আখাউড়া-আগরতলা সীমান্তের শূন্যরেখায় গিয়ে দাঁড়াচ্ছেন বাংলাদেশের ট্রাকচালকেরা। ভারতের অংশ থেকে তাপমাত্রা পরীক্ষার যন্ত্র নিয়ে এগিয়ে এলেন স্বাস্থ্যকর্মী। তাপমাত্রা মাপার পর নথিপত্র যাচাই শেষে মাস্ক ও হাতে গ্লাভস পরে বাংলাদেশের পণ্যভর্তি ট্রাক নিয়ে চালকেরা আগরতলা দিয়ে প্রবেশ করছেন ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে।
করোনাকালে এভাবেই স্বাস্থ্যবিধি মেনে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে পণ্য রপ্তানির কার্যক্রম চলছে। ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে করোনার বিস্তার বাড়লেও এই বন্দর দিয়ে পণ্য রপ্তানি কার্যক্রম স্বাভাবিক রয়েছে। তবে উভয় দেশের নাগরিকদের আসা-যাওয়ার ক্ষেত্রে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। বর্তমানে সর্বশেষ ৭২ ঘণ্টার মধ্যে আরটি-পিসিআরে করা করোনার পরীক্ষার নেগেটিভ ফলাফল এবং সংশ্লিষ্ট হাইকমিশনের অনুমতি নিয়ে উভয় দেশে আটকে পড়া যাত্রীরা আসা-যাওয়া করছেন।
আখাউড়া স্থলবন্দরের ইমিগ্রেশন সূত্রে জানা গেছে, সাধারণ যাত্রীদের আসা-যাওয়া দীর্ঘদিন ধরেই বন্ধ রয়েছে। তবে বাংলাদেশে এসে আটকে পড়া ভারতীয় নাগরিক এবং বাংলাদেশ থেকে চিকিৎসার জন্য ভারতের বিভিন্ন স্থানে আটকে পড়া বাংলাদেশি নাগরিকেরা আখাউড়া-আগরতলা সীমান্ত দিয়ে আসা-যাওয়া করতে পারবেন। সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার এবং ভারতে নিযুক্ত বাংলাদেশে হাইকমিশনারের অনুমতি লাগবে। বর্তমানে আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে যাওয়ার জন্য বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ৬৩ জন ভারতীয় নাগরিকের একটি তালিকা আখাউড়া ইমিগ্রেশনে পাঠিয়েছে। ৬৩ জনের তালিকার মধ্যে আজ মঙ্গলবার বিকেল পর্যন্ত ১৮ জন ভারতীয় নাগরিক নিজ দেশে ফিরে গেছেন। বেলা তিনটা পর্যন্ত ভারত থেকে আটকা পড়া ১০ বাংলাদেশি নাগরিক দেশে ফিরেছেন। তাঁদের আখাউড়ায় তিন দিনের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে থাকার নির্দেশ দিয়েছেন চিকিৎসক।
আখাউড়া স্থলবন্দরের শুল্ক বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, করোনার কারণে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে ভারতীয় হাইকমিশনার বা বাংলাদেশ সরকারের কোনো কর্তৃপক্ষ তেমন কোনো নির্দেশনা বা বিধিনিষেধ আরোপ করেনি। পণ্য রপ্তানি স্বাভাবিক রয়েছে। মঙ্গলবার সকাল সাতটা থেকে বেলা সোয়া তিনটা পর্যন্ত আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে পণ্যবাহী ৪২টি ট্রাক ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের আগরতলা গেছে। এসবের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো মাছ, প্লাস্টিকসামগ্রী, সিমেন্ট ইত্যাদি। আর গত সোমবার ৩৪টি ট্রাকে ২২০ মেট্রিক টন পণ্য ত্রিপুরায় রপ্তানি হয়। এর মধ্যে ১৯টি ট্রাকে ৫৫ মেট্রিক টন ছোট-বড় মাছ, রড, সিমেন্ট, তুলা, সিলিং ফ্যান এবং ১৫ ট্রাকে প্লাস্টিকের গৃহস্থালি পণ্য ভারতের ত্রিপুরায় রপ্তানি করা হয়।
আজ মঙ্গলবার বেলা দুইটা থেকে সাড়ে তিনটা পর্যন্ত স্থলবন্দরে অবস্থান করে দেখা গেছে, বাংলাদেশে পণ্য পরিবহন ট্রাকের চালকেরা আখাউড়া-আগরতলা সীমান্তের শূন্যরেখার সামনে আখাউড়া অংশে গিয়ে দাঁড়ান। শূন্যরেখার অপর প্রাপ্তে ভারতের ত্রিপুরা অংশে একজন স্বাস্থ্যকর্মী তাপমাত্রা মাপার যন্ত্র নিয়ে সামনে এগিয়ে আসেন। চালক হাত বাড়ালে স্বাস্থ্যকর্মী শরীরের তাপপাত্রা পরীক্ষা করেন। বাংলাদেশের চালকেরা মুখে মাস্ক ও হাতে গ্লাভস ব্যবহার করেন। নথিপত্রের আনুষ্ঠানিকতা শেষে চালকেরা পণ্যবাহী ট্রাক নিয়ে আগরতলায় প্রবেশ করেন। সীমান্তের শূন্যরেখা অতিক্রম করে আগরতলায় প্রবেশের পরই ট্রাকের চারপাশে জীবাণুনাশক ছিটানো হয়।
অপর দিকে ইমিগ্রেশনে একটি হেলথ ডেস্ক করা হয়েছে। সেখানে একজন চিকিৎসক ও একজন স্বাস্থ্য সহকারী বসে উভয় দেশের যাত্রীর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেন।
বেলা আড়াইটার দিকে আগরতলায় পণ্য খালাস করে আখাউড়া স্থলবন্দরে ফেরত আসা ট্রাকচালক সবুজ মিয়া ও কামরুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, ‘বেলা ১১টায় প্লাস্টিকের পণ্য নিয়ে ত্রিপুরা রাজ্যের আগরতলায় যাই। আগরতলায় তেমন কোনো বিধিনিষেধ নেই। আমরা সেখানে ট্রাক থেকে নেমে স্থানীয়দের সঙ্গে কথাবার্তা বলি। পণ্য নামানো শেষ হলে ট্রাক নিয়ে আখাউড়ায় ফিরে আসি।’
আগরতলায় যেতে গাজীপুরের কালীগঞ্জ থেকে ট্রাকে সিমেন্ট নিয়ে দুপুরে আখাউড়া স্থলবন্দরে আসা বাবুল মিয়া ও আসিফুল প্রথম আলোকে বলেন, ‘এখানে আমরা হাত বাড়ালে একটি থার্মোমিটার দিয়ে শরীরের তাপমাত্রা পরীক্ষা করা হয়। এটি ছাড়া আর কিছু করা হয় না। আগরতলায় সবকিছু স্বাভাবিক।’
আখউড়া সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম বলেন, পণ্য রপ্তানি কার্যক্রম স্বাভাবিক রয়েছে। পণ্য পরিবহনের ট্রাকচালকদের কোনো করোনা পরীক্ষার ফলাফল দেখাতে হয় না। তাঁদের তাপমাত্রা মাপা হয়।
আখাউড়া ইমিগ্রেশনে হেলথ ডেস্কে বসা চিকিৎসক ফারহানা আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, যাত্রীদের শরীরের তাপমাত্রা, ঠান্ডা, কাশি ও অ্যালার্জিজনিত বিষয়গুলো আছে কি না যাচাই করা হয়। ভারত থেকে আসা বাংলাদেশি নাগরিকদের দুটি বিষয় তাঁরা দেখেন। একটি সর্বশেষ ৭২ ঘণ্টার মধ্যে করা অ্যান্টিজেন বা আরটি-পিসিআরে করা করোনা পরীক্ষার নেগেটিভ ফলাফল। তবে আরটি-পিসিআরের ফলাফলকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়। তখন তাঁদের আখাউড়ায় তিন দিনের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিন এবং ১১ দিনের হোম কোয়ারেন্টিনে থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়।
আখাউড়া ইমিগ্রেশনের ইনচার্জ আব্দুল হামিদ বলেন, তাঁরা বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো ৬৩ জন ভারতীয় নাগরিকের একটি তালিকা পেয়েছেন। এ তালিকার ১৮ জন বেলা তিনটা পর্যন্ত আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে নিজ দেশে ফিরে গেছেন। তিনি বলেন, একইভাবে ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে আটকে পড়া বাংলাদেশি নাগরিকদের সেখানে নিযুক্ত বাংলাদেশ হাইকমিশনার থেকে অনাপত্তিপত্র সংগ্রহ করে বাংলাদেশে আসতে হচ্ছে।
আখাউড়া শুল্ক বিভাগের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, মঙ্গলবার সকাল সাতটা থেকে বেলা সোয়া তিনটা পর্যন্ত আখাউড়া দিয়ে ৪২টি পণ্যবাহী ট্রাক আগরতলায় গেছে। পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে কোনো ধরনের বিধিনিষেধ নেই। খবর: প্রথম আলো