নিজস্ব প্রতিবেদক, মোঃ সাইফুল আলম – আখাউড়া ডট কম
অনেকেই হয়তো জানেন না কুল্লাপাথর সত্যিই আসলে কি। দেশের আনাচে কানাচে অনেক ঐতিহাসিক স্থান রয়েছে। এইসব জায়গা তরুন প্রজন্মের কাছে অপরিচিত। তেমনি একটি স্মৃতিবিজড়িত স্থান কুল্লাপাথর শহীদ স্মৃতিসৌধ।
কুল্লাপাথর শহীদ স্মৃতিসৌধ (Kullapathar Shahid Sriti Shoudho) বা শুধু কুল্লাপাথরও বলা হয়ে থাকে। এটি বাংলাদেশের ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কসবা উপজেলায় অবস্থিত। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের একটি সমাধিস্থল। এই সমাধিস্থল এর জন্যই এটি অধিক পরিচিত। কসবা উপজেলা ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় অবস্থিত যা বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী উপজেলা। সবচেয়ে বড় বিষয় হল এটি মুক্তিযুদ্ধের সময় ২ নম্বর সেক্টরের আওতায় ছিল এবং মুক্তিযুদ্ধের সময় মুক্তিযোদ্ধা প্রশিক্ষণ ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছিল।
একটি ছোট টিলার উপরে এই সমাধিস্থল অবস্থিত। জানা যায়, প্রশিক্ষণ ক্যাম্প থাকার কারণে এ অঞ্চলটি পাকিস্তান সেনাবাহিনীর অন্যতম লক্ষে্য পরিণত হয়েছিল। এরই ফলশ্রুতিতে অন্যান্য অঞ্চলের চেয়ে এ এলাকায় বেশি যুদ্ধ সংগঠিত হয় এবং বিপুল সংখ্যক মুক্তিযোদ্ধা শাহাদাতবরণ করেন।
এই স্মৃতিসৌধের সবচেয়ে বড় বিষয় হল, এখানকার প্রতিটি কবরের উপরেই লেখা রয়েছে মুক্তিযোদ্ধার নাম এবং ঠিকানা। এখানে দুজন বীরবিক্রম, একজন বীরউত্তম, দুজন বীরপ্রতীক সহ মোট ৪৮ জন শহীদ মুক্তিযোদ্ধার সমাধি রয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের সময় মুক্তিযোদ্ধা আবদুল করিম এবং তার আত্নীয়রা মিলে তার পৈতৃক ভিটায় মুক্তিযোদ্ধাদের লাশ সংগ্রহ করে দাফন করেন। জানা যায়, স্বাধীনতা যুদ্ধের পর ১৯৭২ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া মহকুমা প্রশাসক ও অন্যান্য মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগীতায় এ স্থানটি সংরক্ষণ করা হয়। এছাড়াও রেস্ট হাউস, তোড়ণ এবং পুকুরের পাঁকা ঘাট নির্মাণ করা হয়।
এছাড়া বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধা সংরক্ষন তালিকা, স্থানীয়দের তালিকা ও বাংলাদেশ উইকিপিডিয়া থেকে পাওয়া তথ্য মতে সেখানকার একটি তালিকা পাওয়া যায়। যার মধ্যে রয়েছে কুল্লাপাথরে সমাহিত শহীদদের নাম— সিলেটের হাবিলদার তৈয়ব আলী, ঠাকুরগাঁওয়ের সৈনিক দর্শন আলী, আর কে মিশন রোড ঢাকার মো. জাকির হোসেন ( বীর প্রতীক), ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মো. আবদুল জব্বার (মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে এখনো স্বীকৃতি পাননি), বগুড়ার ল্যান্স নায়েক আবদুস সাত্তার (বীর বিক্রম), কুমিল্লার সিপাহী আক্কাছ আলী, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মো. ফকরুল আলম, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মো. ফারুক আহম্মদ, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মোজাহিদ নুরু মিয়া, ময়মনসিংহের নায়েক মোজাম্মেল হক, নোয়াখালীর নায়েক সুবেদার মো. আবদুল সালাম (বীর বিক্রম), ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মো. নোয়াব আলী, ফরিদপুরের সিপাহী মুসলীম মৃধা, শরিয়তপুরের প্রকৌশলী নজরুল ইসলাম, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মো. আবদুল অদুদ, কুমিল্লার সিপাহী জসিম উদ্দীন, কুমিল্লার মো. আবদুল কাসেম (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী), কুমিল্লার মো. মোশারফ হোসেন, কুমিল্লার নায়েক সুবেদার মইনুল হোসেন (বীর উত্তম) (তার নামে ঢাকা সেনানিবাস এলাকার শহীদ মইনুল সড়কের নামকরণ করা হয়) , চাঁদপুরের সিপাহী মো. নুরুল হক, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মো. আবদুল কাইয়ুম, কুমিল্লার সিপাহী হুমায়ুন কবির, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ল্যান্স নায়েক মো. আ. খালেক, কুমিল্লার ল্যান্স নায়েক আজিজুর রহমান, কুমিল্লার মো. তারু মিয়া, চট্টগ্রামের নায়েক সুবেদার বেলায়েত হোসেন (বীর উত্তম), ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মো. রফিকুল ইসলাম, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মো. মোরসেদ মিয়া, কিশোরগঞ্জের শ্রী আশু রঞ্জন দে, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মো. তাজুল ইসলাম, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মো. শওকত, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মো. আবদুস সালাম সরকার, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মো. আমির হোসেন, চাঁদপুরের মো. জাহাঙ্গীর আলম, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার শ্রী পরেশ চন্দ্র মল্লিক, কুমিল্লার মো. জামাল উদ্দিন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মো. আবদুল আউয়াল, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মো. জাবেদ আহাম্মদ, কুমিল্লার মো. সিরাজুল ইসলাম, কুমিল্লার মো. ফরিদ মিয়া, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মো. মতিউর রহমান, কুমিল্লার মো. সাকিল মিয়া, চাঁদপুরের আনসার ইলাহী বক্স পাটোয়ারী (বীর প্রতীক), ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মো. আবদুর রশিদ, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সিপাহী শহিদুল হক, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সিপাহী আনোয়ার হোসেন, কুমিল্লার সিপাহী মো. আবদুল বারী খন্দকার এবং অজ্ঞাত তিনজন।
যদি কখনো সুযোগ হয় তাহলে ঘুরে আসবেন বাংলাদেশের স্মৃতিবিজড়িত এই কুল্লাপাথর শহীদ স্মৃতিসৌধ থেকে। জেনে আসতে পারেন অনেক তথ্য এবং জাগ্রত করতে পারেন আপনার চেতনাকে। ঢাকা থেকে খুব সহজেই যেতে পারেন এই শহীদ স্মৃতিসৌধে। সরাসরি ট্রেনে বা বাসে আসতে পারেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া অথবা কসবা। আবার ব্রাহ্মণবাড়িয়া নেমে সিএনজি যোগে আসতে পারেন কসবা উপজেলার এই কুল্লাপাথর শহীদ স্মৃতিসৌধ এ।