২৮ জুলাই ২০২৪, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জে বিপণিবিতান নির্মাণের জন্য বাণিজ্যিক ইজারা নিয়ে রেলওয়ের পুকুর ভরাট করছেন আওয়ামী লীগের সাবেক এক নেতা। রাতের আঁধারে বালু ফেলে তিনি পুকুরের অন্তত ৩০ শতাংশ জায়গা ইতিমধ্যে ভরাট করেছেন। পরিবেশ সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী, জলাধার হিসেবে চিহ্নিত কোনো জায়গা ভরাট বা শ্রেণি পরিবর্তন করা যাবে না।
বিষয়টি জানতে পেরে ইতিমধ্যে তাঁকে কাজ বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে উপজেলা প্রশাসন। উপজেলা খাদ্যগুদামের পাশের ওই পুকুরপাড়ে স্থাপনা নির্মিত হলে গুদামের কাজ বাধাগ্রস্ত হবে বলে জানিয়েছে গুদাম কর্তৃপক্ষ।
অভিযুক্ত আওয়ামী লীগ নেতা মো. সালাহ উদ্দিন বলছেন, ‘যতটুকু ইজারা পেয়েছি, ততটুকু ভরাট করেছি। আমি কোনো অবৈধ কাজ করছি না।’
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, আশুগঞ্জ পুরোনো রেলস্টেশনের খাদ্যগুদাম এলাকায় পশ্চিম দিকের রাস্তাসংলগ্ন এলাকায় রেলওয়ের ৫ দশমিক ৮৫ একরের একটি পুকুর (জলাশয়) আছে। পুকুরের পূর্ব পাড়ে রাস্তা ও খাদ্যগুদাম। রেলওয়ের ওই পুকুরপাড়ের ১১ হাজার ৯০০ বর্গফুট জমি বাণিজ্যিক কাজের জন্য ইজারা নিয়েছেন আশুগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সদস্য ও উপজেলা সদর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মো. সালাহ উদ্দিন। যদিও রেলওয়ের ইজারার নথিপত্রে পুকুরপাড় ভরাট করার কোনো নির্দেশনা নেই। ২০২৩ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর ঢাকা রেলওয়ের বিভাগীয় ভূসম্পত্তি কর্মকর্তা স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে সালাহ উদ্দিনকে আশুগঞ্জে রেলওয়ের ১১ হাজার ৯০০ বর্গফুট রেলভূমি বাণিজ্যিক ভাড়া দেওয়া হয়।
চিঠি সূত্রে জানা যায়, রেল দপ্তর থেকে কৃষি, মৎস্য, নার্সারি, বিবিধ লাইসেন্স নিয়ে বাণিজ্যিক হিসেবে ওই ভূমি ব্যবহার করে আসছেন সালাহ উদ্দিন। এ জন্য আশুগঞ্জ পুরোনো রেলস্টেশন এলাকার খাদ্যগুদামের পশ্চিম পাশের রাস্তাসংলগ্ন পুকুরপাড়ের ১১ হাজার ৯০০ বর্গফুট জমি বাণিজ্যিক ভাড়া হিসেবে গণ্য করে ভাড়া বা খাজনা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। ২০২৪ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত মেয়াদে ওই জমির জন্য তিনি ৪০ টাকা হারে ৪ লাখ ৭৬ হাজার টাকাসহ মোট ৫ লাখ ৭১ হাজার ৩২৭ টাকা চালানের মাধ্যমে রেল বিভাগের অনুকূলে জমা দেন। তবে তিনি এখন পর্যন্ত জায়গাটি বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার করেননি।
শুক্রবার সরেজমিনে দেখা যায়, খাদ্যগুদাম এলাকার রাস্তার পশ্চিম দিকে রেলওয়ের পুকুর। পুকুরের অন্তত ২০ ফুট ভেতরে বাঁশ ও বেড়া দিয়ে সীমানা বানিয়ে বালু ফেলে ভরাট করা হয়েছে। এভাবে দৈর্ঘ্যে প্রায় ৬০০ ফুট ভরাট করা হয়েছে। ইজারাগ্রহীতা ও স্থানীয় লোকজন বলছেন, পুকুরের পাড় ভরাট করে সেখানে ‘মার্কেট’ বানানো হবে।
প্রাকৃতিক জলাধার সংরক্ষণ আইন, ২০০০ অনুযায়ী, কোনো পুকুর, জলাশয়, নদী, খাল ইত্যাদি ভরাট করা বেআইনি। আইনের ৫ ধারা অনুযায়ী, প্রাকৃতিক জলাধার হিসেবে চিহ্নিত কোনো জায়গার শ্রেণি পরিবর্তন বা অন্য কোনোভাবে ব্যবহার, ভাড়া, ইজারা বা হস্তান্তর বেআইনি।
সালাহ উদ্দিন পুকুরের পাড় ভরাটের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, ‘রেলওয়ের ২০ ফুট প্রশস্ত ও ৫৯৫ ফুট দৈর্ঘ্য জায়গা বাণিজ্যিক ইজারা পেয়েছি। যতটুকু ইজারা পেয়েছি, ততটুকু ভরাট করেছি। আমি কোনো অবৈধ কাজ করছি না। একটি পক্ষ আমার বিরুদ্ধে লেগেছে। উপজেলা প্রশাসন আমাকে কাজ বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে।’
পুকুরের অন্তত ২০ ফুট ভেতরে বাঁশ ও বেড়া দিয়ে সীমানা বানিয়ে বালু ফেলে ভরাট করা হয়েছে। এভাবে দৈর্ঘ্যে প্রায় ৬০০ ফুট ভরাট করা হয়েছে
জানতে চাইলে রেলওয়ের ঢাকা বিভাগীয় ভূসম্পত্তি কর্মকর্তা আবদুস সোবহান বলেন, মানুষ বাণিজ্যিক ইজারা নেয় বাণিজ্যিক কাজের জন্য। সে ক্ষেত্রে একটু সংস্কারকাজ করে থাকে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ঠিক আছে, পুকুর বা জলাশয় ভরাট করা যায় না। তবে পাড় ভেঙে গেলে সংস্কার করতে পারবে। বিষয়টি সরেজমিন না দেখে ফোনে বলা মুশকিল।
আশুগঞ্জ খাদ্য অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ সুলাইমান মিঞা বলেন, সেখানে স্থাপনা নির্মিত হলে খাদ্যগুদামের স্বাভাবিক কাজ বাধাগ্রস্ত হবে। তখন ধান ওঠানো বা নামানোর জন্য ট্রাক রাখার জায়গা থাকবে না। তাঁরা চান, পুকুরটি তাঁদের দেওয়া হোক।
আশুগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শ্যামল চন্দ্র বসাক প্রথম আলোকে বলেন, কেউ কোনো জায়গা বাণিজ্যিকভাবে ইজারা পেলেও জায়গার শ্রেণি পরিবর্তন করতে পারেন না। পুকুরের শ্রেণি পরিবর্তন করা যায় না। বিষয়টি সম্পর্কে তাঁরা জানেন। ইতিমধ্যে কাজ বন্ধ রাখার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। জায়গাটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ। জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে পুকুরটি খাদ্য অধিদপ্তরকে দিতে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কাছে লিখিত আবেদন করা হবে। কারণ, আজ একজন ইজারা পেয়েছেন, কাল অন্যজন পাবেন।