নিজস্ব প্রতিবেদক, এস এম শাহনূর – আখাউড়া ডট কম
বহু ভাষাবিদ- মরহুম মৌলানা আবু মিজান মাকসাদ আলী হানাফি মুনইমি বল্লভপুরী(রঃ) এর ব্যবহৃত ১৫০ বছরের পুরনো একটি তরবারি ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের দক্ষিণ মোড়াইলে (পুরাতন কাচারী অফিস ভবন) অবস্থিত ব্রাহ্মণবাড়িয়া জাদুঘরে সংরক্ষণের জন্য হস্তান্তর করা হয়।
গতকাল সোমবার (১৪ ফেব্রুয়ারী, ২০২২) ব্রাহ্মণবাড়িয়া জাদুঘরের অফিসকক্ষে এ হস্তান্তর প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। জাদুঘরের পক্ষে এর প্রধান সমন্বয়ক, লোকজ সংস্কৃতির লেখক ও গবেষক জনাব জহিরুল ইসলাম চৌধুরী স্বপন তরবারিটি গ্রহণ করেন। এটি প্রদান করেন কবি ও গবেষক এস এম শাহনূর। তিনিও শুরু থেকেই ব্রাহ্মণবাড়িয়া জাদুঘরের একজন হিতাকাঙ্ক্ষী হিসেবে নিজেকে নিবেদন করেছেন।
উল্লেখ্য, মরহুম মৌলানা আবু মিজান মাকসাদ আলী হানাফি মুনইমি বল্লভপুরী(রঃ), শায়খুল বাঙ্গাল সৈয়দ আবু মাছাকিন লাহিন্দী আল কাদেরী বল্লভপুরী (রহ.) দুদু মিয়া পীর সাহেবের আব্বাজান।
তিনি ১২৪৭ বাংলা ১লা ভাদ্র মোতাবেক ১৮৪০ ইংরেজি ১৮ আগস্ট বর্তমান কসবা উপজেলার মেহারী ইউনিয়নের অন্তর্গত বল্লভপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ত্রিপুরার ১৭৭তম মহারাজ শ্রী শ্রী বীরেন্দ্র কিশোর মানিক্য বাহাদুরের রাজ দরবারে ১৯১০ থেকে ১৯১৬ পর্যন্ত ৬ বছর মুসলিম কাজির (বিচারক) দায়িত্ব পালন করেন। ১৯১৬ খ্রিস্টাব্দ ২২ মার্চ মোতাবেক ১৩২২ বাংলা ৭ চৈত্র মোতাবেক ১৩২৫ ত্রিপুরাব্দ রোজ রবিবার সন্ধ্যায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। বল্লভপুর গ্রামের কবরস্থানে ওনার মাজার শরীফ রয়েছে। জীবদ্দশায় নিরাপত্তার প্রয়োজনে তিনি হাতের লাঠি সদৃশ খাপের ভিতর রাখা, পিতলের হাতল বিশিষ্ট এ তরবারি সাথে রাখতেন।
কবি ও গবেষক এস এম শাহনূর বলেন, “আমি এ তরবারিটি আমার মামাতো ভাই জনাব আইয়ুব খন্দকার (৫৭) থেকে সংগ্রহ করি। ৩০ বছর আগে আমার বড় মামা মরহুম জামশেদ খন্দকার থেকে শুনেছি এটি ওনার বাবা (আমার নানা) শামসুল হক সোনা মিয়া হাজীর সংগ্রহে রেখেছিলেন। তারও আগে একসময় ওনার দাদা মরহুম মৌলানা আবু মিজান মাকসাদ আলী হানাফি মুনইমি বল্লভপুরী(রঃ) জীবদ্দশায় ব্যক্তিগত নিরাপত্তার প্রয়োজনে এটি সাথে রাখতেন।”
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জাদুঘরের প্রধান সমন্বয়ক জহিরুল ইসলাম চৌধুরী স্বপন বলেন, “এ ধরণের উপকরণ এতদ অঞ্চলের গৌরবময় ইতিহাস ও ঐতিহ্যের অংশ। জাদুঘরে এ তরবারিটি সংরক্ষণের মাধ্যমে একদিকে যেমন অতীতকে জানা হবে, নতুন প্রজন্মের সামনে ভেসে আসবে গুণী জ্ঞানীদের কর্দমময় জীবনের চিত্র। বই অধ্যায়নে যা সম্ভব নয়।” অতঃপর তিনি জেলাবাসীকে তাদের কাছে থাকা অতি পুরাতন ও ঐতিহাসিক উপকরণ জাদুঘরে জমা দিয়ে সহযোগিতা করার আহবান জানান।
আরও পড়ুনঃ ব্রাহ্মণবাড়িয়া (ভাটি অঞ্চলের) জেলার ভূ-প্রকৃতির উৎপত্তি রহস্য
এ সময় ব্রাহ্মণবাড়িয়া ইন্ডিপেন্ডেন্ট স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ মোঃ ইকবাল হোসেন, জাদুঘরের উন্নয়নের সাথে সংশ্লিষ্ট জনাব ফারুক আহমেদ সহ জেলার বীর মুক্তিযোদ্ধা, কবি, লেখক, বল্লভপুর ও কাইতলা গ্রামের বহু প্রবীন ব্যক্তি উপস্থিত ছিলেন।