ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। ভারী বৃষ্টি ও ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে আখাউড়ার হাওড়া নদীর বাঁধের তিনটি অংশসহ সড়কের আট স্থান ভেঙে যাওয়ায় এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এতে দুই উপজেলার সাত ইউনিয়নের ৩৬ গ্রাম প্লাবিত হয়ে পানিবন্দী আছে পাঁচ হাজার মানুষ।
উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বুধবার সকাল থেকে আখাউড়া আন্তর্জাতিক ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট ও স্থলবন্দরের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া খাল দিয়ে সীমান্তের ওপার থেকে পাহাড়ি ঢল আসতে শুরু করে। একপর্যায়ে স্থলবন্দর, বাউতলা, বীরচন্দ্রপুর, কালিকাপুর, বঙ্গেরচর, ইটনা, লক্ষ্মীপুর, গাজিরবাজার, সাহেবনগরসহ অনেক এলাকা প্লাবিত হয়। পানির চাপে আখাউড়া স্থলবন্দর ও ইমিগ্রেশনে যাওয়ার একমাত্র রাস্তা উপজেলার গাজীরবাজার এলাকার অস্থায়ী বেইলি সেতু ভেঙে যায়।
মঙ্গলবার ভারী বর্ষণে খলাপাড়া এলাকায় হাওড়া নদীর বাঁধের কিছু অংশ ভেঙে পানি ঢুকতে শুরু করে। বৃহস্পতিবার ভোর সাড়ে পাঁচটা থেকে ছয়টার দিকে উপজেলার মোগড়া ইউনিয়নের ইটনা এবং দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে একই ইউনিয়নের খলাপাড়া এলাকার কবরস্থান ও আশ্রয়ণ প্রকল্পের নদীর বাঁধের তিনটি অংশ ভেঙে বেশ কিছু এলাকা প্লাবিত হয়। এ ছাড়া পানির চাপে উপজেলার দুটি সড়কের তিনটি স্থান ভেঙে গেছে। এতে উপজেলার বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়। খবর পেয়ে বৃহস্পতিবার বেলা দুইটার দিকে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান, সেনাবাহিনীর লে. কর্নেল মোহাম্মদ হোসেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মনজুর হোসেন ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) গাজালা পারভীন হাওড়া নদীর বাঁধের ক্ষতিগ্রস্ত কয়েকটি এলাকা পরিদর্শন করেন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলার ইটনা ও খলাপাড়া এলাকায় হাওড়া নদীর বাঁধের দুটি অংশে প্রায় ৪০ থেকে ৫০ ফুট করে ভেঙে গেছে। এ ছাড়া উপজেলা পরিষদের সামনের সড়কসহ বেশ কয়েকটি সড়ক পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে বেড়েছে মানুষের দুর্ভোগ।
নয়াদিল এলাকার জুয়েল মিয়া বলেন, ‘ইটনায় আমার শ্বশুর ও শাশুড়ি থাকেন। তাঁরা অসুস্থ ও পানিবন্দী অবস্থায় আছেন। তাঁদের কোনো সহায়তা করতে পারছি না।’
এলাকাবাসী জানান, আখাউড়ার সীমান্তবর্তী এলাকা জয়নগর দিয়ে ভারতের পাহাড়ি ঢলের পানি তীব্র বেগে আসছে। মূলত উপজেলার হাওড়া নদীর ও আগরতলা সংযুক্ত আখাউড়া ইমিগ্রেশনের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া জাজিরা ও কালন্দি খাল দিয়ে ভারত থেকে পানি ঢুকছে। আগরতলায় বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে পানির আসা বন্ধ হবে না। বর্তমানে পানির বেগ অনেক বেশি। উপজেলার ছয়ঘরিয়া ও শান্তিপুরের বাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের ব্রাহ্মণবাড়িয়া কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মনজুর হোসেন বলেন, আখাউড়া উপজেলার গঙ্গাসাগরে পানির বিপৎসীমা ৫ দশমিক ৫০ মিটার। কিন্তু বর্তমানে বিপৎসীমা অতিক্রম করে হয়েছে ৫ দশমিক ৭৯ মিটার দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
আখাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা গাজালা পারভিন বলেন, উপজেলার বাঁধসহ সড়কের আটটি স্থান ভেঙে পানি ঢুকছে। ৩৬টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। উপজেলার ১১টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে আশ্রয়কেন্দ্র করা হয়েছে। পানিবন্দী পরিবারের সদস্যদের নিকটবর্তী কেন্দ্রে নেওয়ার জন্য বলা হয়েছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক সুশান্ত সাহা জানান, পাহাড়ি ঢলে ১৯৫ হেক্টর শাকসবজির জমি, ১২২ হেক্টর আমনের বীজতলা, ৩৪৪০ হেক্টর রোপা আমন ধানের জমি পানির নিচে তলিয়ে আছে। দ্রুত পানি সরে গেলে ক্ষয়ক্ষতির সম্ভাবনা কম। তবে পানি দীর্ঘস্থায়ী হলে ক্ষয়ক্ষতি বাড়তে পারে।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান বলেন, প্রবলভাবে পানি ঢুকছে। পানিতে আখাউড়া ও কসবা উপজেলার সাতটি ইউনিয়নে বন্যা দেখা দিয়েছে। প্রায় পাঁচ হাজার মানুষ পানিবন্দী। আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। ১৫ টন চাল ও পাঁচ লাখ টাকা বিতরণ করা হয়েছে। পর্যাপ্ত ত্রাণের ব্যবস্থা রয়েছে। সেনাবাহিনীর সদস্যরাও উদ্ধারকাজসহ নানাভাবে সহায়তা করেছেন।