কক্সবাজারের উখিয়ার বালুখালি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় দুই শিশুসহ ৭ জনের মরদেহ পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন কক্সবাজার দমকল বাহিনীর উপপরিচালক মো. আব্দুল্লাহ। এ ঘটনায় প্রায় ১১ হাজার রোহিঙ্গা বসতি ও শতাধিক স্থানীয়দের ঘর পুড়ে গেছে।
এর আগে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের উখিয়া অংশে নিয়োজিত ১৪ এপিবিএনর অধিনায়ক (পুলিশ সুপার) মো. আতিকুল ইসলাম সোমবার রাত ১০টার দিকে গণমাধ্যমকে তিন শিশুসহ ৮ জন নিহতের খবর জানান।
উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিজাম উদ্দিন আহমেদ রাতে জানান, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ভয়াবহ আগুনে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে অন্তত ১১ হাজার রোহিঙ্গা পরিবারের বসতি পুড়ে গেছে। একইভাবে পুড়ে গেছে শতাধিক বাংলাদেশি পরিবারের বসতবাড়িও। আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য ফায়ার সার্ভিসের পাশাপাশি সেনাবাহিনী ও বিজিবিও বিরামহীন কাজ করে।
সূত্রমতে, সোমবার বিকেল ৪টার দিকে উখিয়ার বালুখালী ৮-ই ও ডাব্লিউ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। তা মুহূর্তে ছড়িয়ে পড়ে পার্শ্ববর্তী ৯ ও ১০ নং রোহিঙ্গা ক্যাম্পেও। সর্বশেষ রাত ১১টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসলেও পুড়ে গেছে প্রায় ১১ হাজারেও বেশি রোহিঙ্গাদের ঝুপড়ি ঘর। এছাড়াও পুড়ে গেছে দেশি বিদেশি বিভিন্ন এনজিও অফিস ও পুলিশ ব্যারাক।
ক্যাম্পে কাজ করা এনজিওদের সমন্বয়কারী সংস্থা ‘ইন্টার সেক্টর কো-অর্ডিনেটর গ্রুপের (আইএসসিজি) ক্যাম্প ভিত্তিক কর্মকাণ্ড তদারকির জন্য তৈরি (১৮ জানুয়ারি) একটি ডাটাবেইজের হিসাব অনুসারে জানা গেছে, বালুখালীর ক্যাম্প ৮-ইতে ঘরের সংখ্যা ৬ হাজার ২৫০ আর লোকসংখ্যা ২৯ হাজার ৪৭২ জন, ৮-ডব্লিউ ক্যাম্পে বাড়ি ৬ হাজার ৬১৩টি আর লোকসংখ্যা ৩০ হাজার ৭৪৩ জন, ক্যাম্প ৯-তে বাড়ি ৭ হাজার ২০০টি আর লোকসংখ্যা ৩২ হাজার ৯৬৩ জন এবং ক্যাম্প ১০-তে বাড়ি ৬ হাজার ৩২০টি আর লোকসংখ্যা ২৯ হাজার ৭০৯ জন।
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান গফুর উদ্দিন চৌধুরী জানিয়েছেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আগুনের ঘটনায় হাজার হাজার রোহিঙ্গা বালুখালী কাসেম মিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে আশ্রয় নিয়েছে। আশ্রয় নেয়া এসব রোহিঙ্গাদের অনেকের স্বজন নিখোঁজ রয়েছে। এছাড়াও স্থানীয় বাংলাদেশি অন্তত দেড় শতাধিক পরিবারের বসতি পুড়ে গেছে।
উখিয়া ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন কর্মকর্তা মো. এমদাদুল হক জানান, প্রাণান্ত চেষ্টার পর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। আগুনে কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা বলা মুশকিল। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ অনেক। অন্তত দেড়-দুই কিলোমিটার এলাকা আগুনের লেলিহান শিখায় ধ্বংস হয়ে গেছে।
কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মো. হাসানুজ্জামান রাতে জানিয়েছেন, আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে ফায়ার সার্ভিসের দমকল বাহিনী ও সেনাবাহিনীসহ ৭টি ইউনিট কাজ করতে বেশ বেগ পেয়েছে।
উখিয়ার বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পের মাঝি মো. হামিদ জানান, আগুনে তার নিয়ন্ত্রণাধীন প্রায় ৫ শতাধিক ঘরসহ অন্তত এক হাজারেরও বেশি ঝুপড়ি ঘর পুড়ে গেছে। পুড়ে গেছে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের সবচেয়ে বড় মার্কেট বালুখালী বলিবাজার। এতে অর্ধ শতাধিক কোটি টাকা মূল্যের মালামাল পুড়ে গেছে।
উখিয়া থানার ওসি (তদন্ত) গাজী সালাউদ্দিন জানিয়েছেন, আগুনের সূত্রপাত নিয়ে এখনো তেমন বিশ্বাসযোগ্য তথ্য পাওয়া যায়নি। ঘটনাস্থলে গিয়ে রোহিঙ্গাদের কাছে জানতে চাইলে তারাও নানা তথ্য দিচ্ছে। এমনকি রোহিঙ্গারাই একে অপরের বিরুদ্ধে দোষারোপ করছে।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মো. সামছুদ্দৌজা জানান, উখিয়ার বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আকস্মিক অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়ে তা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। কী পরিমাণ রোহিঙ্গাদের বসতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তা এখনও নির্ণয় করা যায়নি।
তিনি আরও জানান, ক্যাম্পে আগুন লাগার পর থেকে ফায়ার সার্ভিসের উখিয়া স্টেশনের দুইটি ইউনিটের পাশাপাশি টেকনাফের ২টি, কক্সবাজারের ২টি এবং রামুর ১টি ইউনিট রাত ৯টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন। তবে আগুনের সূত্রপাতের কারণ এখনও নিশ্চিত হওয়া সম্ভব হয়নি।