সাত দিনের আলটিমেটাম দিয়ে ‘শাটডাউন’ প্রত্যাহার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের, অনড় শিক্ষকেরা

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পোষ্য কোটা পুনর্বহাল এবং সহ-উপাচার্য, প্রক্টরসহ শিক্ষক-কর্মকর্তাদের লাঞ্ছিত করার ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে সাত দিনের সময় বেঁধে (আলটিমেটাম) দিয়ে ‘শাটডাউন’ কর্মসূচি প্রত্যাহার করেছেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তবে শিক্ষকদের পূর্ণদিবস কর্মবিরতি (ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ) অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছে জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরাম।

আজ বুধবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিফলক চত্বরের সামনে কর্মকর্তাদের পক্ষে অফিসার্স সমিতির সভাপতি মোক্তার হোসেন এবং জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরামের সভাপতি অধ্যাপক আবদুল আলিম পৃথকভাবে সাংবাদিকদের ব্রিফিং করে এ কথা বলেন।

শাটডাউন প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়ে মোক্তার হোসেন বলেন, প্রশাসনের আমন্ত্রণে তাঁরা আলোচনায় বসেছিলেন। তারা (প্রশাসন) তাঁদের আশ্বস্ত করে আহ্বান করেছিলেন, প্রশাসন ও একাডেমিক কার্যক্রম সচল রাখার স্বার্থে কয়েক দিন যেন সময় দেওয়া হয়। সেই বিবেচনায় তাঁরা প্রাতিষ্ঠানিক বৈষম্য দূরীকরণ ও ২০ সেপ্টেম্বর সহ-উপাচার্যসহ অন্যদের ওপর ‘সন্ত্রাসী’ হামলার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিচারের জন্য সাত দিনের সময় দিতে চান। সাত কর্মদিবসের মধ্যে ন্যায়বিচার ও প্রাতিষ্ঠানিক অধিকার ফিরিয়ে দেওয়া না হলে তাঁরা বৃহত্তর কর্মসূচি নেবেন।

মোক্তার হোসেন হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘সেই কর্মসূচিতে বিশ্ববিদ্যালয়ে যদি কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা বা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়, সে জন্য প্রশাসনকে এককভাবে দায়ী থাকতে হবে। প্রশাসনের অনুরোধে আজ বেলা একটা থেকে আমাদের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সব শাটডাউন কর্মসূচি স্থগিত ঘোষণা করছি।’

এদিকে শিক্ষক লাঞ্ছনার ঘটনায় বিচার না হওয়া পর্যন্ত পূর্ণদিবস কর্মবিরতি চলবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরামের সভাপতি অধ্যাপক আবদুল আলিম। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘সন্ত্রাসী কার্যক্রমের প্রতিবাদে চার দিন ধরে আমাদের কর্মবিরতি চলছে। আমরা প্রশাসনের ওপর আস্থা রাখার মতো কিছু পাইনি। আমরা সাধারণ শিক্ষকদের প্রতিনিধিত্ব করি এবং সাধারণ শিক্ষকদের ব্যানারেই আন্দোলন করছি। সাধারণ শিক্ষকদের সবাই ওই ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চান। তাঁরা আমাদের সঙ্গে সহমত পোষণ করেছেন এবং এর ফলেই তাঁরা ক্লাস-পরীক্ষা নিচ্ছেন না। সেই দাবির পরিপ্রেক্ষিতেই আমাদের আন্দোলন চলছে, চলবেই।’

আজ সকাল থেকে টানা চতুর্থ দিনের মতো ‘পূর্ণাঙ্গ শাটডাউন’ কর্মসূচি পালন করছিলেন শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এতে কার্যত অচল হয়ে পড়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব কার্যক্রম। এদিকে বেলা ১১টার পর ক্যাম্পাস শাটডাউনের প্রতিবাদে কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে মানববন্ধন করে ইসলামী ছাত্রশিবির। বেলা পৌনে একটার দিকে দুই দাবিতে সাত দিনের আলটিমেটাম দিয়ে শাটডাউনের কর্মসূচি থেকে সরে আসেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। অন্যদিকে শাটডাউনের কর্মসূচিতে অনড় থাকার ঘোষণা দিয়েছে জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরাম।

গত বৃহস্পতিবার ১০ শর্তে পোষ্য কোটা ফিরিয়ে আনে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এর প্রতিবাদে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন শুরু করেন। একপর্যায়ে গত শনিবার জুবেরী ভবনে শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনার পর রোববার জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরাম ও কর্মকর্তারা পোষ্য কোটা পুনর্বহাল এবং শিক্ষক লাঞ্ছনাকারীদের শাস্তির দাবিতে এক দিনের কর্মবিরতি পালন করেন। পরদিন সোমবার থেকে তাঁরা অনির্দিষ্টকালের ‘শাটডাউন’ কর্মসূচি শুরু করেন। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে রোববার বিকেলে জরুরি সিন্ডিকেট সভা হয়। সভায় পোষ্য কোটা পুনর্বহালের সিদ্ধান্ত স্থগিত ও শিক্ষক লাঞ্ছনার ঘটনায় দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করার সিদ্ধান্ত হয়।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন গতকাল মঙ্গলবার অফিসার্স সমিতির প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা সভা করেছে। আজ সকাল ১০টায় উপাচার্য সালেহ্ হাসান নকীব সম্প্রতি স্থায়ীকরণ করা সহায়ক ও সাধারণ কর্মচারীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। সেখানে তাঁদের বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থে কর্মবিরতি থেকে সরে আসার আহ্বান জানানো হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতেই আজ দুপুরে আলটিমেটাম দিয়ে কর্মসূচি স্থগিত করেছেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

Related Posts

About The Author