নিজস্ব প্রতিবেদক, মোঃ সাইফুল আলম – আখাউড়া ডট কম
বর্তমান প্রজন্মের কাছে আখাউড়া নামটি সমধিক পরিচিত হলেও আখড়া নাম থেকেই এই উৎপত্তি। আখাউড়ার ইতিহাস ও রাজনীতি অত্যন্ত সমৃদ্ধশালী। ভৌগলিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক সকল দিক দিয়েই আখাউড়া সমৃদ্ধ একটি স্থান।
পূর্ববঙ্গের প্রবেশদ্বার বলে পরিচিতি লাভ করা আখাউড়া বাংলাদেশের ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার একটি উপজেলা। এটি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার একটি প্রশাসনিক এলাকা। এটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ উভয়ের জন্য একটি ঐতিহাসিক শহর। আখাউড়া উপজেলার আয়তন ৯৮.০৫ বর্গ কিলোমিটার (২৪,২২৮ একর)। এ উপজেলার উত্তরে বিজয়নগর উপজেলা, উত্তর-পশ্চিমে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলা, পশ্চিমে ও দক্ষিণে কসবা উপজেলা এবং পূর্বে ভারতের ত্রিপুরা প্রদেশ অবস্থিত।
প্রশাসনিক ভাবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ এই শহর। জানা যায়, ইংরেজ শাসনামলে আখাউড়া ৫টি থানার অন্তর্গত ছিল। এই সময় একটি পুলিশ ফাঁড়ির মাধ্যমে প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালিত হত। ১৯৭৬ সালের ২০ জুন মনিয়ন্দ, ধরখার, মোগড়া, আখাউড়া উত্তর ও আখাউড়া দক্ষিণ ইউনিয়ন পরিষদ নিয়ে আখাউড়া থানা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৮৩ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর এই থানাকে উপজেলায় উন্নীত করা হয়।
মূল ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায়, এই অঞ্চলটি ত্রিপুরা রাজ্যের জমিদার মহারাজা বীর বিক্রম রাধা কিশোর মানিক্য বাহাদুরের জমিদারের অংশে পরিণত হয়। এই জমিদারের চাকলা রৌশনাবাদ এষ্টেটের মোগড়া রাজকাচারী ও আখাউড়াস্থ তহশীল কাচারীর ছিল বর্তমান আখাউড়া সদর থেকে ৫ কিলোমিটার দক্ষিণে। এই কাচারী দুটির মাধ্যমে এই অঞ্চলের জমিদারীর যাবতীয় খাজনাদি আদায়সহ জমিদারী ব্যবস্থা কার্যাদি পরিচালিত হত। মহারাজার জমিদারীর দ্বিতীয় রাজধানী ছিল কুমিল্লা। কুমিল্লার রাজবাড়ীতে যাতায়তের জন্য সে সময় আখাউড়া-আগরতলা সড়ক ব্যবহৃত হতো।এছাড়া আসাম বেঙ্গল রেলপথে চলাচলের জন্য জমিদার সপরিবারে আখাউড়া কাচারীতে অবস্থান করতেন। তিনি এ অঞ্চলের রাধানগরে রাধামাধবের আখড়া, দুর্গাপুরে দুর্গাদেবীর আখড়া, মোগড়া হাওড়া নদীর পাড়ের আখড়া, মনিয়ন্দের আখড়া ইত্যাদি নিজ খরচে নির্মাণ করেছিলেন। সে সময়ে এ অঞ্চলে আখড়ার আধিক্যের কারণে এই অঞ্চল কালক্রমে আখাউড়া নামে পরিচিতি লাভ করে। বর্তমান আখাউড়া বাংলাদেশের সর্ব পূর্ব দিকে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের রাজধানী আগরতলা সীমান্তবর্তী স্থানে অবস্থিত।
আখাউড়া উপজেলা:
বর্তমানে আখাউড়া উপজেলায় ১টি পৌরসভা ও ৫টি ইউনিয়ন রয়েছে। পৌরসভা: আখাউড়া। ইউনিয়নসমূহ হল ১নং মনিয়ন্দ, ২নং ধরখাড়, ৩নং মোগড়া, ৪নং আখাউড়া উত্তর, ৫নং আখাউড়া দক্ষিণ। আখাউড়া পৌরসভার মেয়র তাকজিল খলিফা কাজল।
উল্লেখযোগ্য স্থান ও স্থাপনার মধ্যে হল, আখাউড়া স্থল বন্দর, খড়মপুর মাজার শরীফ, বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামালের কবর ও আখাউড়া রেলওয়ে জংশন। এছাড়া আখাউড়ার উল্লেখযোগ্য ব্যক্তি আবদুর রহমান –– বীর প্রতীক খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা, আবদুর রশিদ:-বীরপ্রতিক, প্রবোধচন্দ্র সেন –– ছন্দবিশারদ, সাফিল মিয়া:-বীর উত্তম খেতাব প্রাপ্ত, এবং মঙ্গল মিয়া:-বীর প্রতীক।
২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী আখাউড়া উপজেলার মোট জনসংখ্যা ১,৪৫,২১৫ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৭০,১১০ জন এবং মহিলা ৭৫,১০৫ জন। মোট পরিবার ২৭,৮৩১টি। জনসংখ্যার ঘনত্ব প্রতি বর্গ কিলোমিটারে প্রায় ১,৪৮১ জন রয়েছে। ভালো শিক্ষা বেবস্থা রয়েছে এই উপজেলায়। যার মধ্যে শহীদ স্মৃতি ডিগ্রী কলেজসহ রয়েছে প্রাথমিক বিদ্যালয়, মহাবিদ্যালয়, উচ্চ বিদ্যালয়, জুনিয়র বিদ্যালয় এবং অনেক মাদ্রাসা। এছাড়া রয়েছে স্বাস্থ্য সেবার জন্য উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্র – ১টি।
কৃষিকাজের জুড়ি নেই এই এলাকার মানুষের। এখানকার প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ মানুষ কৃষক।প্রধান ফসলঃ ধান, গম, বিভিন্ন ধরনের সবজি। প্রধান ফলঃ কলা, কাঁঠাল, আম, জাম, পেঁপে, পেয়ারা, কুল ও তরমুজ। এখানকার অর্থনীতিও ভালো। রয়েছে কুটির শিল্প – মৃৎ শিল্প, সূচী-শিল্প।
রাজনৈতিকভাবে অনেক প্রচারমুখ এই আখাউড়া উপজেলা। বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ ২৪৬ আসন ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪ এর জাতীয় সংসদ সদস্য এডভোকেট আনিসুল হক (বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ)। তিনি বর্তমান আইনমন্ত্রী। এছাড়া রয়েছেন উপজেলা চেয়ারম্যান মোঃ আবুল কাশেম ভূঁইয়া। প্রাণপুরুষ মেয়র তাকজিল খলিফা কাজল। অতীতে আওয়ামীলীগ এর সংসদ সদস্য শাহ্ আলম ও বিএনপির মুশিফিকুর রহমান ছাড়াও আখাউড়া উপজেলায় রয়েছে দেশ বরেণ্য সক্রিয় অনেক রাজনীতিবিদ। বাংলাদেশ ডিজিটাল হচ্ছে এবং সেইসাথে পাল্লা দিয়ে ডিজিটাল হচ্ছে এই উপজেলা। আখাউড়া উপজেলা বাংলাদেশের অন্যতম একটি জনপদে পরিনত হবে এমনটাই সবার প্রত্যাশা।