প্রেমের টানে ব্রাহ্মণবাড়িয়া এসে বিয়ে করলেন ইউক্রেনের যুবক

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ইউক্রেনের নাগরিক অ্যান্দ্রো প্রকিপের সঙ্গে পরিচয় হয় ব্রাহ্মণবাড়িয়া বিজয়নগর উপজেলার বৃষ্টি আক্তারের। এরপর তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। টানা দুই বছর প্রেম করেন। এতে বাধা হয়নি ৬ হাজার কিলোমিটারের পথ বা ধর্ম। প্রেমের শেষ পরিণয় বিয়েতে আবদ্ধ হয়েছেন তারা।

দুই তরুণ–তরুণীর ফেসবুকে পরিচয়। তাঁদের মধ্যে ভৌগোলিক দূরত্ব ছিল অনেক; ছিল ধর্ম ও সাংস্কৃতিক ব্যবধান। তবে সেসব তাঁদের প্রেমের সম্পর্কে বাধা হতে পারেনি। এখন তাঁরা দম্পতি।

তরুণের নাম এন্ড্রি প্রকিপ (২৭)। তিনি ইউক্রেনের নাগরিক। কর্মসূত্রে থাকেন পোল্যান্ড ও বেলজিয়ামে। তিনি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছেন; এখন তাঁর নাম মোহাম্মদ। তিনি বাংলাদেশের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মেয়ে বৃষ্টি আক্তারকে (২৬) বিয়ে করেছেন। ১৯ ডিসেম্বর এন্ড্রি প্রকিপ বেলজিয়াম থেকে বাংলাদেশে আসেন। পরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আদালতে এসে হলফনামার মাধ্যমে ধর্ম পরিবর্তন করেন।

বৃষ্টি ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দুই বছর আগে ফেসবুকে ইউক্রেনের নাগরিক এন্ড্রির সঙ্গে বৃষ্টির পরিচয় হয়। এন্ড্রি পোল্যান্ডে ভবন নির্মাণের কাজ করেন। মাঝেমধ্যে কাজ করতে যান বেলজিয়ামে। ফেসবুকে তাঁদের নিয়মিত মনের ভাব আদান–প্রদান হতো। একপর্যায়ে বৃষ্টিকে প্রেম নিবেদন করেন এন্ড্রি। তবে বৃষ্টি প্রথমে তাঁর প্রস্তাবে রাজি হননি। পরে এন্ড্রি বিয়ের প্রস্তাব দেন এবং ইসলাম ধর্ম গ্রহণের কথা জানান।

বৃষ্টি বলেন, ‘এন্ড্রিকে আমি বিশ্বাস করি। সে নিজেই ধর্মান্তরিত হওয়ার কথা বলেছিল। ১৯ ডিসেম্বর বাংলাদেশে এসে আমাকে বিয়ে করার কথা জানিয়েছিল। বিয়ের জন্য আংটি কিনতে আমার কাছে টাকা পাঠায়। ওর ওই কথায় আমার ন্যূনতম সংশয় হয়নি। সে আসবে আমি নিশ্চিত ছিলাম। আমাদের বিয়েতে পরিবারের সম্মতি ছিল।’

বৃষ্টি আরও বলেন, ‘আমাকে পোল্যান্ডে নেওয়ার জন্য এন্ড্রি বিয়ের কাবিননামাসহ সব কাগজপত্র জমা দিয়েছে। ও বাংলাদেশে এসে এবং আমাকে বিয়ে করে অনেক আনন্দিত। আমি এবং আমার পরিবার অনেক খুশি। আমি আগে থেকে ইংরেজি পারতাম। ইংরেজিতে ওর সঙ্গে কথা বলেছি। সে কিছু কিছু বাংলা বলতে পারে।’

এন্ড্রি প্রকিপ ওরফে মোহাম্মদ বলেন, ‘ফেসবুকে দুই বছর আগে বৃষ্টির সঙ্গে পরিচয়। বৃষ্টি অনেক ভালো মেয়ে। আমার দেশের মেয়েদের তুলনায় সে ভিন্ন ও ব্যতিক্রমধর্মী। এক মাস পর চলে যাব। সব প্রক্রিয়া শেষের তাঁকে সঙ্গে নিয়ে যাব।’

বৃষ্টির দাদি জোহেরা বেগম বলেন, ‘আমরা অনেক খুশি। নাতিন জামাই অনেক সুন্দর। হাজার মাইলের দূরত্ব পেরিয়ে দুই মনের মিলন হয়েছে।’

নতুন জামাই এন্ড্রিকে নিয়ে এলাকায় বেশ কৌতূহলের সৃষ্টি হয়েছে। এলাকার লোকজন তাঁর সঙ্গে দেখা করতে আসছেন। বিষ্ণুপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য ফরহাদ আলী বলেন, ‘ইউক্রেনের নাগরিক এক তরুণ ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে আমার গ্রামের এক মেয়েকে বিয়ে করেছেন। এটি এলাকায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে।’

Related Posts

About The Author