ভারতীয় চাল-পেঁয়াজে নেই আগ্রহ, বাড়তি দামেই নিত্যপণ্য

আমদানি হলেও ভারতীয় চাল ও পেঁয়াজে ক্রেতাদের আগ্রহ নেই বলে জানিয়েছেন খুচরা বিক্রেতারা। আড়তের পাইকারি ব্যবসায়ীরাও অভিন্ন তথ্য দিচ্ছেন। তারা বলছেন, দীর্ঘদিন আমদানি বন্ধ থাকায় দেশি পণ্যে অভ্যস্ত হয়ে যাওয়ায় প্রতিবেশী দেশটি থেকে আনা অতিপ্রয়োজনীয় চাল ও পেঁয়াজের দাম কিছুটা কম হওয়ার পরও তা কিনতে তেমন আগ্রহ দেখাচ্ছেন না ভোক্তারা। এতে খুচরা বিক্রেতাদের কাছে পণ্য দুটি সচরাচর পাওয়া যাচ্ছে না।

বৃহস্পতিবার রাজধানীর বাবুবাজার, নয়াবাজার ও কারওয়ান বাজার ঘুরে ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে। রাজধানীর সবচেয়ে বড় পাইকারি চালের আড়ত বাবুবাজারের ইসলাম রাইস এজেন্সির আমজাদ হোসেন আমার দেশকে বলেন, দেশি চালের চেয়ে ভারতীয় নাজিরশাইল চাল কেজিতে ৭ থেকে ১০ টাকা এবং স্বর্ণা-৫ বা পাইজাম কেজিতে ৫ টাকা পর্যন্ত কম দামে বিক্রি হচ্ছে। দেশি চালের দাম কমেনি; তবে আমদানির পর ঊর্ধ্বমুখী বাজার অনেকটাই স্থিতিশীল রয়েছে।

এই ব্যবসায়ীর মতে, বর্তমানে ভারতীয় নাজিরশাইল চাল ৬৮ থেকে ৭২ টাকা এবং স্বর্ণা-৫ বা পাইজাম ৫২ থেকে ৫৭ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এই চালের দাম কম হলেও ক্রেতারা সেভাবে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না।

কারওয়ান বাজারের চাঁদপুর রাইস এজেন্সির বাচ্চু মিয়া বলেন, এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে যে, কম দামেও মানুষ এখন আর ভারতীয় পণ্য কিনতে চাচ্ছে না। আমদানি চালের দাম কেজিতে ৫ থেকে ৭ টাকা কম হলেও আগ্রহ দেখাচ্ছেন না ক্রেতারা। এছাড়া এখনো দেশি চাল আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে। তবে আমদানি অব্যাহত থাকলে দেশি চালের দামও কমতে পারে। মিল মালিকরা ঘাপটি মেরে আছেন, তারাও ভারতীয় চাল কিনছেন না। তবে চালের সরবরাহ বাড়লে এক সময় মিল মালিকরাও চাল কম দামে বিক্রি করতে বাধ্য হবেন।

তেজগাঁও এলাকার সবচেয়ে বড় চালের পাইকারি ব্যবসায়ী আবু ওসমান আমার দেশকে বলেন, দেশি চাল আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে। তবে আমদানির ফলে মিল মালিকরা প্রতিদিন যে হারে চালের দাম বাড়িয়ে আসছিলেন, তা থেমে গেছে। অর্থাৎ, চালের বাজার এখন স্থিতিশীল আছে।

তবে রনি রাইস এজেন্সির স্বত্বাধিকারী মনিরুল ইসলাম জানান, মাঝারি জাতের পাইজাম চালের দাম বস্তায় ১০০ টাকা পর্যন্ত কমেছে। চালের দাম আরো কমতে পারে। পাইকারি বাজারে ভারতীয় নাজিরশাইল কেজিতে ৫ থেকে ৭ টাকা কমে ৫০ কেজির বস্তা বিক্রি হচ্ছে তিন হাজার ৭৫০ টাকা, পাইজাম দুই হাজার ৮৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সিদ্ধ চালের দাম কিছুটা নিম্নমুখী হলেও সব ধরনের আতপ চালের দাম বস্তাপ্রতি ২০০ থেকে ৪০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।

একই এলাকার খুচরা বিক্রেতা নাসির বলেন, আগের বাড়তি দামেই চাল বিক্রি হচ্ছে; দাম কমেনি। আমদানি চালের দাম কিছুটা কম থাকলেও ক্রেতার চাহিদা না থাকায় তিনি দোকানে রাখেন না।

এদিকে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি হলেও বাজারে তেমন প্রভাব নেই। ভারতীয় এই পণ্যেও ক্রেতাদের তেমন আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন খুচরা বিক্রেতা এরফান। তিনি বলেন, দুবছর ধরে দেশি পেঁয়াজ খেয়ে মানুষ অভ্যস্ত হয়ে গেছে, তাই ভারতীয় পেঁয়াজ কিনতে চাচ্ছে না। দেশি পেঁয়াজ যেখানে ৭০ থেকে ৮০ টাকার মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে, সেখানে ভারতীয় জাত কেন ৭৫ টাকায় কিনবে মানুষ। সেগুলোর স্বাদও কম। এছাড়া গত বছরের জুলাই বিপ্লবের পর থেকে দেশে মানুষের ভারতীয় পণ্যের প্রতি আগ্রহ কমে এক ধরনের নেতিবাচক মনোভাব তৈরি হয়েছে।

কারওয়ান বাজারের পাইকারি বিক্রেতা শফিকুল ইসলাম আমার দেশকে বলেন, আমদানি করা পেঁয়াজে ক্রেতার আগ্রহ না থাকায় খুচরা বিক্রেতারাও নিচ্ছেন না। আড়তদারদের অনেকে ভারতীয় পেঁয়াজ কিনে লোকসান গুনছেন। সব মিলেই ভারতীয় পেঁয়াজের বাজার নষ্ট হয়ে গেছে।

কাঁচাবাজারে সব ধরনের সবজি আগের সপ্তাহের মতো বাড়তি দামেই বিক্রি হচ্ছে। সবজি বিক্রেতারা বলছেন, এখন মৌসুমের একেবারে শেষ সময় চলছে। এখন সরবরাহ কমে দাম বেড়েছে। নতুন করে সবজি বাজারে ওঠার আগ পর্যন্ত এ অবস্থা চলতে পারে।

সবজির বাজারে আলু আর পেঁপের দামই একটু কম; অন্য সব সবজিই আগের সপ্তাহের মতো বাড়তি দামেই বিক্রি হচ্ছে। ৭০ থেকে ৮০ টাকার নিচে কোনো সবজি নেই বললেই চলে। সপ্তাহের ব্যবধানে আমদানিকৃত কাঁচামরিচের দাম বেড়ে ১৬০ থেকে ১৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া আদার কেজিতে ৬০ থেকে ৮০ টাকা পর্যন্ত কমে ১৪০ থেকে ১৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর নয়াবাজার ও কারওয়ান বাজারে সবজির বাজারে আগের সপ্তাহের মতো প্রতি কেজি পেঁপে ৩০ থেকে ৪০, আলু ২০ থেকে ২৫, কচুর লতি ৭০ থেকে ৮০, বরবটি ৮০ থেকে ১০০, ঝিঙা ৭০ থেকে ৮০, পটোল ৭০ থেকে ৮০, ধুন্দল ৭০, টমেটো ১২০ থেকে ১৫০, মিষ্টি কুমড়া ৫০ থেকে ৬০, করলা ৮০ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া প্রতি কেজি ঢেঁড়স ৯০ থেকে ১০০, শসা ৬০-৭০, বেগুন (গোল) ১২০ থেকে ১৬০, বেগুন (লম্বা) ৮০-৯০, কচুরমুখী প্রতি কেজি ৫০ থেকে ৬০ এবং গাজর প্রতি কেজি ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

আগের সপ্তাহের তুলনায় ডিমের দাম কিছুটা কমে ডজন ১২৫ থেকে ১৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে পাড়া-মহল্লার দোকানে ১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ব্রয়লার মুরগির দাম কিছুটা কমে ১৬০ থেকে ১৭০, সোনালি ২৮০ থেকে ৩২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে গরু ও খাসির মাংসের দাম স্থিতিশীল; প্রতি কেজি গরুর মাংস ৭০০-৭৫০ ও খাসির মাংস এক হাজার ১০০ টাকা থেকে এক হাজার ২০০ টাকা। এছাড়া সব ধরনের মাছ বাড়তি দামেই বিক্রি হচ্ছে।

Related Posts

About The Author