নিজস্ব প্রতিবেদক, মোঃ সাইফুল আলম – আখাউড়া ডট কম
বর্তমান সময়ে ছেলেদের পাশাপাশি মেয়েরাও অনেক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রন করছেন। সমান তালে সাইকেল, বাইক ও গাড়ি চালাচ্ছেন। এমনটা শহরে বেশী দেখা গেলেও পিছিয়ে নেয় গ্রামের মেয়েরা। নবীনগরে দলবেঁধে প্রত্যন্ত গ্রাম অঞ্চলের মেয়েরা বাইসাইকেল চালিয়ে বিদ্যালয়ে আসতে দেখা যাচ্ছে।
দেশের অন্যান্য এলাকার মতো ব্রাহ্মণবাড়িয়াও পিছিয়ে নেই। জেলার নবীনগর উপজেলার শ্যামগ্রামে সকাল ৯টা বাজতেই দলবেঁধে প্রত্যন্ত গ্রাম অঞ্চলের মেয়েরা বাইসাইকেল চালিয়ে বিদ্যালয়ে আসতে শুরু করে। শিক্ষার আলোয় আলোকিত হতে সামাজিক সব বাঁধা অতিক্রম করে তারা এখন নিয়মিত বিদ্যালয়ে আসে।
উপজেলার শ্যামগ্রাম ইউনিয়নের বেশ কয়টি গ্রামের মেয়েরা দলবেঁধে বাল্যবিবাহ, ইভটিজিং, নারী নির্যাতনকে পরোয়া না করে শ্যামগ্রাম মোহিনী কিশোর স্কুল অ্যান্ড কলেজের শতাধিক ছাত্রী বাইসাইকেল চালিয়ে স্কুলে আসা-যাওয়া করে। ক্লাস শুরু হওয়ার আগে, টিফিন পিরিয়ডে বা ছুটির সময় এমন মনোরম দৃশ্য প্রতিনিয়ত চোখে পড়ে। শুধু শিক্ষার আলো পেতে প্রতিদিন ৪-৫ কিলোমিটার দূর থেকে সাইকেলে যাতায়াত করে মেয়েরা। বিশেষ করে শান্তিপুর, নাছিরাবাদ, নোয়াগ্রাম, শ্রীঘর, রসুল্লাবাদ, বানিয়াচং, কুড়িনালসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রতিদিন তারা বাইসাইকেল চালিয়ে স্কুলে আসেন।
এলাকাবাশিও খুশি মনে তা গ্রহন করছেন। ১৯’শ সালের দিকে বিদ্যালয়টি স্থাপিত হয়ে আজও জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে যাচ্ছে। বর্তমান গভর্নিংবডির সভাপতি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. খলিলুর রহমানের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ২০১৮ সালে প্রতিষ্ঠানটিকে স্কুল থেকে কলেজে রূপান্তরিত করা হয়েছে। বর্তমানে শিক্ষার্থী সংখ্যা দুই হাজারের অধিক। যার মধ্যে বেশিরভাগই মেয়ে শিক্ষার্থী। বিদ্যালয়টিতে শিক্ষক রয়েছেন মোট ৩৪ জন।
এক সময় স্কুলে ছাত্রীদের উপস্থিতি বেশ কম ছিল। দূরত্ব আর সামাজিক অবস্থার কারণে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মেয়ে নিয়মিত স্কুলে অনুপস্থিত থাকত। এ পরিস্থিতিকে জয় করতে গভর্নিংবডির সভাপতির উদ্যোগে মেয়েদেরকে বাইসাইকেল বিনামূল্যে প্রদান করা হয়। দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী সুমি আক্তার নামে এক শিক্ষার্থী জানায়, ‘আমার বাড়ি স্কুল থেকে দুই কিলোমিটার দূরে। প্রতিদিন বাইসাইকেল চালিয়ে স্কুলে যাতায়াত করি। প্রথম প্রথম সমস্যা হতো, কিন্তু এখন কোনো সমস্যা হয় না।
আরও পড়ুনঃ ঠান্ডাজনিত কারণে আবারো আখাউড়ায় বাড়ছে শিশু রোগী
নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী তানজিনা আক্তার জানায়, ‘আগে হেঁটে স্কুলে আসতে অনেক সময় লাগত। তাই নিয়মিত স্কুলে আসা হতো না। এখন বাইসাইকেল নিয়ে আসার কারণে অনেক সময় বেঁচে যায়। টিফিনের সময় বাড়ি গিয়ে খেয়ে আবার সহজেই স্কুলে আসতে পারি। প্রশাসন তৎপর থাকায় রাস্তা-ঘাটে কেউ উত্যক্ত করার সাহস পায় না।’
অধ্যক্ষ মো. মোস্তাক আহাম্মদ বলেন, গভর্নিংবডির সভাপতি মহোদয় শিক্ষায় মেয়েদের উদ্বুদ্ধ করতে ছাত্রীদেরকে বিনামূল্যে সাইকেল প্রদান করেছেন। এ ব্যাপারে বিদ্যালয়টির বর্তমান গভর্নিংবডির সভাপতি ও গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. খলিলুর রহমান বলেল, এখন মেয়েরা বাইসাইকেল চালিয়ে বিদ্যালয়ে আসে। সাইকেলগুলো সংরক্ষিত রাখার জন্য স্ট্যান্ড তৈরি করা হয়েছে। ‘সাইকেলে আসা-যাওয়া করা ওদের জন্য অনেক সহজ। আমরাও সাইকেলে আসতে ওদের উৎসাহিত করি। কারণ একসঙ্গে দল বেঁধে এলে নিরাপত্তা নিয়ে ভয় থাকে না। ছাত্রীদের আসা-যাওয়ার পথে কেউ কটুক্তি করলে শক্ত হাতে সামাজিকভাবে তা নিরসন করা হয়।তাছাড়া মেয়েরাও এখন প্রতিবাদ করতে শিখেছে। এবং আমি আশাকরি উপজেলার অন্যন্য বিদ্যালয় গুলিও অনুসরন করবে।