প্রথম আলো – নিজস্ব প্রতিবেদক | তারিখ: ১৩-০৪-২০১৩
বাংলা নববর্ষ পয়লা বৈশাখ উপলক্ষে ইলিশের বাজার ‘গরম’। নববর্ষে পান্তা-ইলিশের অনুষঙ্গ ইলিশের এই চাহিদাকে পুঁজি করে ফায়দা লুটছেন পাইকারি ও খুচরা মাছ ব্যবসায়ীরা। বাড়তি লাভের আশায় কয়েক মাস ধরে মজুত রাখা ইলিশ এখন আসছে বাজারে।
ক্রেতারা মনে করেন, আকাশচুম্বী দামের কারণে মধ্যবিত্তের পক্ষে পান্তা-ইলিশ আয়োজন প্রায় অসম্ভব।
নববর্ষ সামনে রেখে কয়েক দিন ধরেই রাজধানীর বাজারে ইলিশের দাম বাড়ছে। পয়লা বৈশাখের এক দিন বাকি থাকায় গতকাল শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটির দিনে এই দাম আরেক দফা বাড়ে। গতকাল কারওয়ান বাজারে এক কেজি ওজনের একটি ‘তাজা’ ইলিশ বিক্রি হয় পাঁচ হাজার টাকায়। দর-কষাকষির সুযোগ দেননি বিক্রেতারা। এই দামেও ইলিশ কেনার মানুষের অভাব ছিল না। ওই বাজারে দু-তিন মাসের হিমায়িত একই আকারের ইলিশ বিক্রি হয় এক হাজার ৫০০ থেকে দুই হাজার টাকায়।
গতকাল কারওয়ান বাজারের প্রায় সব মাছ বিক্রেতাই বসেছিলেন নানা আকারের ইলিশ নিয়ে। তাঁদের একজন নূর আলী জানান, গত দুই দিনে তিনি ১০ কার্টন (প্রতিটিতে ১০টি মাছ থাকে) ইলিশ বিক্রি করেছেন। এর মধ্যে দুই কার্টন তাজা ইলিশও রয়েছে। তাঁর দাবি, চাঁদপুর, বরিশাল, চট্টগ্রাম অঞ্চল থেকে এসব ইলিশ ধরা হয়েছে।
গতকাল দুপুর থেকে নূর আলী ‘তাজা’ ইলিশ বিক্রি বন্ধ করে দিয়েছেন। কারণ এখন তাঁর কাছে যত তাজা ইলিশ রয়েছে, তার সবই অগ্রিম বিক্রি হয়েছে বা ‘বুকিং’ দেওয়া। তিনি জানান, সকালে তিনি চারটি ‘তাজা’ ইলিশ ২০ হাজার টাকায় বিক্রি করেছেন।
মাছ বিক্রেতারা জানান, বাড়তি লাভের আশায় নববর্ষের জন্য প্রতিবছরই ইলিশ মাছ হিমায়িত করে রাখেন তাঁরা। এখন বাজারে সেই মাছ বিক্রি হচ্ছে।
জানা গেছে, কয়েক মাস আগে এক কেজি ওজনের ইলিশ কিনতে বিক্রেতাদের দাম পড়েছে গড়ে ৮০০ টাকা। হিমাগারের ভাড়াসহ এখন এই মাছের দাম ঠেকেছে এক হাজার থেকে এক হাজার ২০০ টাকায়।
কারওয়ান বাজারের মাছ বিক্রেতা রউফ মিয়া জানান, পয়লা বৈশাখ উপলক্ষে পাইকারি পর্যায়ে তাজা ইলিশের দাম মণপ্রতি এক লাখ ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত উঠেছে। অথচ মৌসুমে এই দাম ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা।
উত্তরা, মহাখালীসহ কয়েকটি কাঁচাবাজারে গিয়েও দেখা গেছে, অন্য মাছের তুলনায় ইলিশের চাহিদা বেশি, বিক্রিও হচ্ছে। এক বাজারের সঙ্গে আরেক বাজারের দামে যেমন পার্থক্য ছিল, তেমনি আকার ভেদেও ছিল দামের পার্থক্য। বাজারে ৮০০ গ্রাম থেকে এক কেজি ওজনের ইলিশের সরবরাহ বেশি।
উত্তরার আজমপুর বাসস্ট্যান্ড ও কুশল সেন্টার কাঁচাবাজারে এক কেজি ওজনের হিমায়িত ইলিশ বিক্রি হয় এক হাজার ৪০০ থেকে এক হাজার ৬০০ টাকায়। মহাখালী কাঁচাবাজারে এর দাম হাঁকা হয় এক হাজার ৮০০ থেকে দুই হাজার টাকা। ৬০০ থেকে ৮০০ গ্রাম ওজনের মাছের দাম ৮০০ থেকে এক হাজার ২০০ টাকা।
বাজারে ছোট ও জাটকা ইলিশের সরবরাহও প্রচুর। এক হালি জাটকা ৮০০ থেকে এক হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হয়।
উত্তরা কুশল সেন্টারে আসা গৃহিণী রওশন আরা প্রথম আলোকে বলেন, ‘এবারে ইলিশের দাম নাগালের বাইরে। বিক্রেতারা ইচ্ছামতো দাম হাঁকছেন। ইলিশও যেন একদরের পণ্য। তার পরও বাচ্চাদের কথা চিন্তা করে এক হাজার ৫০০ টাকায় একটি ইলিশ কিনেছি। মধ্যবিত্তের পক্ষে পান্তা-ইলিশ আয়োজন প্রায় অসম্ভব হয়ে গেছে।’
পাড়া-মহল্লায় ইলিশের ফেরিওয়ালাদের হাঁকডাক বেড়েছে। তাঁদের কাছে জাটকা ও ছোট আকারের ইলিশই বেশি।
নববর্ষ উপলক্ষে গণমাধ্যমে বিজ্ঞাপন দিয়ে ইলিশের ক্রেতাদের আকৃষ্ট করার চেষ্টা করছে সুপারস্টোরগুলোও।
দাম নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ: আকাশচুম্বী দাম নিয়ন্ত্রণে মজুত ইলিশ বাজারে সরবরাহের জন্য ফ্রোজেন ফুডস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনকে ২ এপ্রিল বাণিজ্য মন্ত্রণালয় নির্দেশ দিয়েছে। সম্প্রতি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে ধরা পড়েছে, ১১টি প্রতিষ্ঠান রপ্তানির জন্য এক হাজার ১৫ টন ইলিশ মজুত করে রেখেছে। ইলিশ রপ্তানি নিষিদ্ধ থাকায় এই বিপুল পরিমাণ মাছ বাজারে ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
কারওয়ান বাজারের ইলিশ বিক্রেতারা জানান, গতকাল রাত থেকেই চাঁদপুর, বরিশাল, চট্টগ্রাম থেকে বিপুল পরিমাণ ইলিশ বাজারে আসার কথা। এতে দাম কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসবে।