বিশ্ববাজারে কমায় দেশে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলপিজি) দাম সমন্বয় করেছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। বেসরকারি খাতে ১২ কেজি সিলিন্ডারের এলপিজি মূসকসহ ৯৭৫ টাকা থেকে কমিয়ে ৯০৬ টাকা করা হয়েছে। এটি সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য, আগামী ১ মে থেকে কার্যকর হবে।
আর উৎপাদন পর্যায়ে ব্যয় পরিবর্তন না হওয়ায় রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানির এলপিজির দাম পরিবর্তন করা হয়নি। সরকারি সাড়ে ১২ কেজি এলপিজির দাম আগের ৫৯১ টাকাই থাকছে। গাড়িতে ব্যবহৃত এলপিজির নতুন দাম প্রতি লিটার ৪৪ টাকা ৭০ পয়সা। এর আগে এটি ছিল ৪৭ টাকা ৯২ পয়সা।
আজ বৃহস্পতিবার অনলাইন সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন দাম ঘোষণা করে জ্বালানি খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিইআরসি। এর আগে গত ১২ এপ্রিল দেশে প্রথমবারের মতো এলপিজির দাম নির্ধারণ করে এ সংস্থা। ওই সময় বলা হয়, বিশ্ব বাজারের সঙ্গে মিল রেখে প্রতি মাসে দাম সমন্বয় করা হবে।
জানা গেছে, এলপিজি তৈরির মূল উপাদান প্রপেন ও বিউটেন বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করা হয়। প্রতি মাসে এলপিজির এ দুই উপাদানের মূল্য প্রকাশ করে সৌদি আরামকো। এটি কার্গো মূল্য (সিপি) নামে পরিচিত। এ সৌদি সিপি ভিত্তি মূল্য ধরে দেশে এলপিজির দাম সমন্বয় করেছে বিইআরসি। গত তিন মাস ধরে বিশ্ববাজারে এলপিজির দাম কমছে।
সংবাদ সম্মেলনে বিইআরসির চেয়ারম্যান মো. আবদুল জলিল বলেন, সৌদি সিপির ভিত্তিতেই দাম সমন্বয় করা হয়েছে। তাই এর বাইরে অন্য কিছু বিবেচনা করা হয়নি। প্রপেন ও বিউটেনের প্রতি টন সৌদি সিপি গড়ে ৫৪০ দশমিক ৫০ মার্কিন ডলার ধরে হিসাব করা হয়েছে। এর সঙ্গে সম্পর্কিত মূসক ও ডলারের বিপরীতে টাকার মান ধরে আনুপাতিক হারে পরিবর্তন হয়েছে।
এক প্রশ্নের জবাবে চেয়ারম্যান বলেন, লোয়াবের ধারণা ঠিক নয়, তাদের প্রত্যাশিত বিষয়গুলো বিবেচনা করা হয়েছে। এটি ইতিমধ্যেই তাদের বলা হয়েছে। আগামী ৬ মে তাদের সঙ্গে আলোচনা হবে।
দাম কার্যকর করা নিয়ে বিইআরসির চেয়ারম্যান বলেন, বাস্তবায়ন হয়নি এটা যেমন বলা যাবে না, ঠিক তেমনি শতভাগ বাস্তবায়ন হয়েছে, তা–ও বলা যাবে না। আদেশ বাস্তবায়নে কমিশন অবশ্যই ব্যবস্থা নেবে।
দাম ঘোষণার আদেশে বলা হয়, দাম সমন্বয়ে গঠিত বিইআরসির কমিটি ২৫ এপ্রিল কমিশনের কাছে প্রস্তাব করে। এরপর ২৮ এপ্রিল অনলাইনে শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। এতে নতুন দাম চূড়ান্ত করা হয়।
দাম ঘোষণার সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বিইআরসির সদস্য মোহম্মদ আবু ফারুক, মকবুল ই ইলাহি চৌধুরী, মোহাম্মদ বজলুর রহমান, মো. কামরুজ্জামান। শুরুতে সবাইকে স্বাগত জানিয়ে স্বাগত বক্তব্য দেন কমিশনের সচিব রুবিনা ফেরদৌসী।
গত ডিসেম্বরে বিইআরসিতে দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব করে এলপিজি সরবরাহকারী কোম্পানিগুলো। তাদের প্রস্তাব মূল্যায়ন করে বিইআরসি গঠিত কারিগরি মূল্যায়ন কমিটি। এরপর গত ১৪ জানুয়ারি এলপিজিরি দাম নির্ধারণ নিয়ে গণশুনানি করে বিইআরসি।
জানা গেছে, বেসরকারি খাতে এলপিজির ব্যবসা শুরু হয় ২০ বছর আগে। কয়েক বছর ধরে বাজারে এর চাহিদা ও ব্যবসার বিস্তৃতি ব্যাপক বাড়ছে। কিন্তু দীর্ঘ সময়ে গ্রাহকের জন্য এলপি গ্যাসের দাম নির্ধারণ করতে পারেনি বিইআরসি। পেট্রোলিয়ামজাত পদার্থের খুচরা মূল্য নির্ধারণে একটি প্রবিধানমালার খসড়া তৈরি হয় ২০১২ সালে, যা আজ পর্যন্ত চূড়ান্ত হয়নি। প্রবিধানমালা ছাড়াই উচ্চ আদালতের আদেশে বাধ্য হয়ে দাম নির্ধারণের প্রক্রিয়া শুরু করে বিইআরসি।
ক্যাবের রিট আবেদনের ভিত্তিতে এক মাসের মধ্যে গণশুনানির মাধ্যমে দাম পুনর্নির্ধারণ করে প্রতিবেদন দাখিল করতে গত ২৫ আগস্ট নির্দেশ দেন উচ্চ আদালত। নির্ধারিত ওই সময়ের মধ্যে দাম নির্ধারণ করতে না পারায় আদালতের কাছে ক্ষমা চেয়ে সময় বাড়িয়ে নেয় বিইআরসি। জনস্বার্থে ২০১৬ সালে রিট আবেদনটি করেছিল ক্যাব। খবর: প্রথম আলো