বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র আজকের বুলেটিনে জানিয়েছে, ভারতের ত্রিপুরা সীমান্তবর্তী অঞ্চল এবং ত্রিপুরার ভেতরের অববাহিকায় ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি হচ্ছে। এ কারণে মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, ফেনী, কুমিল্লা ও চট্টগ্রাম জেলার নিম্নাঞ্চলের বিদ্যমান বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা অবনতি হয়েছে।
হবিগঞ্জে খোয়াই নদের পানি বিপৎসীমার ১৯৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে বইছে বলে জানিয়েছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী হাবিব রেজা। জেলায় এখনো বৃষ্টি হচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় এ জেলায় ১৭৫ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় বাঁধ ভেঙে গেছে। এই জেলায় সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। ৩৪টি গ্রামের ৫ শতাধিক পরিবার বন্যাকবলিত অবস্থায় আছে।
কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার কামারখাড়া অংশে গোমতী নদীর আলে ফাটল ধরেছে। ফাটল অংশ দিয়ে পানি আসছে। এতে আতঙ্কিত হয়ে বেড়িবাঁধে আশ্রয় নিয়েছে পাঁচ শতাধিক পরিবারের সদস্য। আজ সকাল ১০টায় সরেজমিন দেখা যায়, আলেখারচর ব্রিজের উত্তর অংশে কামারখাড়া। এ অংশের বাঁধে পানি উত্তোলন লাইন ফেটে পানি বের হয়। এ সময় স্থানীয় লোকজন বস্তায় মাটি ভরে বাঁধ শক্ত করেন।
স্থানীয় বাসিন্দা এনামুল হক বলেন, দুই দিন ধরে বেড়িবাঁধের অবস্থা খারাপ। সকালে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছিল। এ সময় কামারখাড়া অংশে ফাটল দেখা দেয়। আনিসুর রহমান নামের এক বাসিন্দা বলেন, তাঁর মাছের ঘের আছে। টানা তিন রাত নির্ঘুম কাটছে তাঁর।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের কুমিল্লার নির্বাহী প্রকৌশলী খান মোহাম্মদ ওয়ালিউজ্জামান বলেন, আজ সকাল ৭টায় পানি বিপৎসীমার ৭০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। পানি আরও বাড়তে পারে। আর আবহাওয়া অফিসের কর্মকর্তা সৈয়দ আরিফুর রহমান জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় কুমিল্লায় ২২০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। আরও ৪৮ ঘণ্টা বৃষ্টির পূর্বাভাস আছে।
নোয়াখালীর আট উপজেলাতেই পানি বেড়েছে। এখানে চার দিন ধরে টানা বৃষ্টি হচ্ছে। বৃষ্টির পানি আটকে থেকে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। জেলার সেনবাগ, বেগমগঞ্জ, কোম্পানীগঞ্জ, সোনাইমুড়ী, চাটখিল ও নোয়াখালী সদরের বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। কবিরহাট ও সুবর্ণচরে পরিস্থিতি বাকি উপজেলাগুলোর চেয়ে কিছুটা ভালো। নোয়াখালী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের পর্যবেক্ষক রফিকুল ইসলাম বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় নোয়াখালীতে ১৩৩ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। বৃষ্টি আরও ৪৮ ঘণ্টা হওয়ার পূর্বাভাস দেন তিনি।
খাগড়াছড়িতে ২৪ ঘন্টা পর আবার ডুবল ঘরবাড়ি। জেলার ৯টি উপজেলায় বর্তমানে পানিবন্দী হাজারো পরিবার। পাহাড়ি ঢল ও টানা বর্ষণে খাগড়াছড়িরে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছিল গত মঙ্গলবার বিকেলে। পানি কমে গেলে আশ্রয়কেন্দ্র থেকে বুধবার সকালে লোকজন নিজের বাড়িতে চলে যান। তবে আজ বৃহস্পতিবার ভোর ৫টা থেকে হঠাৎ ঢলের পানি নেমে আসে। শহরের অধিকাংশ নিম্নাঞ্চলে পানি বাড়তে থাকে।
জেলা শহরের ন্যান্সি বাজার, শালবন, কলাবাগান ও কুমিল্লা টিলাসহ কয়েকটি এলাকায় বসতঘরের পাশে পাহাড়ধস হয়েছে। খাগড়াছড়ি নারানখাইয়া এলাকার মোহিনী দেবী চাকমা (৬৭) বলেন, এত বছর বয়সে তিনি এমন বন্যা কখনো দেখেননি।