স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে বিজয়ের ৫০বছর পূর্তি উদযাপন করছে বাঙালি জাতি

নিজস্ব প্রতিবেদক, এস এম শাহনূর – আখাউড়া ডট কম
পৃথিবীর বহু দেশে স্বাধীনতা দিবস উদযাপন করা হলেও বিজয় দিবস উদযাপন করে এমন স্বাধীন দেশের সংখ্যা বেশি নয়। বিজয় শব্দটি সত্যি আনন্দদায়ক। আজ ১৬ ই ডিসেম্বর, এ বছর বাঙালি জাতি স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও বিজয়ের ৫০বছর পূর্তি উদযাপন করছে।

সকল বাঙালির হৃদয়ে আজ লাল সবুজে রাঙানো বাঁধ ভাঙ্গা আনন্দের অনুভূতি। বিজয়ের এ আনন্দের পিছনে রয়েছে ৩০ লক্ষ শহীদের রক্ত দান,দুই লক্ষ মা-বোনের সম্ভ্রমহানি ও এক লাখ মানুষের শরনার্থী হওয়ার ইতিহাস। লাখো শহিদের আত্মত্যাগ, স্বজন হারানোর বেদনা ও বীরত্বপূর্ণ সংগ্রামের ভেতর দিয়ে ১৯৭১-এর ১৬ ডিসেম্বর অর্জিত হয় মুক্তিযুদ্ধের মহান বিজয়। এই দিনে হানাদার পাকিস্তানি বাহিনী বীর বাঙালির কাছে পরাজয় স্বীকার করে। তাদের আত্মসমর্পণের মাধ্যমে জন্ম হয় স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ রাষ্ট্রের। তাই বিজয় দিবস আমাদের আত্মমর্যাদা, বীরত্ব ও সার্বভৌমত্বের প্রতীক। দিনটির মাধ্যমে আমরা নতুন প্রজন্মকে এবং বিশ্বকে বার বার মনে করিয়ে দিই আমাদের মুক্তিযুদ্ধের কথা এবং মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান এর কথা ও লাখো শহিদের কথা।

১৯৭২ সালের ২২ জানুয়ারি প্রকাশিত এক প্রজ্ঞাপনে এই দিনটিকে বাংলাদেশে জাতীয় দিবস হিসেবে উদ্‌যাপন করা হয় এবং সরকারীভাবে এ দিনটিতে ছুটি ঘোষণা করা হয়। ৯ মাস যুদ্ধের পর ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে পাকিস্তানি বাহিনীর প্রায় ৯১,৬৩৪ সদস্য বাংলাদেশ ও ভারতের সমন্বয়ে গঠিত যৌথবাহিনীর কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মসমর্পণ করে। সেদিন ঢাকার কেন্দ্রস্থলে রেসকোর্স ময়দানে পাকিস্তানের পক্ষে আত্মসমর্পণের দলিলে স্বাক্ষর করেন জেনারেল আমির আবদুল্লাহ খান নিয়াজি। তিনি যৌথবাহিনীর প্রধান জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরার কাছে আত্মসমর্পণ করেন। এই আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের মুক্তিবাহিনীর উপ-সর্বাধিনায়ক ও ডেপুটি চীফ অব স্টাফ গ্রুপ ক্যাপ্টেন আবদুল করিম খোন্দকার উপস্থিত ছিলেন। এর ফলে পৃথিবীর বুকে বাংলাদেশ নামে একটি নতুন স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্রের অভ্যুদয় ঘটে।

যাঁদের প্রাণের বিনিময়ে আমরা পরাধীনতার শিকল থেকে মুক্ত হতে পেরেছি, পেয়েছি স্বাধীনদেশ সেই শহীদদের স্বপ্ন পূরণে আমাদের কাজ করতে হবে। এটি শুধু একটি দিবস নয়, এটি আমাদের চেতনার ও জাগরণের দিন। এ দিন নতুন করে শপথ নিতে হবে, সোনার বাংলা গড়ার প্রত্যয়ে জাতি ধর্ম বর্ণের বিভেদ ভুলে এক সাথে কাজ করতে হবে। মনে প্রাণে লালন করতে হবে ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি’।

লেখক: এস এম শাহনূর
কবি, মুক্তিযুদ্ধ, লোকজ সংস্কৃতি ও ইতিহাস গবেষক।

Related Posts

About The Author

Add Comment