চট্টগ্রামে সীতাকুণ্ডে গত ০৪-০৬-২০২২ , শনিবার রাত ৯টার দিকে বিএম ডিপোতে কনটেইনার ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। আগুন লাগার পর বিস্ফোরণে কেঁপে উঠেছিল আশপাশের প্রায় ৪ বর্গকিলোমিটার এলাক। এতে অর্ধশত মানুষ নিহত এবং প্রায় ৫০০ জন আহত হন। রাসায়নিক দ্রব্য বিস্ফোরণের কারণে বারবার বিস্ফোরিত হয় কন্টেইনার। সার্ভিসের কর্মীরা প্রথম দিকে আগুনের তীব্রতার কারণে কাছেও ঘেঁষতে পারেনি ।
প্রায় দুইটি রাত এবং একটি দিন পার হল চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের বিএম ডিপোতে বিস্ফোরণের ঘটনা । কিন্তু আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে এখনও আনা সম্ভব হয়নি। তবে এখন ছড়াচ্ছে না আগুন। কন্টেইনার ডিপো থেকে আজ সোমবার সকাল ৯টা পর্যন্ত আগুনের ধোয়া বের হচ্ছে। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার। সেনাবাহিনী ও পুলিশের সদস্যরা ঘটনাস্থলে অবস্থান করছেন ।
জানা যায়,আগুন জ্বলছে ডিপোর পশ্চিম পাশের কয়েকটি কনটেইনারে । তাছাড়া আশপাশের বেশ কিছু কনটেইনার থেকেই ধোয়া বের হচ্ছে। বিশেষ যন্ত্রের সাহায্যে ওপর থেকে এসব কনটেইনারে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা পানি ছিটাচ্ছেন । আগুন নেভাতে ফায়ার সার্ভিসের ১২টি ইউনিট কাজ করছে। গাড়ির পানি শেষ হলে নতুন আরেকটি গাড়ি পাঠানো হচ্ছে। ডিপোর প্রধান ফটকের সামনে পুলিশের একটি দল অবস্থান করে কড়া নিরাপত্তা নিশ্চিত করছে।
ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা আশঙ্কা করছেন, আগুন আর বেশি ছড়াবে না যদি না আশপাশে থাকা কনটেইনারগুলোতে রাসায়নিক না থাকে। কিন্তু রাসায়নিক পদার্থ থাকলে বিস্ফোরণের সম্ভাবনা রয়েছে। আশপাশে থাকা কনটেইনারগুলোতে রাসায়নিক পদার্থ আছে কিনা তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
আগুন এখনও পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসেনি ফায়ার সাভিসের নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে জানানো হয়। আমাদের কর্মীরা প্রাণান্তকর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনার। তবে উদ্ধার অভিযান শুরু করা যায়নি ডিপোর সবগুলো শেডের ভেতরে প্রবেশ করে । এখনওসেখান থেকে ধোঁয়া বের হচ্ছে।
ফায়ার সার্ভিস সূত্র জানায়, চট্টগ্রামের চারটি উপজেলা, ফেনী, নোয়াখালী ও কুমিল্লা থেকে ফায়ার সার্ভিসের ২৩টি ইউনিটের ১৮৩ জন সদস্য আগুন নেভানোর কাজে যুক্ত।
তথ্য পাওয়া যায় যে, এই কনটেইনার ডিপো গড়ে ওঠে বাংলাদেশে ও নেদারল্যান্ডস এর দুটি প্রতিষ্ঠানের যৌথ বিনিয়োগে । এখানে অংশীদারি রয়েছে বাংলাদেশের স্মার্ট গ্রুপের । ডিপো তে থাকা হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড নামের রাসায়নিক পদার্থ থেকেই বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে, যা স্মার্ট গ্রুপের আরেক প্রতিষ্ঠান আল রাজী কেমিক্যাল কমপ্লেক্সের।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল আজ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন এবং পরে বেলা তিনটায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বিস্ফোরণে আহত ব্যক্তিদের দেখতে আসেন। এরপর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে জানান যে ,কোনো অপরাধীকে দায়মুক্ত করা হবে না। যারা অপরাধ করেছেন, তার তদন্ত হচ্ছে। তারপর চিহ্নিত হবে এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত বা অবহেলার প্রমানাদি। এরপর এ ঘটনার সঙ্গে যারা দায়ী তাদের চিহ্নিত করে বিচারের মুখোমুখি করা হবে।
এ দিকে সাংবাদিকদের বলেন যাঁরা ভর্তি আছেন, তাঁদের মধ্যে চারজন নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে (আইসিইউ) আছেন বলে জানায় শেখ হাসিনা বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের পরিচালক আবুল কালাম। লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছে তাঁদের একজনকে । বাকিদের অবস্থাও আশঙ্কাজনক।
তিনি আরও জানান যে, রোগীদের চিকিৎসায় ১০ সদস্যের মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে। ঢাকা মেডিকেল থেকে চিকিৎসক এসে তাঁদের দেখে গিয়েছেন ।এখন চট্টগ্রাম মেডিকেলে আছে বার্ন ইনস্টিটিউটের সমন্বয়ক সামন্ত লাল সেনের নেতৃত্বে একটি দল। সেখান থেকে শেখ হাসিনা বার্ন ইনস্টিটিউটে আরও ৭ থেকে ১০ জন রোগী আসার সম্ভাবনা রয়েছে।