সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ দরপত্র ছাড়াই , রাস্তা সংস্কারের একান্ত প্রয়োজন ভাওয়াল দিঘী নদীর পাড়ের সৌন্দর্যায়নে ব্যস্ত পৌরসভা।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের ৭০% রাস্তার বেহাল দশা। তহবিল সংকটের কারণে পৌরসভাগুলি রাস্তাঘাট এবং ড্রেনেজ গর্তের উন্নয়ন করতে পারছে না। সেখানে নগরীর মধ্যপাড়ায় ভাওয়াল দীঘি (মহেশ্বর দীঘি) নদীর তীরে চলছে সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ দরপত্র ছাড়াই করছে নগর সরকার। বিষয়টি নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে।
চলছে সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ দরপত্র ছাড়াই
নগর সরকারের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. কাউছার আহমেদ বলেন, দ্রুত কাজ করা হচ্ছে। ল্যান্ডস্কেপিং কাজটি পরবর্তীতে রিকোয়েস্ট ফর কোট প্রক্রিয়ায় দেখানো হবে। এই প্রক্রিয়ায় সর্বোচ্চ ৬ লাখ টাকা কাজ করা যাবে।
পৌরসভা সূত্রে জানা গেছে, ব্রাহ্মণ বাড়িয়া শহরে ২৫৭ কিলোমিটার কাঁচা রাস্তা রয়েছে। এর মধ্যে ২২৬ কিলোমিটার পাকা সড়ক ও ৩১ কিলোমিটার কাঁচা সড়ক রয়েছে। নারা ১৩১ কিমি। কাঁচা খালটি ২৮ কিলোমিটার দীর্ঘ এবং পাকা খাল ১০৩ কিলোমিটার দীর্ঘ। এর মধ্যে মাত্র ২৫ কিলোমিটার খাল জুড়ে রয়েছে।
মঠ ঘাঁটি থেকে জেলা শহর সীমান্ত বাজার পর্যন্ত রাস্তার পাশে মধ্যপাড়া এলাকায় মহেশ্বর দীঘি অবস্থিত। স্থানীয়ভাবে একে ভাওয়াল দীঘি বলা হয়। দীঘির উত্তর-পশ্চিম পাশে একটি মসজিদ রয়েছে। মন্দিরের ঘাঁটি থেকে শুরু করে সীমান্ত বানিজ্যের বাজার পর্যন্ত রাস্তা খানাখন্দে ভরা আর রাস্তার বেহাল দশা।
এই রাস্তা দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ যাতায়াত করে। কিন্তু এটিসহ পৌরসভার অধিকাংশ সড়কে গর্তের কারণে দীর্ঘদিন ধরে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে নগরবাসীকে। রাস্তা সংস্কারের একান্ত প্রয়োজন ভাওয়াল দিঘী নদীর পাড়ের সৌন্দর্যায়নে ব্যস্ত পৌরসভা।
ল্যান্ডস্কেপিংয়ের কাজও টেন্ডার প্রস্তাবের নিয়ম অনুযায়ী করা হয়নি।মধ্যপাড়া এলাকার বাসিন্দারা বলছেন, এখানে বেশ কিছু নতুন বহুতল ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। এই ভবনগুলির মালিকদের সুবিধার জন্য ল্যান্ডস্কেপিং কাজ করা হয়। এখানে অপ্রয়োজনে বিশাল গেট তৈরি করা হয়েছে।
গত মঙ্গলবার সরেজমিনে দেখা যায়, মধ্যপাড়ার মহেশ্বর (ভাওয়াল) দীঘির উত্তর-পূর্ব দিকে একটি বিশাল গেট নির্মাণ করা হয়েছে। দিঘীর পূর্ব ও উত্তর পাশে ইট বিছিয়ে রাস্তা নির্মাণ। দীঘির উত্তর পাশে নয়টি পাকা বেঞ্চও নির্মাণ করা হয়েছে।
আঞ্চলিক সচেতন নাগরিক পরিষদের মহাসচিব একেএম শিবলী প্রথম আলোকে বলেন, ‘বেআইনিভাবে এ কাজ হচ্ছে বলে আমি প্রতিবাদ জানাই।’ ব্রাহ্মণ শহরকে আমরা নোংরা শহর বলি। শহরের রাস্তাগুলো খুবই খারাপ। এই উন্নয়ন প্রকৃতপক্ষে ব্যক্তির জন্য একটি দৃঢ়ভাবে নিন্দিত বিষয় এবং কোন উন্নয়নের দিকে পরিচালিত করেনি। নাগরিক হিসেবে আমরা ব্যক্তিগত উন্নয়নের কাছে জিম্মি।
জেলা শহরের মধ্যপাড়ায় মহেশ্বর দীঘির মালিকানা নিয়ে পৌরসভা ও স্থানীয় লোকজনের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। বাঁধের মালিক পৌরসভা। কিন্তু ভাওয়াল দীঘির উত্তর-পশ্চিম পাশে মসজিদ নির্মাণ করে জমি দখলের চেষ্টা করছে স্থানীয়রা। এ লক্ষ্যে পুকুর রক্ষায় নগর সরকার সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ শুরু করেছে।
নগর সরকারের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. কাউছার আহমেদ বলেন, নগর পরিষদের সিদ্ধান্তে দিঘী নদীর তীরে ওয়াকওয়ে নির্মাণ করা হচ্ছে। চারপাশে রাস্তা তৈরি করা হবে। এই ল্যান্ডস্কেপিং কাজে প্রায় 1.5 লক্ষ টাকা খরচ হতে পারে। নগরীর বিভিন্ন সড়ক সংস্কারের কাজ শুরু হতে যাচ্ছে।
পৌরসভার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আ. কুদ্দুস প্রথম আলোকে বলেন, দিঘির এক কোনায় সাড়ে চার শতক জায়গায় মসজিদ রয়েছে। কিন্তু স্থানীয় ব্যক্তিরা সেখানে সাড়ে ১২ শতাংশ জায়গা দখল করে মসজিদ সম্প্রসারণ করতে চাইছেন। পশ্চিম দিকে তাঁরা দুই শতক জায়গাও দখল করেছেন।
ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান একবার হয়ে গেলে তা আর ভাঙা যায় না। জায়গা উদ্ধারে তাৎক্ষণিকভাবে দখল বন্ধে জরুরি ভিত্তিতে কাজটি শুরু করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত ৩ লাখ ৪৯ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এখানে কোনো ধরনের অনিয়ম হয়নি।