আখাউড়া সীমান্তবর্তী হাওড়া নদী ও রেলসেতুর বিশেষত্ব

নিজস্ব প্রতিবেদক, মোঃ সাইফুল আলম – আখাউড়া ডট কম


বাংলাদেশ এবং ভারতের একটি আন্তঃসীমান্ত নদী হল হাওড়া নদী। এটি বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্ব অঞ্চলের ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার একটি নদী। বলা হয়ে থাকে এটি পশ্চিম ত্রিপুরার একটি নদী আবার বলা হয়ে থাকে এটি আখাউড়া বা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নদী।

মূলত এই নদীর দৈর্ঘ্য বাংলাদেশ অংশে ১০ কিলোমিটার। যার গড় প্রস্থ ৪০ মিটার এবং নদীটির প্রকৃতি সরলাকার। ভারতের ত্রিপুরা অংশে প্রায় ৫৩ কিলোমিটার। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড বা “পাউবো” কর্তৃক হাওড়া নদীর প্রদত্ত পরিচিতি নম্বর দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের নদী নং ২৪।

ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের পাহাড়ি অঞ্চল থেকে উৎপত্তি লাভ করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আখাউড়া উপজেলা দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। তারপর এটি কিছুদুর প্রবাহিত হয়ে আখাউড়া উপজেলার তিতাস নদীতে পতিত হয়েছে। এই নদীর ত্রিপুরা অংশের দৈর্ঘ্য ৫৩ কিলোমিটার।

আখাউড়া এলাকা ও গঙ্গাসাগর এলাকার জল নিষ্কাশন এবং চাষাবাদে অনেক উপকারি বন্ধু এই হাওড়া নদী। সিলেট চট্টগ্রাম রেলপথের আখাউড়া-কসবা হল পূর্বাঞ্চল। এখানে রয়েছে হাওড়া নদী ও রেলসেতু। হাওড়া নদীর উপর গঙ্গাসাগর এলাকায় রেলসেতুটিকে গঙ্গাসাগর ব্রিজও বলা হয়। রেলের দুই পাশেই রয়েছে প্রচুর পরিমানে জমি। এসব আবাদ যোগ্য জমিতে চাষাবাদ করার জন্য বর্ষা মৌসুমে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখে এই হাওড়া নদী।

হাওড়া নদীটির প্রস্থ গঙ্গাসাগর সেতু এলাকায় ৪০ মিটার এবং গভীরতা ৩.৫ মিটার। হাওড়া নদীর অববাহিকার আয়তন ৭০ বর্গকিলোমিটার। নদীটিতে সারাবছর পানিপ্রবাহ থাকে না। তবে জোয়ারভাটার প্রভাব আছে এই নদীতে। জুলাই-আগস্টে বেশি পানিপ্রবাহের সময় প্রবাহের পরিমাণ দাঁড়ায় ৯৮ ঘনমিটার/সেকেন্ড। সাধারণত বন্যা হয় না। এই নদীর উপর আখাউড়া রেলসেতু রয়েছে।

এই নদীর অববাহিকায় কিছু ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কারখানা রয়েছে। পাহাড়ি ত্রিপুরা থেকে শুরু হয়ে আগরতলা ছুঁয়ে বাংলাদেশ ঢুকে তিস্তায় গিয়ে মিশে গিয়েছে হাওড়া। পণ্য পরিবহণ থেকে পানীয় জল সব চাহিদাই পূরণ করে নদীটি। তবে নদীর অববাহিকার বেশ কিছু অংশে ক্ষুদ্র শিল্প থাকার ফলে নদীতে গিয়ে মিশেছে শিল্প-বর্জ্য। আগরতলা শহরকে বন্যা থেকে বাঁচাতে হাওড়ার গতিপথ পাল্টে দেওয়া হয়েছে। পানির প্রবাহ এবং নদীর প্রশস্ততা কমেছে। এই নদীর দুই তীর থেকে বিভিন্ন দুরত্তে সাতটি ঝরার মাধ্যমে নদীতে পানি আসে। এই পানিই হাওড়া নদীকে বেগবতী রাখে। সবচেয়ে বড় ঝরার নাম হল ঘোড়ামারা ঝরা, যায় দৈর্ঘ্য ২৪.৮৭ কিলোমিটার।

ত্রিপুরা রাজ্যের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি দফতরের মহাকাশ পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের প্রধান সায়েন্টিফিক অফিসার নটরাজ দত্তবাবুর কথায়, ‘‘শহরকে উন্নত করতে হবে এটা যেমন ঠিক, তেমনি নদীকেও রক্ষা করতে হবে| হাওড়ার গতি পথ পাল্টে দেওয়ার ফলে জলের সঙ্গে পলি, বালি এবং অন্য কঠিন বর্জ্য নদীতে জমতে জমতে এর প্রশস্ততা অনেক কমে গিয়েছে, আরো কমছে দিনে দিনে। ফলে কমে যাচ্ছে জল প্রবাহ। তাই বলা যায় এই নদীর গুরুত্ব কম না।

Related Posts

About The Author

Add Comment