পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেছেন, লন্ডনে অবস্থানরত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেশে ফিরতে চাওয়া একান্তই তার নিজস্ব সিদ্ধান্ত। তিনি দেশে ফিরতে চাইলে পাসপোর্ট বা ট্রাভেল ডকুমেন্টের জন্য কোনো সহায়তা লাগলে, তা দিতে প্রস্তুত অন্তর্বর্তী সরকার। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা এসব কথা বলেন।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দেশে ফেরার বিষয়ে জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, দেখুন, উনি কখন আসবেন সেটার সিদ্ধান্ত কিন্তু ওনার। উনি এই দেশের নাগরিক, উনি আসতে পারেন যেকোনো সময়ে। আসার জন্য যদি তার ট্রাভেল ডকুমেন্টস নিয়ে কোনো ঝামেলা থাকে, সেটার সমাধান আমরা করব। কিন্তু দেশে ফেরার সিদ্ধান্ত তার নিতে হবে।
তারেক রহমানকে ফেরাতে সরকার কোনো উদ্যোগ নেবে কিনা- জানতে চাইলে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, সেটা তো আমাদের করার প্রয়োজন নেই। তার মানে দাঁড়াবে যে আপনি আসেন না কেন। সেটা তো আমরা বলব না। উনি যখন আসতে চাইবেন তখন তাকে আমরা যেটুকু সহায়তা দেওয়ার সেটা অবশ্যই করব।
তারেক রহমান লন্ডনের বাংলাদেশ মিশনে পাসপোর্টের জন্য আবেদন করেছেন কিনা— জানতে চাইলে তৌহিদ হোসেন বলেন, উনি মিশনে পাসপোর্টের জন্য আবেদন করেছেন কিনা আমি জানি না। উনি আসতে চাইবেন যখন, তখন তার পাসপোর্ট বা ট্রাভেল ডকুমেন্ট যেটাই দেওয়ার প্রয়োজন হবে, সেটা দিতে পারব।
শেখ হাসিনাকে ফেরাতে এক বছর আগে ভারতকে চিঠি দেওয়া হয়েছিল। এরপর আর কোনো চিঠি দেওয়া হয়েছে কিনা জানতে চাইলে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, এরপর এ নিয়ে আর কোনো চিঠি দেইনি আমরা। চিঠি শুধু এক দফায় দেওয়া হয়েছে। আবার দেওয়া হলে, আপনারা জানতে পারবেন। তবে ফেরানোর বিষয়ে তাদের সঙ্গে বিভিন্ন সময়ে আলোচনা হয়েছে।
ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের বিষয়ে জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, আমি আগেও বলেছি, আমাদের দিক থেকে সম্পর্ক উন্নয়নে কোনো বাধা নেই। তবে এটাতে দুই পক্ষকেই এগোতে হবে। দুই পক্ষ কোনো বিষয়ে একমত হলে নিশ্চয়ই এগোবে।
মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশিদের ধরপাকড় প্রসঙ্গে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, আমাদের মিশনের কাছ থেকে আমরা খোঁজ-খবর নিচ্ছি, দেখা যাক ফলাফল কী দাঁড়ায়। একটা বিষয় খেয়াল করে দেখুন, ধরা পড়ার সংখ্যায় অর্ধেক কিন্তু বাংলাদেশি। এটা আমাদের জন্য বিব্রতকর। তাদের কেউই কিন্তু কোনও সমস্যা ছাড়া ধরা পড়েছে এমন নয়। অবশ্যই সমস্যা আছে, হয় কাগজপত্র নেই, না হলে অতিরিক্ত সময় থেকেছে। আমার মনে হয়, এটা শুধু সরকারের প্রশ্ন না, এটা সবাই মিলে ঠিক করতে হবে। বাংলাদেশের যে খারাপ অবস্থান, সেখান থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। এটা আমাদের জন্য খুব ক্ষতিকর।
তিনি বলেন, কেউ যদি কোথাও কোনও খারাপ অবস্থায় পড়ে কিংবা ধরা পড়ে আমরা কিন্তু তাকে সাহায্য করার চেষ্টা করি। এটাও দেখতে হবে, আমাদের লোকের ক্ষেত্রে এ ধরনের ঘটনা এতো বেশি ঘটে কেন। এটার একটি কারণ আমি বলতে পারি, আমাদের অভিবাসন ব্যয় অত্যধিক, বেআইনিভাবে অত্যধিক। এটা আমরা যতক্ষণ পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণ না করতে পারবো, এই সমস্যাগুলো থাকবে।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, নেপাল একটি ছোট্ট দেশ। তাদের এই সমস্যা নেই। তাদের লোকজন যায় এবং ফিরে আসে। চুপচাপ কাজ করে, বেআইনি কিছু করে না। কারণ তারা কম পয়সায় যেতে পারে। তাদের যে এজেন্ট তারা শোষণ করতে পারে না। আমাদের এজেন্টরা শুধু এখানে নয়, কর্মীরা যেসব দেশে যায় সেখানেও র্যাকেট করার কারণে অনেক বেশি অর্থ খরচ করতে বাধ্য হয় কর্মীরা। এই জিনিস থেকে আমরা যতক্ষণ না বের হতে পারবো আমাদের অহরহ এই সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে। আমাদের যে পলিটিক্যাল ক্যাপিটাল তার অনেকখানি ব্যয় হয়ে যাবে তাদের এই কার্যক্রম থেকে উদ্ধারের জন্য।