এক বছরের বেশি সময় ধরে কারাবন্দী আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী (মানিক) মামলা পরিচালনার জন্য আইনজীবীর ফি দিতে পারছেন না। এরই মধ্যে তিনি তাঁর ল চেম্বারের সব বই বিক্রি করে দিয়েছেন। এ কথা বলেছেন শামসুদ্দিন চৌধুরীর আইনজীবী মোরশেদ হোসেন।
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) একটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদনের শুনানি থাকায় আজ সোমবার সকালে কারাগার থেকে অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরীকে ঢাকার আদালতে আনা হয়। তাঁকে বহনকারী নীল রঙের একটি প্রিজন ভ্যান সকাল ৯টা ৪৫ মিনিটের দিকে ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতের সামনের চত্বরে আসে।
শামসুদ্দিন চৌধুরী প্রিজন ভ্যান থেকে নামলে দুজন পুলিশ সদস্য তাঁর দুই হাত ধরে ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতের হাজতখানায় নিয়ে যান। পরে হাজতখানার ভেতরের একটি কক্ষে তাঁকে রাখা হয়। হাজতখানার ভেতরে থাকা একটি মাদুরে তিনি বসে পড়েন।
বেলা সাড়ে ১১টার দিকে শামসুদ্দিন চৌধুরীকে হাজতখানা থেকে বের করে আনা হয়। তখন দেখা যায়, অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরীর দুই হাত পেছনে নিয়ে পরিয়ে দেওয়া হয়েছে হাতকড়া। বুকে বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট আর মাথায় পুলিশের হেলমেট।
নিচতলা থেকে হাঁটিয়ে শামসুদ্দিন চৌধুরীকে দোতলায় আদালত কক্ষে নেওয়া হয়। তাঁকে রাখা হয় আসামির কাঠগড়ায়। কাঠগড়ায় তোলার পর পুলিশ তাঁর মাথা থেকে হেলমেট খুলে ফেলে। শরীর থেকে খুলে ফেলা হয় বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট। হাতকড়াও খুলে ফেলেন পুলিশ সদস্যরা। এ সময় শামসুদ্দিন চৌধুরী কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে থাকেন। কিছুক্ষণ পরপর তিনি ঢাকার মহানগর দায়রা জজ ও উপস্থিত আইনজীবীদের দেখতে থাকেন। একপর্যায়ে দুদকের মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন করেন পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) তরিকুল ইসলাম। তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘মাননীয় আদালত, অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিকের বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়–বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা হয়েছে। মামলায় তাঁর বিরুদ্ধে ৫ কোটি ৩৯ লাখ টাকার জ্ঞাত আয়–বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে। দুদকের পক্ষ থেকে এ মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন করছি।’
দুদকের পিপি তরিকুল ইসলাম যখন আদালতে এসব বক্তব্য রাখছিলেন, তখন শামসুদ্দিন চৌধুরী কোনো কথা বলেননি। তাঁর পক্ষে কোনো আইনজীবীও আদালতে কথা বলেননি। পরে দুদকের মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার দেখানোর আদেশ দেন আদালত।
এ সময় অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি শামসুদ্দীন চৌধুরীকে আইনজীবী মোরশেদ হোসেনের সঙ্গে কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে কথা বলতে দেখা যায়। এর কিছুক্ষণ পর আবার তাঁর দুই হাত পেছনে নিয়ে হাতকড়া পরিয়ে দেয় পুলিশ। এরপর তাঁকে কাঠগড়া থেকে আদালতের সামনের বারান্দায় নিয়ে আসা হয়। মাথায় তাঁর পুলিশের হেলমেট, বুকে বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট, দুই হাত পেছনে, পরানো হাতকড়া। পরে তাঁকে আবার ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতের হাজতখানায় নিয়ে রাখা হয়।
এ সময় আইনজীবী মোরশেদ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মানিক অর্থকষ্টে ভুগছেন। ইতিমধ্যে তিনি তাঁর ল চেম্বারের সব বই বিক্রি করে দিয়েছেন। মামলা পরিচালনা করার জন্য আইনজীবীকে যে ফিস দিতে হয়, সেটি তিনি দিতে পারছেন না।’
আইনজীবী মোরশেদ হোসেন বলেন, এক বছরের বেশি সময় ধরে কারাগারে আছেন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি শামসুদ্দীন চৌধুরী মানিক। একের পর এক মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার দেখানো হচ্ছে।
কলা, পাউরুটি ও খেজুর
দুপুর ১২টা। অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি শামসুদ্দীন চৌধুরীকে হাজতখানার কক্ষে নেওয়া হয়। আবার তিনি হাজতখানায় বিছানো মাদুরে হাঁটু গেড়ে বসে পড়েন। পরে তিনি কারাগার থেকে নিয়ে আসা একটি কলা, পাউরুটি ও দুটি খেজুর খান। এ সময় ওই কক্ষে বসে ছিলেন আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য আবদুস সালাম মুর্শেদী ও ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক দিলীপ কুমার আগরওয়ালা। শামসুদ্দীন চৌধুরীর পাশাপাশি আবদুস সালাম মুর্শেদী ও দিলীপ কুমার আগরওয়ালাও হাজতখানার ভেতরে বসে রুটি, কলা ও খেজুর খান।
বেলা দুইটার পর হাজতখানা থেকে প্রথমে বের করে আনা হয় অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি শামসুদ্দীন চৌধুরীকে। তখনো তাঁর দুই হাত পেছনে হাতকড়া পরানো অবস্থায় দেখা যায়। মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে ছিলেন তিনি। তাঁর পেছনে দাঁড়িয়ে ছিলেন আবদুস সালাম মুর্শেদী ও দিলীপ কুমার আগরওয়ালা। তাঁদের প্রত্যেকের দুই হাত ছিল পেছনে, পরানো হাতকড়া। প্রত্যেকে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে ছিলেন। এরপর পুলিশ তাঁদের আদালত চত্বরে রাখা প্রিজন ভ্যানের দিকে নিয়ে যেতে থাকে। প্রথমে অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি শামসুদ্দীন চৌধুরীর দুই বাহু ধরে প্রিজন ভ্যানের ভেতরে তোলেন পুলিশ সদস্যরা। পরে প্রিজন ভ্যানের ভেতরে ওঠেন সালাম মুর্শেদী ও দিলীপ কুমার আগরওয়ালা।
প্রিজন ভ্যানের ভেতরে দেখা যায়, একটি লোহার বেঞ্চে পাশাপাশি বসে আছেন তিনজন। বেলা আড়াইটার দিকে তাঁদের বহনকারী প্রিজন ভ্যানটি হুইসেল বাজিয়ে কেরানীগঞ্জে কেন্দ্রীয় কারাগারের উদ্দেশে রওনা হয়।