নিজস্ব প্রতিবেদক, মোঃ সাইফুল আলম – আখাউড়া ডট কম
দেশের অনেক স্থানেই চলন্ত ট্রেনে পাথর নিক্ষেপ এর ঘটনা শুনা যায়। তবে সবচেয়ে বেশী ভুক্তভোগী আখাউড়া-সিলেট, আখাউড়া-ঢাকা, চট্টগ্রাম-সিলেট এবং ঢাকা-চট্টগ্রাম রোডে। পুলিশের কড়া নজরদারি, ধরিয়ে দিতে পারলে পুরস্কারের ঘোষণা দেওয়ার পরও থামছে না পূর্বাঞ্চল রেলপথে চলাচলকারী বিভিন্ন ট্রেনে পাথর নিক্ষেপের ঘটনা।
চলন্ত ট্রেনে পাথর ছোড়া অপরাধ। বেশীরভাগ সময় ট্রেনের জানালার কাঁচ ভেঙ্গে যাত্রীরা আহত হন। অনেকে মৃত্যুবরন করেন। এইতো গত সপ্তাহে মারাত্মকভাবে আহত হয়েছেন ট্রেন চালক। ট্রেনে দুর্বৃত্তদের ছোড়া পাথরে জখম হয়েছেন সহকারী ট্রেনচালক তৌহিদুল মুরসালিন। এতে জানালার কাচ ভেঙে ট্রেনের সহকারী চালক তৌহিদুল মুরসালিনের মাথার এক পাশ ফেটে যায়।
যানজট এড়িয়ে দ্রুত গন্তব্যে পৌঁছাতে ট্রেনে ভ্রমণই যাত্রীদের কাছে জনপ্রিয়। কিন্তু এই ভ্রমণ এখন ভীতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। পাথর নিক্ষেপে যাত্রীদের হতাহত হওয়ার ঘটনা ঘটছে প্রায়ই। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আখাউড়া হয়ে চট্টগ্রাম-সিলেট, ঢাকা-চট্টগ্রাম, চট্টগ্রাম-ময়মনসিংহ রেলপথে চলাচলকারী আন্তনগর ও মেইল ট্রেনে পাথর নিক্ষেপের বেশ কিছু আলোচিত ঘটনা ঘটেছে।
দুর্বৃত্তদের ট্রেনে পাথর ছোড়ার ঘটনা বর্তমানে ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। এতে ট্রেনের দায়িত্বরত গার্ড, চালকসহ ট্রেন যাত্রীরা আহত হচ্ছে। এতে কেউ চোখ হারিয়েছেন, এমনকি মৃত্যুবরণের ঘটনাও ঘটেছে। চলতি মাসের ৫ জানুয়ারি আহত সহকারী ট্রেনচালক তৌহিদুল মুরসালিন বলেন, ‘সকাল সাড়ে ৭টায় সিলেট থেকে ৯৫২ নম্বর তেলবাহী ট্রেন নিয়ে আখাউড়া আসছিলেন। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে মনতলা স্টেশনের আউটারে পৌঁছার পর হঠাৎ করে ইঞ্জিনে কয়েকটি ঢিল পড়ে। এ সময় একটি পাথর আমার মাথায় এসে পড়ে। এতে আমার কপালের এক পাশ ফেটে যায়। পরে মনতলা স্টেশনে একটি ফার্মেসিতে প্রাথমিক চিকিৎসা নেওয়া হয়। উন্নত চিকিৎসার জন্য রাত সাড়ে ৯টার দিকে আখাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যাওয়ার পর সেখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসক আঘাতের স্থানে দুটি সেলাই দেন। তিনি আরও বলেন, কুয়াশার কারণে কে বা কারা পাথর ছুড়েছে দেখতে পাইনি।’
২০২১ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর ঢাকা থেকে আখাউড়া অভিমুখী তিতাস কমিউটার ট্রেনে রাত পৌনে ১০টার দিকে আখাউড়া রেল সেকশনের পাঘাচং রেলওয়ে স্টেশন এলাকায় দুর্বৃত্তের ছোড়া পাথরের আঘাতে জসিম উদ্দিন নামে এক যুবক গুরুতর আহত হন। পেশায় তিনি একজন হকার।
২০১৯ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী আন্তনগর মহানগর গোধূলি এক্সপ্রেস ট্রেনে সন্ধ্যায় আখাউড়া রেলওয়ে জংশন স্টেশনে প্রবেশকালে দক্ষিণ আউটার সিগন্যাল এলাকায় লাদেন (২০), হৃদয় (১৯) এবং আতিক (২০) এলোপাতাড়িভাবে ওই ট্রেনে পাথর ছুড়ে মারে। ট্রেনটি আখাউড়া স্টেশনে যাত্রাবিরতি দিলে ট্রেনযাত্রীরা ঘটনাটি কর্তব্যরত স্টেশন ডিউটিরত রেলওয়ে পুলিশকে জানায়। পরে তারা ওই তিন যুবককে আটক করেন।
এই রকম একাধিক আটকের ঘটনা ঘটেছে পূর্বাঞ্চল রেলপথের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায়। রেলওয়ে আইনের ১২৭ ধারা অনুযায়ী, ট্রেনে পাথর ছোড়া হলে সর্বোচ্চ যাবজ্জীবন কারাদণ্ডসহ ১০ হাজার টাকা জরিমানার বিধান আছে। ৩০২ ধারা অনুযায়ী, পাথর নিক্ষেপে কারও মৃত্যু হলে মৃত্যুদণ্ডের বিধান রয়েছে। তবে এসব আইনে কারও শাস্তি হয়েছে, এমন নজির নেই।
স্থানীয়রা বলছে, যারা চলন্ত ট্রেনে পাথর ছুড়ছে, তারা সেটাকে অপরাধ বলে মনে করে না। শুধু আনন্দ পেতে অনেকে এই কাজ করছে। আবার অনেকে হয়তো ভাবে, পাথর ছোড়া হলে ট্রেন থামবে কিংবা কিছু জিনিসপত্র কুড়িয়ে পাওয়া যাবে। মূলত, এটা করে তারা অসুস্থ আনন্দ পাচ্ছে।
আরও পড়ুনঃ দেশে প্রথমবারের মতো এলো জনসনের টিকা
রেলওয়ে সূত্র জানায়, গত নয় মাসে রেলওয়ের বিভিন্ন রুটে ১১০টি চলন্ত ট্রেনে পাথর নিক্ষেপের ঘটনা ঘটছে। ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়ে পাথর নিক্ষেপের এসব ঘটনায় আহত হয়েছেন ২৯ জন যাত্রী। ট্রেনের জানালার গ্লাস ভেঙেছে ১০৩ টি। এদিকে রেলওয়ে কন্ট্রোল রুম (ঢাকা বিভাগ) সূত্র জানায়, আখাউড়া-সিলেট, আখাউড়া-ময়মনসিংহ ও আখাউড়া-ঢাকা রেলপথে ২০২১ সালে এক বছরে এ রেলপথের চলন্ত ট্রেনে ৩৯টা পাথর নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। এতে ট্রেন যাত্রী, গার্ড, চালক আহত হওয়া ছাড়াও ট্রেন সম্পদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়।
ট্রেনে দুর্বৃত্তদের ছোড়া পাথরে সহকারী চালক জখমট্রেনে দুর্বৃত্তদের ছোড়া পাথরে সহকারী চালক জখম হওয়ায় আখাউড়া রেলওয়ে থানার ওসি মাজহারুল করিম জানান, চলন্ত ট্রেনে পাথর ছোড়া মারাত্মক অপরাধ। এতে যেমন রাষ্ট্রীয় সম্পদের ক্ষতি হচ্ছে তেমনি বিপন্ন হচ্ছে মানুষের জীবন। জনগণকে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, এ রকম কোনো দুষ্কৃতকারীকে দেখা মাত্র যেন তাদের ধরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে সোপর্দ করা হয়। এ ছাড়া রেলওয়ে জংশন এলাকায় রেলওয়ে থানার আয়োজনে স্টেশনে চলন্ত ট্রেনে পাথর নিক্ষেপ, বিনা টিকিটে রেল ভ্রমণ, ট্রেনে অবৈধ মালামাল পরিবহন, চোরাচালান, জঙ্গিবাদ, নারী নির্যাতন, ইভটিজিং রোধে বিট পুলিশিং সভাও করছি আমরা।