শাহাদৎ হোসেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া | তারিখ: ২৮-০৩-২০১৩
ছবি: প্রথম আলো
‘আমরা তিন বন্ধু মোটরসাইকেলে করে যাচ্ছিলাম। চোখের সামনে হাতির শুঁড়ের মতো কী যেন একটা ভয়ংকর শব্দে আকাশ থেকে নেমে এক মিনিটেই সবকিছু ধ্বংস করে দিল। …মোটরসাইকেল যেন চলছিল না। মনে হচ্ছিল, ওই কালো জিনিসটা আমাদের তার দিকে টানছে। অস্বাভাবিক গরম বাতাসে বারুদের মতো গন্ধ পাচ্ছিলাম।’
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ২২ মার্চ আঘাত হানা ভয়াবহ টর্নেডোর শিহরণ জাগানো এ বর্ণনা দিয়েছেন শহরের কাউতলী এলাকার যুবক কাজী মেসবাহ উদ্দিন। বিরল ধরনের এই প্রাকৃতিক দুর্যোগের ধ্বংসাত্মক ক্ষমতা কেবল নিজের চোখে দেখেই ক্ষান্ত হননি পেশায় ব্যবসায়ী মেসবাহ। বিপদের ঝুঁকি নিয়ে কাছাকাছি থেকে মুঠোফোনে ভিডিও করেছেন বিচিত্র সেই দৃশ্যের। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুক ও কয়েকটি টিভি চ্যানেলে টর্নেডোর যে দৃশ্য দেখা গেছে, সে ছবি তাঁরই ধারণ করা।
ভয়ংকর সেই অভিজ্ঞতা: মেসবাহ উদ্দিন জানান, গত শুক্রবার তিনি বন্ধু খোকনের ফুফুর বাড়ি আখাউড়ার খড়মপুর গ্রামে বেড়াতে গিয়েছিলেন। সঙ্গে ছিলেন দুই বন্ধু খোকন ও শাহীন।
মেসবাহ প্রথম আলোকে বলেন, ‘তখন প্রায় পাঁচটা বেজে ১০ মিনিট। মোটরসাইকেলে করে আমরা শহরে ফেরার উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। সদর উপজেলার কোড্ডা গ্রাম পার হওয়ার পর দেখি, পশ্চিম আকাশের একটা অংশ কেমন যেন কালো হয়ে আছে। বন্ধু খোকনকে বললাম, দেখ তো, আকাশে মেঘের মধ্যে বাজপাখির মতো কী যেন একটা দেখা যাচ্ছে। কিছুক্ষণ পরই দেখি, হাতির শুঁড়ের মতো কী যেন একটা আকাশ থেকে নেমে আসছে। নিচের অংশটা সরু আর ওপরের অংশটা মোটা। বিস্ময়ের সঙ্গে দেখলাম, এটা লাফিয়ে লাফিয়ে নিচে নামছে। শুঁড়টা পরপর তিনটা লাফ দিল। মনে হলো, তৃতীয় লাফে এটা নিচে মাটির সঙ্গে লেগে ধ্বংসযজ্ঞ শুরু করেছে। অন্য দুই বন্ধু দূরে সরে যেতে চাইলেও আমি রাজি হলাম না। তবে চিনাইর মোড় নামের একটি জায়গায় পৌঁছে একটা চায়ের দোকানে বসে নজর রাখলাম।’
মেসবাহ জানান, কিছুক্ষণ পর আবার মোটরসাইকেলে উঠে তাঁরা সুলতানপুরের দিকে রওনা দেন। তিনি চলন্ত মোটরসাইকেলে দুজনের মাঝখানে বসে মুঠোফোনের ক্যামেরায় রেকর্ড করতে লাগলেন টর্নেডোর ছবি। দেখা গেল, কালো শুঁড়টা যতই কাছে আসছে, ততই ভয়ংকর শব্দ হচ্ছে। ভয় জাগানো সেই দৃশ্যের বর্ণনা দিয়ে মেসবাহ বলেন, ‘যতই সামনের দিকে যাচ্ছিলাম, বাইক যেন চলছিল না। মনে হচ্ছিল, শুঁড়টা আমাদের তার দিকে টানছে। আমাদের কাছ থেকে এটা ছিল আধা কিলোমিটারের মতো দূরে। তিনজনই প্রচণ্ড ভয় পেলাম।’
হঠাৎ করেই একটি স্মৃতি মনে পড়ে যায় মেসবাহর। ১০-১২ বছর আগে তাঁর বাবা এ রকম এক টর্নেডোর সময় আজান দিয়েছিলেন। তিনিও সুলতানপুর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট এলাকায় পৌঁছে মোটরসাইকেল থেকে নেমে আজান দেন। একটু পর মেসবাহ দেখেন, কালো শুঁড়মতো জিনিসটা পুব আকাশে সাদা হয়ে এসেছে। সাদা অংশটি ক্রমেই খড়মপুরের দিকে তিতাস নদীতে গিয়ে মিশে গেছে।
মুঠোফোনের ক্যামেরায় ছবি তোলা প্রসঙ্গে মেসবাহ বললেন, ‘আমি নিজের চোখে এর আগে কখনো এমন কিছু দেখিনি। মাঝেমধ্যে ন্যাশনাল জিওগ্রাফি চ্যানেলে এ রকম কিছু দেখতাম। তাই এই দৃশ্য ধারণ করে রাখার কথা মাথায় আসে। পরে ওই ভিডিও ফেসবুকে আপলোড করি।’
আবহাওয়াবিদদের ব্যাখ্যা: আকৃতির কারণে আবহাওয়াবিদেরাও টর্নেডোকে হাতির শুঁড়ের সঙ্গে তুলনা করে থাকেন। টর্নেডো যখন ভূমিতে আঘাত করে, তখন তা চোখের পলকে একের পর এক জনপদ ধ্বংস করে দেয়।
আবহাওয়াবিদেরা বলেন, বাংলাদেশে মৌসুমি বায়ু আসার আগের সময়টাতে, অর্থাৎ মার্চ-এপ্রিলের দিকে আকাশে বজ্রমেঘ তৈরি হয়। জলীয় বাষ্প ওই মেঘের সংস্পর্শে গেলে তা আরও ওপরে উঠে যায়। সেখানে শীতল বায়ুর সংস্পর্শে এসে ভারী হয়ে আবার নিচের দিকে আসে। এভাবে ওঠা-নামার ফলে তা শক্তি অর্জন করে একসময় বায়ু ও জলীয় বাষ্পসহ চোঙার (ফানেল) আকৃতি নিয়ে প্রচণ্ড শক্তিতে ঘূর্ণিসহ নিচে নেমে আসে।
ঝড় পূর্বাভাস কেন্দ্রের আবহাওয়াবিদ এস এম কামরুল হাসান এ ব্যাপারে প্রথম আলোকে বলেন, প্রাথমিক ধারণা অনুযায়ী, টর্নেডোটি ঊর্ধ্বাকাশের ১৫-২০ কিলোমিটার ওপর থেকে নিচে নেমে আসে। ঝড় পূর্বাভাস কেন্দ্র সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশে এই প্রথম টর্নেডোর ভিডিওচিত্র পাওয়া গেল।
শাহাদৎ হোসেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া | তারিখ: ২৮-০৩-২০১৩
ছবি: প্রথম আলো
‘আমরা তিন বন্ধু মোটরসাইকেলে করে যাচ্ছিলাম। চোখের সামনে হাতির শুঁড়ের মতো কী যেন একটা ভয়ংকর শব্দে আকাশ থেকে নেমে এক মিনিটেই সবকিছু ধ্বংস করে দিল। …মোটরসাইকেল যেন চলছিল না। মনে হচ্ছিল, ওই কালো জিনিসটা আমাদের তার দিকে টানছে। অস্বাভাবিক গরম বাতাসে বারুদের মতো গন্ধ পাচ্ছিলাম।’
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ২২ মার্চ আঘাত হানা ভয়াবহ টর্নেডোর শিহরণ জাগানো এ বর্ণনা দিয়েছেন শহরের কাউতলী এলাকার যুবক কাজী মেসবাহ উদ্দিন। বিরল ধরনের এই প্রাকৃতিক দুর্যোগের ধ্বংসাত্মক ক্ষমতা কেবল নিজের চোখে দেখেই ক্ষান্ত হননি পেশায় ব্যবসায়ী মেসবাহ। বিপদের ঝুঁকি নিয়ে কাছাকাছি থেকে মুঠোফোনে ভিডিও করেছেন বিচিত্র সেই দৃশ্যের। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুক ও কয়েকটি টিভি চ্যানেলে টর্নেডোর যে দৃশ্য দেখা গেছে, সে ছবি তাঁরই ধারণ করা।
ভয়ংকর সেই অভিজ্ঞতা: মেসবাহ উদ্দিন জানান, গত শুক্রবার তিনি বন্ধু খোকনের ফুফুর বাড়ি আখাউড়ার খড়মপুর গ্রামে বেড়াতে গিয়েছিলেন। সঙ্গে ছিলেন দুই বন্ধু খোকন ও শাহীন। মেসবাহ প্রথম আলোকে বলেন, ‘তখন প্রায় পাঁচটা বেজে ১০ মিনিট। মোটরসাইকেলে করে আমরা শহরে ফেরার উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। সদর উপজেলার কোড্ডা গ্রাম পার হওয়ার পর দেখি, পশ্চিম আকাশের একটা অংশ কেমন যেন কালো হয়ে আছে। বন্ধু খোকনকে বললাম, দেখ তো, আকাশে মেঘের মধ্যে বাজপাখির মতো কী যেন একটা দেখা যাচ্ছে। কিছুক্ষণ পরই দেখি, হাতির শুঁড়ের মতো কী যেন একটা আকাশ থেকে নেমে আসছে। নিচের অংশটা সরু আর ওপরের অংশটা মোটা। বিস্ময়ের সঙ্গে দেখলাম, এটা লাফিয়ে লাফিয়ে নিচে নামছে। শুঁড়টা পরপর তিনটা লাফ দিল। মনে হলো, তৃতীয় লাফে এটা নিচে মাটির সঙ্গে লেগে ধ্বংসযজ্ঞ শুরু করেছে। অন্য দুই বন্ধু দূরে সরে যেতে চাইলেও আমি রাজি হলাম না। তবে চিনাইর মোড় নামের একটি জায়গায় পৌঁছে একটা চায়ের দোকানে বসে নজর রাখলাম।’
মেসবাহ জানান, কিছুক্ষণ পর আবার মোটরসাইকেলে উঠে তাঁরা সুলতানপুরের দিকে রওনা দেন। তিনি চলন্ত মোটরসাইকেলে দুজনের মাঝখানে বসে মুঠোফোনের ক্যামেরায় রেকর্ড করতে লাগলেন টর্নেডোর ছবি। দেখা গেল, কালো শুঁড়টা যতই কাছে আসছে, ততই ভয়ংকর শব্দ হচ্ছে। ভয় জাগানো সেই দৃশ্যের বর্ণনা দিয়ে মেসবাহ বলেন, ‘যতই সামনের দিকে যাচ্ছিলাম, বাইক যেন চলছিল না। মনে হচ্ছিল, শুঁড়টা আমাদের তার দিকে টানছে। আমাদের কাছ থেকে এটা ছিল আধা কিলোমিটারের মতো দূরে। তিনজনই প্রচণ্ড ভয় পেলাম।’
হঠাৎ করেই একটি স্মৃতি মনে পড়ে যায় মেসবাহর। ১০-১২ বছর আগে তাঁর বাবা এ রকম এক টর্নেডোর সময় আজান দিয়েছিলেন। তিনিও সুলতানপুর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট এলাকায় পৌঁছে মোটরসাইকেল থেকে নেমে আজান দেন। একটু পর মেসবাহ দেখেন, কালো শুঁড়মতো জিনিসটা পুব আকাশে সাদা হয়ে এসেছে। সাদা অংশটি ক্রমেই খড়মপুরের দিকে তিতাস নদীতে গিয়ে মিশে গেছে।
মুঠোফোনের ক্যামেরায় ছবি তোলা প্রসঙ্গে মেসবাহ বললেন, ‘আমি নিজের চোখে এর আগে কখনো এমন কিছু দেখিনি। মাঝেমধ্যে ন্যাশনাল জিওগ্রাফি চ্যানেলে এ রকম কিছু দেখতাম। তাই এই দৃশ্য ধারণ করে রাখার কথা মাথায় আসে। পরে ওই ভিডিও ফেসবুকে আপলোড করি।’
আবহাওয়াবিদদের ব্যাখ্যা: আকৃতির কারণে আবহাওয়াবিদেরাও টর্নেডোকে হাতির শুঁড়ের সঙ্গে তুলনা করে থাকেন। টর্নেডো যখন ভূমিতে আঘাত করে, তখন তা চোখের পলকে একের পর এক জনপদ ধ্বংস করে দেয়।
আবহাওয়াবিদেরা বলেন, বাংলাদেশে মৌসুমি বায়ু আসার আগের সময়টাতে, অর্থাৎ মার্চ-এপ্রিলের দিকে আকাশে বজ্রমেঘ তৈরি হয়। জলীয় বাষ্প ওই মেঘের সংস্পর্শে গেলে তা আরও ওপরে উঠে যায়। সেখানে শীতল বায়ুর সংস্পর্শে এসে ভারী হয়ে আবার নিচের দিকে আসে। এভাবে ওঠা-নামার ফলে তা শক্তি অর্জন করে একসময় বায়ু ও জলীয় বাষ্পসহ চোঙার (ফানেল) আকৃতি নিয়ে প্রচণ্ড শক্তিতে ঘূর্ণিসহ নিচে নেমে আসে।
ঝড় পূর্বাভাস কেন্দ্রের আবহাওয়াবিদ এস এম কামরুল হাসান এ ব্যাপারে প্রথম আলোকে বলেন, প্রাথমিক ধারণা অনুযায়ী, টর্নেডোটি ঊর্ধ্বাকাশের ১৫-২০ কিলোমিটার ওপর থেকে নিচে নেমে আসে। ঝড় পূর্বাভাস কেন্দ্র সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশে এই প্রথম টর্নেডোর ভিডিওচিত্র পাওয়া গেল।