সুরস্রষ্টা গিরীন চক্রবর্তীর ৫৬তম প্রয়াণ দিবসে বিনম্র শ্রদ্ধা

নিজস্ব প্রতিবেদক, এস এম শাহনূর – আখাউড়া ডট কম

অসংখ্য কালজয়ী গানের সুরস্রষ্টা গিরীন চক্রবর্তী। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অহংকার তাকে কেউ মনে রাখেনি। আজ ২২ শে ডিসেম্বর, কথা ও ইন্দ্রজালিক সুরস্রষ্টার মহাপ্রয়াণ দিবস। তাঁর জীবনের অজানা তথ্যচিত্র দক্ষ কলমের খোঁচায় ফুটিয়ে তুলেছেন এস এম শাহনূর।

“উনার সম্পর্কে ব্রাহ্মণবাড়িয়াবাসীকে একটু স্মরণ করিয়ে দেন।” উপরোক্ত লাইনটি লিখে আমাকে একটি বার্তা পাঠালেন গত শতকের নব্বইয়ের দশক থেকে ইতালি প্রবাসী জনাব এম এ সালেহ। ইতালির রাজধানী রোমস্থ নবীনগর উপজেলা কল্যাণ পরিষদের সম্মানিত উপদেষ্টা এম এ সালেহের বাড়ি কাইতলা (উঃ) ইউপির নারুই গ্রামে। আজ বিখ্যাত সংগীত শিল্পী, সংগীত লেখক ও সুর স্রষ্টা গিরীন চক্রবর্তীর মহা প্রয়াণ দিবস। আমি যেন উনার সম্পর্কে কিছু লেখি সালেহ সাহেবের এক বিনয়ী আবদার। একজন লেখকের কাছে একজন পাঠকের এমন আবদারে লেখক অবশ্যই অনুপ্রাণিত হন। তখন লেখার প্রতি আগ্রহ ও দায়িত্ববোধ জাগ্রত হয়। আমি প্রচুর লেখালেখি করি। লেখি গান, লেখি কবিতা। লেখি স্বপ্নের কথা। বাস্তবতার কথা, চেতনার কথা। আরো লেখি আমার জন্ম জেলা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মাটি ও মানুষের অলিখিত কথা। দুঃখের বিষয় ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার প্রখ্যাত ও গুণীজনদের তালিকায় নেই এই বিখ্যাত ব্যক্তিটির নাম। অথচ তার গানের কথা এখনো মানুষের মনে দোলা দেয়, গানের সুর মনে আন্দোলিত করে। ব্রাহ্মণবাড়িয়াবাসী নয়, পুরো বাঙালিই যেন ভুলতে বসেছে প্রখ্যাত লোকসংগীত শিল্পী ও সুর স্রষ্টা গিরীন চক্রবর্তীর নাম।

বিখ্যাত লোকসংগীত শিল্পী ও ঐন্দ্রজালিক সুরস্রষ্টা গিরীন চক্রবর্তীকে অনেকে জানলেও তার পূর্বপুরুষের বসতভিটা ও জন্মস্থান ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কালিকচ্ছ গ্রামে তা হয়তো অনেকেরই অজানা।

গিরীন চক্রবর্তীর একমাত্র মেয়ে চন্দা চট্টোপাধ্যায় চক্রবর্তী। জন্ম কলকাতা টালিগঞ্জের বাড়ীতে। পরে মার চাকরির জন্য বর্ধমান। College of Art & Design এ কাজ করেন। শ্বশুরবাড়ির আদি নিবাস খুলনা। বর্তমানে বর্ধমান। সাঙ্গীতিক পরিবার। মা– সাধনা চক্রবর্তী। ওনার বাবার জন্মগ্রাম কোথায় এতদ বিষয়ে মেসেঞ্জারে কথা হয় চন্দা চক্রবর্তীর সঙ্গে। আমি বাংলাদেশের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার লেখক ওনার বাবার জীবন ও কর্মের উপর আর্টিকেল লিখতে তথ্য চাইছি, বিষয়টি বুঝতে পেরে তিনি আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। অনেকক্ষণ ধরে অত্যন্ত সৌহার্দপূর্ণ আবেশে দুজনের মধ্যে অনেক কথা হয়। আলাপচারিতায় আমাকে নিশ্চিত করেছেন যে, তাঁর পিতার গ্রামের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কালিকচ্ছ গ্রামেই ছিল। গিরীন চক্রবর্তীর পিতা–গৌরাঙ্গ চক্রবর্তী, মাতা–ব্রজসুন্দরী চক্রবর্তী। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কালিকচ্ছ গ্রামে আদি বাড়ি। পরবর্তী সময়ে ঢাকা শহরে লক্ষ্মীবাজারে নিজ বাড়িতে বসবাস করেন। ৪৭ এর আগেই সপরিবারে কলকাতা চলে যান। তবে মাঝে মধ্যে ঢাকা-কলকাতা আসা যাওয়া করতেন।

সুরস্রষ্টা গিরীন চক্রবর্তীর মেয়ে চন্দা চট্টোপাধ্যায় চক্রবর্তীঃ

তিনি বলেন, ”আমার পিতা যখন পরলোকে যান তখন আমার বয়স চার বছরের কিছুটা কম। আমার মা ২০১০ সালের অক্টোবরে পরলোকে যান। আমার মায়ের কাছ থেকে, সকল আত্মীয় স্বজন ও বাবার বন্ধু বান্ধবদের কাছ থেকেও শুনেছি আমাদের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাড়ি সরাইলের কালিকচ্ছ গ্রামে।”

প্রবাদপ্রতিম গানের গুরু, কিংবদন্তী লোকসংগীত ও নজরুলগীতির গায়ক, গীতিকার, সুরকার, সংগীত গবেষক গিরীন চক্রবর্তী ১৯১৮ সালের ৫ মে (২২ বৈশাখ, ১৩২৫ বঙ্গাব্দ) অবিভক্ত বাংলার ব্রাহ্মণবাড়িয়া র কালিকচ্ছ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।

ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁওস্তাদ আফতাবউদ্দিন খান এর সুযোগ্য শিষ্য অজস্র গানের কারিগর গিরীন চক্রবর্তী। তাঁর সৃষ্টির ভাণ্ডার ছিল মণিমাণিক্যে পরিপূর্ণ। তিনি কখনও স্বনামে, কখনও বা ‘সুজন মাঝি’, ‘রতন মাঝি’, ‘দ্বিজ মহেন্দ্র’ কিংবা ‘সোনা মিঞা’ ছদ্মনামে অসংখ্য লোকগান, শ্যামাসংগীত, দেশাত্মবোধক গান, আধুনিক গান থেকে ছায়াছবির গানও–রচনা করেছেন।

বড় পরিতাপের বিষয় তাঁর রচিত ও সুরারোপিত গানের কোনও সংরক্ষণ কিংবা কোনও সম্পূর্ণ সংকলনও এপার বাংলায় প্রকাশিত হয়নি।

সুরস্রষ্টা গিরীন চক্রবর্তী (আজি আকাশ মধুর বাতাস মধুর, ১৯৩৬)

তিনি কাজী নজরুল ইসলাম এর অত্যন্ত স্নেহধন্য ও কাছের মানুষ ছিলেন। জনপ্রিয় প্রায় ৩০ টি নজরুলগীতিতে তিনি সুরারোপ করেছেন। যেমন:
(১) আজি আকাশ মধুর বাতাস মধুর
(২) কাবার জিয়ারাতে তুমি
(৩) কূল ছেড়ে চলিলাম ভেসে
(৪) বন বিহঙ্গ যা উড়ে
(৫) মোরা আর জনমেতে হংসমিথুন
(৬) মোরা বিহান বেলা উঠে রে ভাই,
(৭) সে চলে গেছে বলে কি গো
(৮) ও শাপলা ফুল নেবো না (‘অভিনয় নয়’, ১৯৪৫, চলচ্চিত্রের গান)
(৯) কোন বিদেশের নাইয়া তুমি
(১০) সোনার বরণ কন্যা গো
(১১) আজি মধুর গগন মধুর পবন ইত্যাদি।

কী এক বিস্ময়কর সংগীত প্রতিভা ছিল তাঁর ভাবতেই ভাল লাগে।

  • ১৯৪৯ সালে নজরুলের বিখ্যাত ‘কারার ওই লৌহকপাট’ গানটি গেয়ে প্রথম রেকর্ড করেছিলেন।
  • নজরুল ইসলামের ‘বিদ্রোহী’ ও ‘নারী’ কবিতা দুটিকে সংক্ষিপ্তাকারে সুরারোপ করে গীতিরূপান্তর করেছিলেন। স্বকণ্ঠে রেকর্ডও করেছিলেন।
  • নজরুলের ‘এই শিকল পরা ছল’ গানটির সুরও গিরীন চক্রবর্তীর! এই গানটিতে ‘কাংড়া’ তালে খাম্বাজ রাগে অসামান্য সুরারোপ করে তিনি স্বয়ং নজরুলকেও চমকিত করে দিয়েছিলেন।
  • ১৯৪৫ সালে ‘সুজন মাঝি’ ছদ্মনামে প্রখ্যাত শিশু সাহিত্যিক ও ছড়াকার অখিল নিয়োগী (স্বপন বুড়ো)-র কথায় সুর দিয়ে ‘আকাশের আরশিতে ভাই’ শীর্ষক একটি গান রেকর্ড করেন।
  • কবি জসীমউদ্দীন-এর রচিত সুখ্যাত ‘ও আমার দরদী’ গানটি-সহ আরো অনেক পল্লীগীতির স্বরলিপিকারও তিনিই।
  • আব্বাসউদ্দিন-এর ‘আল্লা ম্যাঘ দে’ এবং ‘নাও ছাড়িয়া দে’ — এই কালজয়ী গানদুটিরও স্রষ্টা গিরীন চক্রবর্তী। জালালউদ্দিন নামে এক গ্রামীণ লোকশিল্পীর রচিত লোকগানের প্রথম চারটি পঙক্তি সংগ্রহ করে ‘আল্লা ম্যাঘ দে’র গানের বাকি অংশটা নিজেই রচনা করেছিলেন।
  • দেশভাগের দুঃসহ বেদনা ও রক্তঝরা যাতনার স্বাক্ষর গিরীন চক্রবর্তীর অনবদ্য সৃজন ‘কিশোরগঞ্জে মাসির বাড়ি’, ‘শিয়ালদহ গোয়ালন্দ আজও আছে ভাই’, ‘বাড়ি ছিল পদ্মা নদীর পাড়ে’ – এইসব গানগুলো শুনলে আজও মন হুহু করে ওঠে। ‘আকাশবাণী কলকাতা’য় লোকপ্রিয় ‘পল্লীগীতির আসর’ তিনিই শুরু করেছিলেন।
  • তিনি সেকালের কিছু চলচ্চিত্রেরও গানের স্রষ্টা। যেমন, ঝর্ণা দে’র কণ্ঠে বহুশ্রুত অত্যন্ত জনপ্রিয় এই গানটি ‘দীন দুনিয়ার মালিক তোমার দীনকে দয়া হয় না’ – মোহিনী চৌধুরীর কথায় গিরীন চক্রবর্তীর সুর।
  • এছাড়া ‘রক্তের টানে’, ‘বন্দী’ ইত্যাদি ছবিতে তিনি সংগীত পরিচালনা করেন। চলচ্চিত্রে সংগীত নির্দেশনা ছাড়া অভিনয়ও করেছিলেন তিনি। ‘বৈকুণ্ঠের উইল’, ‘কৃষ্ণকান্তের উইল’, ‘স্বামী’, ‘ঠিকাদার’ ইত্যাদি ছায়াছবিতে অভিনয় করেন।
  • ১৯৪১ সালে কবি শেখর কালিদাস রায়ের বিখ্যাত ‘নন্দপুর চন্দ্র বিনা বৃন্দাবন অন্ধকার’ কবিতাটিতে সুরারোপ করে ‘এইচএমভি’ থেকে রেকর্ড করেন। তাঁর আর একটি বিস্মৃতপ্রায় অভিনব সৃষ্টিকর্ম হল গান্ধিজির জীবনী আলেখ্য-গীতি ‘গান্ধিজির অমর কাহিনি’। গিরীন চক্রবর্তীর কথায়, সুরে এই গানটি গেয়েছিলেন সত্য চৌধুরী।

প্রাচীনকাল থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জনপদে লোকসাহিত্য ও লোকসংস্কৃতিরও একটি নিজস্ব সমৃদ্ধ পরিবেশ গড়ে ওঠে। লোককথা, লোক সংগীত, ছড়া ও প্রবাদ-প্রবচনে এখনও এর কিছু কিছু নিদর্শন বর্তমান। লোকসংগীতে আদিকাল থেকেই একটি বিশেষ ধারা এখানে প্রচলিত রয়েছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সন্তান গিরীন চক্রবর্তীর সংগীতের প্রতি আকর্ষণ গড়ে ওঠে শৈশব থেকেই। ছেলেবেলাতেই সুযোগ হয় বাবা আলাউদ্দিন খানের সান্নিধ্য লাভের এবং তাঁর কাছেই সংগীতশিক্ষা শুরু হয়। পরবর্তীকালের সংগীতশিক্ষায় ওস্তাদ আফতাবউদ্দিন খান সাহেবের কাছে ‘নাড়া’ বাঁধেন।

তিতাস ও পদ্মাপারের দেশ থেকে গঙ্গার তটে গিয়ে ওপার বাংলার কলকাতা মহানগরীতে শুরু হয় তাঁর সংগীত জীবনের জয়যাত্রা। তাঁর সুখ্যাতি ছড়িয়ে পড়তে থাকে বাংলা জুড়ে। সেকালের ‘এইচএমভি’ গ্রামোফোন কোম্পানির শিল্পীদের প্রশিক্ষক হিসাবে তিনি দীর্ঘদিন কাজ করেছেন।

তাঁর রচিত ও সুরারোপিত গানগুলি এত হৃদয়স্পর্শী আবেগ ও প্রাণময়তায় পরিপূর্ণ ছিল যে, আজও আমাদের মন জয় করে। একসময় কালের প্রবাহে লোকসংগীতের অস্তিত্বকে টিকিয়ে রাখা ছিল বেশ দুরূহ। লোকসংগীতের মধ্যে ইসলামি, ভারতীয় ধ্রুপদী সংগীত ও আধুনিক সুরকে অসামান্য দক্ষতায় অনায়াস স্বাচ্ছন্দ্যে মিশিয়ে দিয়ে যাঁরা লোকগানের ধারার জনপ্রিয়তাকে বৃহত্তর জনমানসে পুনরুজ্জীবিত করেন, তাঁদেরই মধ্যে অন্যতম অগ্রদূত ছিলেন গিরীন চক্রবর্তী। তাঁর গায়ন ও সৃজন-শৈলী, দুই-ই ছিল অভিনব স্বাতন্ত্র্যে সমুজ্জ্বল।

দেশভাগের দুঃসহ বেদনা ও রক্তঝরা যাতনার স্বাক্ষর গিরীন চক্রবর্তীর অনবদ্য সৃজন ‘কিশোরগঞ্জে মাসির বাড়ি’, ‘শিয়ালদহ গোয়ালন্দ আজও আছে ভাই’, ‘বাড়ি ছিল পদ্মা নদীর পাড়ে’ – এইসব গানগুলো শুনলে আজও মন হুহু করে ওঠে। ‘আকাশবাণী কলকাতা’য় লোকপ্রিয় ‘পল্লীগীতির আসর’ তিনিই শুরু করেছিলেন।

যে গভীর যন্ত্রণায় তিনি লিখেছিলেন, আজ শতবর্ষ পেরিয়ে বাংলার মানবজমিনের ‘আবাদভূমি’ তেও ঠাঁই হারিয়ে তাঁর বেদনাদীর্ণ অভিমানী কণ্ঠে বাংলার আকাশে-বাতাসে কান পাতলে যেন শুনা যায় সেই মর্মস্পর্শী গান… …

‘মাসির বাড়ি কিশোরগঞ্জে,
মামার বাড়ি চাতলপাড়।
বাপের বাড়ি বাউনবাইড়া,
নিজের বাড়ি নাই আমার।।
আমি রে যে জলের ঢেউ
আমার বলতে নাইরে কেউ,
চান্দের হাট ভাইঙ্গা গেছে
একূল ওকূল অন্ধকার।।’

  • যে সকল স্বনামধন্য শিল্পী গিরীন চক্রবর্তীর গান গেয়েছেন:
    মর্মী শিল্পী আব্বাসউদ্দিন থেকে পরবর্তীতে, অমর পাল কে তার গান গায়নি? বিষ্ণুপদ দাস, চিত্ত রায়, ভবানীচরণ দাস, চিন্ময় লাহিড়ী, আঙুরবালা দেবী, কমলা ঝরিয়া, ইন্দুমতী দেবী, শৈল দেবী, হরিমতী দেবী, রাধারাণী দেবী, বিজনবালা ঘোষ দস্তিদার, যূথিকা রায়, শচীন দেববর্মন, তালাত মাহমুদ, অসিতবরণ, সত্য চৌধুরী, ধনঞ্জয় ভট্টাচার্য, বাঁশরী লাহিড়ী, সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়, হেমন্ত মুখোপাধ্যায় প্রমুখ বাংলা গানের উজ্জ্বল নক্ষত্রগণ।
  • গিরীন চক্রবর্তীর সেরা গানের সংকলন।
    ১) কিশোরগঞ্জে মাসির বাড়ি – কথা, সুর ও কণ্ঠশিল্পী: গিরীন চক্রবর্তী। (১৯৪২)
    ২) শিয়ালদহ গোয়ালন্দ আজও আছে ভাই – কথা, সুর ও কণ্ঠ: গিরীন চক্রবর্তী। (১৯৫২)
    ৩) বাড়ি ছিল পদ্মা নদীর পাড়ে – কণ্ঠশিল্পী: চিত্ত রায়, কথা ও সুর: গিরীন চক্রবর্তী। (প্রকাশকাল অজানা)
    ৪) ভাই রে, মানুষ নাই রে দেশে – কথা ও সুর: চারণকবি মুকুন্দ দাস।
    ৫) তোর হাতের ওই খড়গ এবার – কথা, সুর ও কণ্ঠশিল্পী: গিরীন চক্রবর্তী। (১৯৪৯, শ্যামাসংগীত)
    ৬) এই শিকল পরা ছল – কথা: নজরুল ইসলাম, সুর ও কণ্ঠশিল্পী: গিরীন চক্রবর্তী। (১৯৪৯)
    ৭) কারার ওই লৌহকপাট – কথা ও সুর: নজরুল ইসলাম। কণ্ঠশিল্পী: গিরীন চক্রবর্তী। (১৯৪৯)
    ৮) বলো বীর বলো উন্নত মম শির – কথা: নজরুল ইসলাম, সুর ও কণ্ঠশিল্পী: গিরীন চক্রবর্তী। (১৯৫২)
  • খ্যাতনামা শিল্পীদের কণ্ঠে গিরীন চক্রবর্তীর সৃষ্ট জনপ্রিয় ১১টি গানের সংকলন।
    ১) আমায় তোমরা চেনো কি গো – কণ্ঠশিল্পী: চিত্ত রায়, কথা ও সুর: গিরীন চক্রবর্তী।
    ২) আল্লা ম্যাঘ দে – কণ্ঠশিল্পী: আব্বাসউদ্দিন। কথা ও সুর: গিরীন চক্রবর্তী। (জালালউদ্দিন নামে এক গ্রামীণ লোকশিল্পীর রচিত লোকগানের প্রথম চারটি পঙক্তি সংগ্রহ করে বাকি গানটা গিরীন চক্রবর্তীর রচনা)
    ৩) নাও ছাড়িয়া দে – কণ্ঠশিল্পী: আব্বাসউদ্দিন। কথা ও সুর: গিরীন চক্রবর্তী।
    ৪) নিরাশার নদী তীরে বেলা বয়ে যায় – কণ্ঠশিল্পী: সত্য চৌধুরী। কথা ও সুর: গিরীন চক্রবর্তী।
    ৫) ধিক ধিক আমার এ জীবনে – কণ্ঠশিল্পী: শচীন দেববর্মন। কথা ও সুর: গিরীন চক্রবর্তী।
    ৬) ফুল ছিল ফুল বনে – কণ্ঠশিল্পী: অসিতবরণ। কথা গিরীন চক্রবর্তী ও সুর: দুর্গা সেন (১৯৪৬)।
    ৭) দুটি পাখী দুটি তীরে – কণ্ঠশিল্পী: তালাত মাহমুদ। গীতিকার: গিরীন চক্রবর্তী, সুরকার: কমল দাশগুপ্ত।
    ৮) মনেরে মানাই যদি – কণ্ঠশিল্পী: শৈল দেবী। গীতিকার: গিরীন চক্রবর্তী, সুরকার: চিত্ত রায় (১৯৪২)।
    ৯) দীন দুনিয়ার মালিক তুমি – কণ্ঠশিল্পী: ঝর্ণা দে। গীতিকার: মোহিনী চৌধুরী। সুরকার: গিরীন চক্রবর্তী। ছায়াছবি: ‘অভিনয় নয়’ (১৯৪৫)।
    ১০) তোমার আকাশে ঝিলমিল করে চাঁদের আলো– কণ্ঠশিল্পী: সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়। কথা ও সুর: গিরীন চক্রবর্তী। (সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের জীবনে প্রথম রেকর্ড করা গান, ১৯৪৫)
    ১১) মোছে কি গো পরিচয় – কণ্ঠশিল্পী: ইরফাত আরা দেওয়ান। কথা ও সুর: গিরীন চক্রবর্তী। ( (১৯৪২ সালে এই গানটির আদি রেকর্ডিং-এ কণ্ঠশিল্পী ছিলেন শৈল দেবী)
  • গিরীন চক্রবর্তীর কর্মজীবন:
    আকাশবাণী ও গান রেকডিং এর জগত ছাড়াও, ‘বেঙ্গল মিউজিক কলেজ’, ‘বাসন্তী বিদ্যাবীথি’ ও ‘কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়’-তেও তিনি অধ্যাপনা করেছেন। সেই সূত্রে তিনি ছিলেন প্রশ্নকর্তা ও সিলেবাস কমিটির সদস্য। ১৯৫২ সালে মাত্র ছত্রিশ বছর বয়স থেকেই তিনি দিল্লিতে ‘জাতীয় সংগীত সম্মেলনে’ নিয়মিত আমন্ত্রিত হতেন। ‘সংগীত নাটক আকাদেমি’র প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই তিনি আজীবন আকাদেমির সদস্য ছিলেন। তাঁর সংগীতমুখর জীবনের কাজের পরিধি ছিল বহুবিস্তৃত। তিনি যুক্ত ছিলেন ঢাকা বেতার কেন্দ্রের সঙ্গে। পরে যুক্ত হন কলকাতার আকাশবাণীর সঙ্গে। ১৯৬৫ সালের ২২ ডিসেম্বর, কলকাতায় মাত্র ঊনপঞ্চাশ বছর বয়সে তাঁর জীবনাবসান হয়। আজ তাঁর মহান প্রয়াণ দিবসে তাঁর জন্মস্থান ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলাবাসী বিনম্র শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করছি।

তথ্যঋণ:
[১] চন্দা চট্টোপাধ্যায় চক্রবর্তী। (গিরীন চক্রবর্তীর মেয়ে) পশ্চিমবঙ্গ, বর্ধমান।
[২] শতবর্ষে ‘আল্লা ম্যাঘ দে’-র স্রষ্টা। লেখক: অশোক দাস। ‘গণশক্তি’ পত্রিকা, ৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৮।
[৩] গিরীন চক্রবর্তীর স্মৃতিতে ‘খবর ৭ দিন’ চ্যানেলের একটি তথ্যচিত্র প্রতিবেদন এবং ইন্টারনেট সূত্রে প্রাপ্ত বিভিন্ন তথ্যাদি।

লেখক: এস. এম. শাহনূর
কবি ও আঞ্চলিক ইতিহাস গবেষক

Related Posts

About The Author

Add Comment