প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে সুরক্ষায় প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজ হিসেবে ভিন্ন ভিন্ন প্রতিষ্ঠানের তৈরি টিকা নিলে তুলনামূলক বেশি উপকার পাওয়া যায়। আর দুই ডোজ অ্যাস্ট্রাজেনেকা টিকা নেয়ার পরে কেউ যদি বুস্টার হিসেবে অন্য প্রতিষ্ঠানের টিকার তৃতীয় ডোজ নেন, তাহলে আরও বেশি সুরক্ষা পাওয়া যাবে। সম্প্রতি অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির এক গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে।
ফাইজার বা অ্যাস্ট্রাজেনেকার দুটি ডোজে করোনা থেকে বেশি সুরক্ষা মিলছে নাকি আলাদা দুই টিকার সংমিশ্রণে উপকার বেশি তা পরীক্ষা করা হয়েছে কম-কোভ ট্রায়াল নামে ওই গবেষণায়। এর ফলাফলে দেখা গেছে, দুটি ভিন্ন প্রতিষ্ঠানের টিকার সংমিশ্রণেই মানুষের শরীরে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি তৈরি হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই তথ্যের ফলে বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাসের টিকার ব্যবহার আরও সহজ হবে। ইতোমধ্যে কিছু দেশ মিশ্র টিকার ব্যবহার শুরু করেছে।
অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির গবেষণায় ৫০ বছরের বেশি বয়সী ৮৫০ জন স্বেচ্ছাসেবক অংশ নেন। এতে দেখা যায়-
অ্যাস্ট্রাজেনেকার দুই ডোজের তুলনায় দুই ধরনের টিকার সংমিশ্রণে শরীরে বেশি অ্যান্টিবডি তৈরি হয়।
অ্যাস্ট্রাজেনেকা টিকা দেয়ার পর দ্বিতীয় ডোজ হিসেবে ফাইজারের টিকা দিলে তুলনামূলক বেশি অ্যান্টিবডি ও টি-সেল তৈরি হয়। কিন্তু ফাইজারের টিকার পর অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা দিলে ততটা উপকার পাওয়া যায় না।’
তবে ফাইজারের দুই ডোজের পর শরীরে সবচেয়ে বেশি অ্যান্টিবডি তৈরি হতে দেখা গেছে। আর অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার পর ফাইজারের টিকা দেয়া হলে সবচেয়ে বেশি টি-সেল তৈরি হয়েছে।
বিবিসি বাংলার খবর অনুসারে, স্পেন ও জার্মানিতে যারা প্রথম ডোজ হিসেবে অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা নিয়েছেন, তাদের (বিশেষ করে তরুণদের) দ্বিতীয় ডোজ হিসেবে ফাইজার বা মর্ডানার টিকা নেয়ার প্রস্তাব দেয়া হচ্ছে। অবশ্য এর জন্য তারা টিকার কার্যকারিতার চেয়ে বিরল রক্তজমাট সমস্যা এড়ানোতেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে।
অক্সেফোর্ডের প্রধান গবেষক অধ্যাপক ম্যাথিউ স্ন্যাপ বলেছেন, মানুষজনকে এখন যেভাবে একই ধরনের টিকার পরপর দুই ডোজ দেয়া হচ্ছে, এই গবেষণায় সেটিকে খাটো করে দেখানো হয়নি।
তিনি বলেন, আমরা এতদিনে জেনেছি, এই মানের দুটি টিকা মানুষকে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়া বা হাসপাতালে যাওয়া থেকে বাঁচাতে পারে। বিশেষ করে ৮ থেকে ১২ সপ্তাহের ব্যবধানে দেয়া হলে সেটি ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট ঠেকাতেও কার্যকর। এবার নতুন গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, এক্ষেত্রে টিকার মিশ্রণও সমান কার্যকরী।
মহামারি ঠেকাতে জার্মান সরকার ইতোমধ্যে মিশ্র টিকার ব্যবহার শুরু করেছে। দেশটির চ্যান্সেলর অ্যাঞ্জেলা মেরকেল নিজে প্রথমে অ্যাস্ট্রাজেনেকার তৈরি টিকা নিয়েছেন। পরবর্তীতে দ্বিতীয় ডোজের ক্ষেত্রে তিনি মডার্নার তৈরি টিকা গ্রহণ করেছেন। অপরদিকে, যুক্তরাষ্ট্রে ২৮ দিনের ব্যবধানে ফাইজার এবং মডার্নার মিশ্র টিকা দেয়া হচ্ছে। যুক্তরাজ্যেও বিশেষ ক্ষেত্রে মিশ্র টিকায় ছাড় দেয়া হয়েছে। খবর জাগো নিউজ।