পুরোনো ট্রান্সফরমারের বন্দিদশায় কালীকচ্ছের পাঁচ গ্রাম, ১৮ ঘণ্টা অন্ধকারে জনজীবন অচল

প্রতিবেদন: নিজস্ব প্রতিনিধি, ব্রাহ্মণবাড়িয়া

কথায় বলে, প্রযুক্তি বদলেছে, কিন্তু কালীকচ্ছ যেন রয়ে গেছে সেই ৩০ বছর আগেই। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার কালীকচ্ছ ইউনিয়নের পাঁচটি গ্রাম—নাথপাড়া, দত্তপাড়া, সূত্রধরপাড়া, কর্মকারপাড়া ও ঘোষপাড়া—চলতি সপ্তাহের সোমবার সকাল থেকে রাত পর্যন্ত প্রায় ১৮ ঘণ্টা ছিল বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন। অভিযোগ, একটাই ট্রান্সফরমার! সেটিও তিন দশক পুরোনো।

ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে সরাইল সরকারি কলেজসংলগ্ন একমাত্র ট্রান্সফরমারটি বিকল হয়ে গেলে পুরো এলাকা নিমজ্জিত হয় বিদ্যুৎহীন অন্ধকারে। ছোট একটি যন্ত্র বিকল হয়ে যায়, আর তার সাথে স্থবির হয়ে পড়ে পাঁচটি গ্রামের জীবনযাত্রা।

“এই একটা ট্রান্সফরমারেই আমাদের সব ভরসা, কিন্তু ওটা নিজেই ভরসাহীন এখন।”

স্থানীয় কলেজশিক্ষক আফম দেলোয়ার পাভেল ক্ষোভ ঝেড়ে বলেন, ‘সামান্য ঝড়-বৃষ্টিতেই ট্রান্সফরমার বিকল হয়। মেরামতে সময় লাগে দুই-তিন দিন। আর তখন আমরা চাঁদা তুলে ভিক্ষার মতো করে বিদ্যুৎ ফিরিয়ে আনি।’

কালীকচ্ছ ইউনিয়নের এই পাঁচটি গ্রাম ঘনবসতিপূর্ণ। রয়েছে সরকারি কলেজ, প্রাথমিক বিদ্যালয়, ছোট শিল্পকারখানা ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। অথচ পুরো এলাকাজুড়ে একটি মাত্র পুরোনো ট্রান্সফরমার। জনসংখ্যা ও চাহিদা কয়েকগুণ বেড়ে যাওয়ার পরও দীর্ঘদিন ধরে নতুন কোনো অবকাঠামো হয়নি।

সূত্রধরপাড়ার দুলাল সূত্রধর বললেন, ‘ছয় মাস ধরে খালের ওপর ঝুলে থাকা বিদ্যুতের তার এখন যেন মরণফাঁদ। প্রশাসনকে জানালেও তারা দেখে না, শোনে না।’

ঘোষপাড়ার অধ্যক্ষ মৃধা আহমাদুল কামাল বলেন, ‘একটানা বিদ্যুৎ না থাকায় ক্লাসে ফ্যান চলে না, কম্পিউটার বন্ধ, এমনকি পরীক্ষাও ঠিকমতো নেওয়া যায় না।’

“আমরা আলো চাই, অনুদান নয়”

অবশেষে রাত সাড়ে ১১টায় বিদ্যুৎ ফিরে আসে। কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায়—এরপর কখন আবার অন্ধকার নামবে এই পাঁচ গ্রামের ওপর?

বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিউবো) সরাইল কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী শামীম আহমেদ জানান, ‘বজ্রপাতের কারণে ট্রান্সফরমারটি নষ্ট হয়। প্রতিস্থাপন করতে সময় লেগেছে। এই এলাকাকে রিলিফ দিতে দ্বিতীয় একটি ট্রান্সফরমার বসানোর পরিকল্পনা আছে।’

তবে প্রশ্ন হলো—পরিকল্পনা কি বাস্তবে রূপ নেবে? নাকি আগামী বৃষ্টিতে আবারও ঘুটঘুটে অন্ধকারে ডুবে যাবে পুরো কালীকচ্ছ?

এলাকাবাসী এখন স্থায়ী সমাধান চায়। তারা চায় ট্রান্সফরমার বদলানো হোক, বিদ্যুৎ সরবরাহে আধুনিকায়ন আনা হোক। আর বারবার চাঁদা তুলে নিজেদের দুর্ভোগ মেরামত করতে না হোক।

এই কালের কালীকচ্ছ যেন বিদ্যুৎহীন আর না থাকে, এমনটাই প্রত্যাশা গ্রামবাসীর।

Related Posts

About The Author