সারা দেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের বিভিন্ন মন্দিরে হামলা ও প্রতিমা ভাঙচুরের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, যাঁরা মন্দিরে হামলা ও প্রতিমা ভাঙচুরের সঙ্গে জড়িত, যেই রাজনৈতিক দল বা ধর্মের অনুসারী হোক না কেন, তাঁরা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিবিরোধী, বাংলাদেশবিরোধী।
আজ রোববার সন্ধ্যায় রাজধানীর আজিমপুরের ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদ ও মহানগর সার্বজনীন পূজা উদ্যাপন কমিটির সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন নাহিদ ইসলাম। এরপর তিনি শারদীয় শুভেচ্ছা জানাতে দেওয়া বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
বাংলাদেশে যাতে নির্বিঘ্নে ও নিরাপদে পূজা উদ্যাপন করা যায়, সে জন্য সরকারকে সব ধরনের কার্যক্রম হাতে নেওয়ার কথা বলেন নাহিদ ইসলাম। এ ক্ষেত্রে জাতীয় নাগরিক পার্টিও সব ধরনের সহযোগিতা করবে বলে জানান তিনি।
এনসিপির আহ্বায়ক বলেন, বাংলাদেশের সংবিধানে সব সম্প্রদায়ের, সব নাগরিকের মানবাধিকার, নাগরিক অধিকার ও সমান মর্যাদা নিশ্চিত করা হয়নি। তাই অন্তর্ভুক্তিমূলক বাংলাদেশ গঠন করতে সবার সমান মর্যাদা ও অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।
সনাতন ধর্মাবলম্বীরা এক বছর ধরে সরকারের কাছে যেসব দাবিদাওয়া পেশ করেছেন, সেগুলো গুরুত্বসহকারে বিবেচনা এবং যৌক্তিক দাবিগুলো পূরণের কথা বলেন নাহিদ ইসলাম। এনসিপিও দেশের বিভিন্ন সম্প্রদায় বিশেষ করে সনাতন সম্প্রদায়ের দাবিদাওয়া পূরণে কাজ করে যাবে বলে জানান নাহিদ।
এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, স্বাধীনতার ৫০ বছর পার হলেও দেশে গণতন্ত্রের সমস্যা, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট, নাগরিক অধিকার না পাওয়াসহ বিভিন্ন সমস্যা রয়ে গেছে। এসব সমস্যা দূর করেই সামনে এগিয়ে যেতে হবে। রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে থাকলে সব নাগরিকের সমান অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। তবেই বাংলাদেশের সব স্তর থেকে বৈষম্য ও বিভাজন দূর করা যাবে।
বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে বিভাজন ও বৈষম্য সৃষ্টি করার চেষ্টা করা হচ্ছে দাবি করে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, বাংলাদেশে চাকরির ক্ষেত্রে ধর্ম, অঞ্চল বা কোনো পরিচয়ের ভিত্তিতে কোনো বৈষম্য করা চলবে না। মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে চাকরি ও কর্মসংস্থান নিশ্চিত করতে হবে।
নাহিদ ইসলাম আরও বলেন, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোকজন বিচারহীনতার সংস্কৃতির শিকার হয়ে আসছে। সেটি দূর করতে হবে। সংখ্যালঘুদের সম্পত্তি বেদখল পুনরুদ্ধারে কমিশন গঠন করতে হবে—এই দাবির সঙ্গে পূর্ণ সমর্থন রয়েছে এনসিপির। এনসিপির ২৪ দফা কর্মসূচিতেও বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে।
এ সময় আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদের উপদেষ্টা ও গণফোরামের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সুব্রত চৌধুরী, এনসিপির যুগ্ম সদস্যসচিব প্রীতম দাস, গণতান্ত্রিক ছাত্র ঐক্যের যুগ্ম আহ্বায়ক জয় বিশ্বাস প্রমুখ। উপস্থিত ছিলেন মহানগর সার্বজনীন পূজা উদ্যাপন কমিটির সভাপতি জয়ন্ত কুমার দেব।
এর আগে পূজা উদ্যাপন পরিষদ ও সার্বজনীন পূজা উদ্যাপন কমিটির সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ শেষে উপস্থিত সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন নাহিদ ইসলাম। এ সময় তিনি বলেন, জাতীয় নাগরিক পার্টি সারা দেশের সনাতন ধর্মাবলম্বী ও ভক্তদের দুর্গা উৎসবের আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাচ্ছে। সারা দেশে যাতে নির্বিঘ্নে পূজা উদ্যাপিত হয়, সেই নিরাপত্তা যাতে নিশ্চিত করা হয়, সে জন্য সরকারের প্রতি জাতীয় নাগরিক পার্টি আহ্বান জানাচ্ছে।
এনসিপির আহ্বায়ক বলেন, জাতীয় নাগরিক পার্টি যে অন্তর্ভুক্তিমূলক বাংলাদেশ গঠন করতে চায়, সেই বাংলাদেশে সনাতন সম্প্রদায়ের সমান মর্যাদা ও সমান অধিকার যেন নিশ্চিত হয়, সে জন্য এনসিপি কাজ করে যাবে। তিনি বলেন, ‘আমরা আজকে এখানে এসেছি। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের নানা দাবিদাওয়ার কথাও আমরা শুনেছি।’
নাহিদ বলেন, ‘জাতীয় নাগরিক পার্টি আগামী নির্বাচনে প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে অবশ্যই সকল ধর্মের এবং সম্প্রদায়ের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করবে। আমাদের নির্বাচনী ইশতেহারেও বলা হয়েছে, সকল নাগরিকের সমান মর্যাদা, সকল সম্প্রদায়ের সমান অধিকার ও মর্যাদা নিশ্চিত হয়, সেই লক্ষ্যে কাজ করব।’