নিজস্ব প্রতিবেদক, মোঃ সাইফুল আলম – আখাউড়া ডট কম
বিশ্ব মিডিয়ায় স্থান পেল ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সূর্যমুখী। কৃষকদের মুখে সূর্যমুখী ফুলের হাসি ফুটে উঠছে সদরসহ বিভিন্ন উপজেলায়। বিশেষ করে সদর ও বিজয়নগর উপজেলায় অভূতপূর্ব সাফল্য চোখে পড়ছে। সূর্যমুখী ফুলের হাসি দেখে দিন দিন এই জেলায় চাষের আগ্রহ বাড়ছে।
সরকারি সহায়তা, সহজে চাষযোগ্য এবং অল্প জমিতে অধিক লাভের আশায় এখন অনেকেই সূর্যমুখী চাষ প্রকল্পে আগ্রহ হচ্ছে। আলু, ধনিয়া, টমেটো, ঢ্যাঁড়শ চাষ বাদ দিয়ে এখন অনেকেই নতুন এই ফসলে ঝুকছেন। উপজেলা কৃষি অফিসারের পরামর্শে ও অন্যদের দেখে উৎসাহিত হয়ে এ বছর সূর্যমুখী ফুলের চাষ করছেন অনেকে। সূর্যমুখী একধরনের একবর্ষী ফুলগাছ। সূর্যমুখী গাছ লম্বায় ৩ মিটার (৯.৮ ফু) হয়ে থাকে, ফুলের ব্যাস ৩০ সেন্টিমিটার (১২ ইঞ্চি) পর্যন্ত হয়। এই ফুল দেখতে কিছুটা সূর্যের মত এবং সূর্যের দিকে মুখ করে থাকে বলে এর এরূপ নামকরণ।
আখাউড়ার উত্তরে সিংগারবিল ইউনিয়ন। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এখানকার সূর্যমুখী চাষ প্রকল্পের কথা। প্রায় ৭ বিঘা নিজস্ব জমির উপর সখ করে সূর্যমুখী চাষ করেন বাবুল এলাহি। হাইসান-৩৩ জাতের সূর্যমুখী চাষ করে সাফল্য লাভ করেন তিনি। বাবুল এলাহি জানান, সরকারি একটি কর্মশালায় এর বিষয়ে জেনে আমার অনেক ভালো লাগে। আমি পরীক্ষামূলকভাবে সিংগারবিল ইউনিয়নে প্রথমবারের মতো সূর্যমুখী চাষ করি। এটি অনেক আনন্দের বিষয় যে, আমি এখন প্রতিদিন এই প্রোজেক্টে না আসলে ভালো লাগে না। প্রতিদিন শত শত মানুষ জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে বাগান পরিদর্শন করতে আসছে। অনেকেই আবার জানতে চাচ্ছেন কিভাবে তারা চাষ করতে পারবে এই বিষয়ে।
সূর্যের হাসি হেসেছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ভাদুঘর গ্রামের চাষি শাহানুর ভূঁইয়া। এই এলাকায় সবার আগে তিনিই এই চাষ প্রকল্প নিয়ে এসেছেন। ভাদুঘর গ্রামের সূর্যমুখী ফুলের চাষি শাহানুর ভূঁইয়া বলেন, আগে জমিতে বিভিন্ন ধরনের সবজির চাষ করতাম। গত বছর প্রথমবারের মতো ৪ বিঘা জমিতে সূর্যমুখী ফুলের চাষ করেছিলাম। তখন বেশ ভালোই ফলন হয়েছিল। তাই এ বছর ৭ বিঘা জমিতে চাষ করেছি। গতবার ফেনী জেলার সোনাগাজীর কারখানাতে তেল তৈরি করা হয়েছিল। এবার স্থানীয়ভাবে সরিষার তেল যে মেশিনে ভাঙানো যায় সেখানে সূর্যমুখী ফুলের বীজও ভাঙানো হবে।
তিনি আরো বলেন, কৃষি অফিস থেকে তাদের বিনামূল্যে সূর্যমুখীর বীজ ও সার দেয়া হয়েছে। এরই মধ্যে প্রতিটি গাছে ফুল এসেছে। আশাকরি এবারো সূর্যমুখী চাষে সফলতা আসবে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার কৃষি অফিসার মুনসী তোফায়েল হোসেন বলেন, গত বছর প্রথমবারের মতো সদর উপজেলার ১১টি ইউনিয়ন ও পৌর এলাকার ৮০ বিঘা জমিতে ৮০ জন কৃষক সূর্যমুখী চাষ করেছিলেন। গত বছর সূর্যমুখী চাষে বাম্পার ফলনে কৃষকরা উদ্বুদ্ধ হয়ে এ বছর সদর উপজেলায় ৬৫ হেক্টর (৬০০ বিঘা) জমিতে আবাদ করেছেন, যা গত বছর থেকে প্রায় তিন গুণ বেশি।
আশা করা যাচ্ছে এই জেলার বিভিন্ন প্রান্ত সূর্যের হাসি আরও বেশী ফুটে উঠবে। আরও আশার বানী হল কৃষকদের এখন অন্য এলাকায় যেতে হবে না। সরিষার তেল যে মেশিনে প্রস্তুত করা হয়, সে মেশিনেই সূর্যমুখী ফুলের বীজ ভাঙানো যাবে। এতে করে কৃষকরা আরো বেশি লাভবান হবেন। কৃষি অফিস থেকে সূর্যমুখী চাষে কৃষকদের সার্বিক সাহায্য-সহযোগিতা করা হচ্ছে। এটি সত্যি অসাধারন একটি দৃশ্য। দিগন্ত জুড়ে সূর্যের হাসি। ট্রেন থেকে বা বাস থেকেও চোখে পড়ছে এই নয়নাভিরাম সৌন্দর্যের প্রতীক। সারি সারি ফুলের হাসি আর তাইতো সোশ্যাল মিডিয়ার কল্যাণে চারদিকে ছড়িয়ে পড়ছে। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিশ্ব মিডিয়ায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সূর্যমুখী ফুলের হাসি।