আখাউড়া সীমান্তে কমেছে ভ্রমণ কর, ১৩ কোটি ৯১ লাখ থেকে ৬ কোটি ১ লাখ

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশ-ভারতের যাত্রীদের যাতায়াত উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের তুলনায় ২০২৪-২৫ অর্থবছরে যাত্রীদের ভ্রমণকর থেকে রাজস্ব আদায় দ্বিগুণের বেশি কমেছে। একই সময়ে আমদানি-রপ্তানি কমেছে।

ইমিগ্রেশন পুলিশ চেকপোস্ট সূত্রে জানা গেছে, আখাউড়া আন্তর্জাতিক ইমিগ্রেশন পুলিশ চেকপোস্ট দিয়ে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৬০ হাজার ৪৫২ জন যাত্রী ভারতে ভ্রমণ করেছেন। এই প্রক্রিয়ায় ভ্রমণকর থেকে সরকারের আয় হয়েছে মাত্র ৬ কোটি ১ লাখ ৭০ হাজার। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ১ লাখ ৩৯ হাজার ১৫৪ জন যাত্রী আখাউড়া দিয়ে ভারতে গিয়েছেন। ভ্রমণকর থেকে সরকারের আয় হয়েছে ১৩ কোটি ৯১ লাখ ৫২ হাজার ৫০০ টাকা; অর্থাৎ ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ভ্রমণকর আদায় হয়েছে আগের অর্থবছরের অর্ধেকেরও কম।

এ ছাড়া ২০২৪–২৫ অর্থবছরে ভারত থেকে ৪০ হাজার ৫০৯ জন যাত্রী বাংলাদেশে এসেছেন। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এসেছেন ৬৫ হাজার ৮৬৭ জন।

আখাউড়া আন্তর্জাতিক ইমিগ্রেশন পুলিশ চেকপোস্টের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আবদুস সাত্তার প্রথম আলোকে বলেন, ভিসা জটিলতায় আখাউড়া সীমান্ত দিয়ে যাত্রী পারাপার কমেছে। আগের মতো এখন আর বাংলাদেশিদের ভিসা দেওয়া হচ্ছে না। ফলে যাত্রী পারাপার কমেছে এবং রাজস্ব আদায়ে তার প্রভাব পড়েছে।

২০২৪-২৫ অর্থবছরে আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে পণ্য আমদানি হয়েছে ১৫৮ টন এবং রপ্তানি হয়েছে ৪৪ হাজার ৩২২ টন পণ্য। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে পণ্য আমদানি হয়েছে ৩৮ হাজার ৭৮৩ টন ও রপ্তানি ৫৪ হাজার ৪২২ টন।

আখাউড়া স্থলবন্দর সূত্রে জানা গেছে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে স্থলবন্দর দিয়ে ৭ কোটি ৩১ লাখ ৮২ হাজার ৭৫৯ টাকার পণ্য আমদানি হয়েছে। এই আমদানি থেকে ৪ কোটি ১৬ লাখ ৮৪ হাজার ৬১৯ টাকার রাজস্ব আদায় হয়েছে। কিন্তু পরিমাণগত দিক থেকে তা অনেক কম; এই সময়ে বন্দর দিয়ে মাত্র ১৫৮ দশমিক ৯১ টন জিরা, ডাল ও কাজুবাদাম আমদানি হয়েছে।

২০২৩-২৪ অর্থবছরে স্থলবন্দর দিয়ে ৭ কোটি ৫ হাজার ২০৩ দশমিক ৯ টাকার পণ্য আমাদানি হয়েছে। এই আমদানি থেকে রাজস্ব আদায় হয়েছে ৪ কোটি ৬৮ লাখ ৩০ হাজার ৫৪৬ টাকার। এই সময় বন্দর দিয়ে ৩৮ হাজার ৭৮৩ দশমিক ৫ টন পেয়াঁজ, আদা, জিরা ও পাথর আমদানি হয়েছে। দেখা যাচ্ছে, ২০২৪–২৫ অর্থবছরে বেশি টাকার পণ্য আমদানি হলেও পরিমাণ ও রাজস্ব আয় কমেছে।

২০২৪-২৫ অর্থবছরে বন্দর দিয়ে ৫১৪ কোটি ৩৪ লাখ ২৪ হাজার ৫৯ টাকা মূল্যের ৪৪ হাজার ৩২২ দশমিক শূন্য ৯ টন পণ্য রপ্তানি হয়েছে। রপ্তানি করা পণ্যের মধ্যে ছিল সিমেন্ট, তাজা মাছ, শুঁটকি, পাথর, বর্জ্য তুলা, ম্যাঙ্গো ফ্রুট ড্রিংকস, প্লাস্টিকের আসবাব, মেলামাইনসামগ্রী, পিভিসি পাইপ, পিভিসি দরজা, থ্রেসিং মেশিন ও ডিফরমেট বার। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৪২৭ কোটি ৮৮ লাখ ৭২ হাজার ৪৩০ টাকার মোট ৫৪ হাজার ৪৪২ দশমিক ২২ টন পণ্য রপ্তানি হয়েছে।

আখাউড়া স্থলবন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সহসভাপতি ও মিতু এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী নিছার উদ্দিন ভূঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, ভারতের বিধিনিষেধের কারণে রপ্তানি বাণিজ্যে প্রভাব পড়েছে। এটি শতভাগ রপ্তানিমুখী বন্দর। তারপরও আগে যা কিছু আমদানি হতো, গত অর্থ বছরে তা একেবারে কমে গেছে। বর্তমানে বন্দর দিয়ে মাছ, আটা, ময়দা, সিমেন্ট, মশারি রপ্তানি করা হচ্ছে। ভারতে নিষিদ্ধ নয়—এমন পণ্য রপ্তানি করার বিষয়ে আলোচনা হচ্ছে। তবে বন্দরের ব্যবসা-বাণিজ্যের অবস্থা মোটেও ভালো নয়।

আখাউড়া স্থলবন্দরের ও কাস্টমসের তথ্য অনুযায়ী, গত ৯ অর্থবছরে স্থলবন্দর দিয়ে রপ্তানি হয়েছে ৪ হাজার ৪১ কোটি ৬৬ লাখ ১৬ হাজার ৫৭৪ টাকার পণ্য এবং আমদানি হয়েছে ৩৭৪ কোটি ২৫ লাখ ২০ হাজার ৫২০ টাকার পণ্য।

আখাউড়া আন্তর্জাতিক ইমিগ্রেশন পুলিশ চেকপোস্ট সূত্রে জানা গেছে, আখাউড়া দিয়ে ভারত যাতায়াতে আগে যাত্রীদের ৫০০ টাকা ভ্রমণকর দিতে হতো। কিন্তু তা বাড়িয়ে এখন ১ হাজার টাকা করা হয়েছে। গত অর্থবছরে ভ্রমণকর থেকে সরকার রাজস্ব আদায় করেছে ১৫ কোটি ১২ লাখ ৯১ হাজার টাকা।

১৯৯৪ সালে এই বন্দর দিয়ে আমদানি-রপ্তানি শুরু হয়। আখাউড়া মূলত রপ্তানিমুখী স্থলবন্দর। বন্দর দিয়ে পণ্য আমদানি হয়, কিন্তু রপ্তানির তুলনায় অনেক কম।

Related Posts

About The Author