১০ বছরের সফল সংগীত ক্যারিয়ার থেকে দূরে সরে যাওয়ার কারণ হিসেবে এই শিল্পী আগেই বলেছেন কিছু অভিমান আর ব্যর্থতার কথা।
তার ভাষায়, ‘কণ্ঠশিল্পীরা মঞ্চে উঠলেই অনেক টাকা পেতেন। অথচ সেই গানটি তৈরির পেছনে যে গীতিকার, যন্ত্রশিল্পীরা উদয়-অস্ত কাজ করতেন, তারা ছিলেন অবহেলিত। তাদের সম্মানী ছিল খুবই কম। একটা গান লিখে তখন গীতিকার পেতেন আড়াই থেকে তিন হাজার টাকা। যন্ত্রশিল্পীদের অবস্থা ছিল আরও খারাপ। এগুলো আমাকে পোড়াতো। অস্বস্তি লাগতো। রেকর্ডিং থেকে অ্যালবাম কাভার পর্যন্ত এমন অনিয়ম অনেক ছিল। হঠাৎ দেখলাম সিডির যুগ। শুরু হলো পাইরেসি নামের মহামারি। সহ্য করতে পারিনি, ছেড়েই দিলাম। অনেকটা পালানোর মতো। গান থেকে নয়, অনিয়মের ইন্ডাস্ট্রি থেকে নিজেকে তুলে নিলাম।’
আলম খান ও আজম খানের যোগ্য এই উত্তরসূরির ইচ্ছে, ‘বন্ধু’র মতো মাঝে মধ্যে এভাবে এক-দুটি গান প্রকাশ করার। আর মানবতার জন্য আমৃত্যু কাজ করে যাওয়ার।
Source: www.banglatribune.com