নিজস্ব প্রতিবেদক, মোঃ সাইফুল আলম – আখাউড়া ডট কম
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগরে এআরডি’র (একটি মানবাধিকার ও উন্নয়ন সংস্থা) আয়োজনে উবিনীগ ও নারী প্রাণবৈচিত্র রক্ষা নেটওয়ার্কের সহযোগীতায় বাস্তবায়িত ইকো ফেমিনিজম প্রকল্পের আওতায় খাবারে পাত্র হিসেবে প্লাষ্টিক ও পলিথিন ব্যবহারের ক্ষতিকারক প্রভাব” – ব্যবহারে মাটির পণ্য- স্বাস্থ্য রক্ষা হবো ধন্য” শীর্ষক প্রতিপাদ্য নিয়ে এক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।
শনিবার (২০ জানুয়ারী) ব্রাহ্মণবাড়িয়া বিজয়নগর উপজেলার শিঙ্গারবিলে খাবারের পাত্র হিসেবে প্লাষ্টিক ও পলিথিন ব্যবহারের ক্ষতিকারক প্রভাব ও মাটির পাত্র সুফল” শীর্ষক উদ্বোদ্বকরণ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সভায় শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন সভার সঞ্চালক ও এআরডি’র জুনিয়র অফিসার তাকমিনা আক্তার। তিনি তার শুভেচ্ছা বক্তব্যে বলেন, প্লাষ্টিক ও পলিথিন ব্যবহারের কারণে আমরা প্রতি নিয়তই নানান সমস্যার সম্মুখিন হচ্ছি। প্লাষ্টিক ব্যবহারে কোন উপকার নেই বরং ক্ষতির সম্ভাবনাই বেশি।
এআরডি’র প্রধান উপদেষ্টা মোহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান রেজভী উপস্থিত সকলকে কর্মশালায় অংশগ্রহন করার জন্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তিনি তাঁর সভাপতির বক্তব্যে বলেন, আমাদের দেশ থেকে দিন দিন খাবারের পাত্র হিসেবে মাটির পাত্রের ব্যবহার হারিয়ে যাচ্ছে। আজকাল পরিবেশের ক্ষতিকারক প্লাষ্টিককে প্রাধান্য দিয়ে টেলিভিশনে বিজ্ঞাপণের মাধ্যমে আরো বেশি করে প্রমোশন করছে। অথচ, প্লাষ্টিক ব্যবহারে মানব জীবনে যে কি পরিমাণ ক্ষতি হয় তা যদি সাধারণ মানুষ জানত তবে এই মূহুর্ত থেকে প্লাষ্ঠিকের পাত্র বর্জন করত।
তিনি প্লাষ্টিকের চায়ের কাপে চা পান করাকে উল্লেখ করে বলেন, প্লাষ্টিকের কাপে চা পান করা, জেনে শুনে বিষ পান করার শামিল। প্লাষ্টিক সামগ্রী ব্যবহার থেকে বিরত থাকতে সবার নিকট অনুরোধ জানিয়ে প্লাষ্টিক পরিবেশের ক্ষতির কারণ বলেও মন্তব্য করেন।
সিংগারবিলের শিবনগর (পালপাড়া) পাড়ার জনগোষ্ঠিরা এআরডি’র সহযোগীতায় সরকারের কাছে জোর দাবি জানান, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তাদেরকে যদি সার্বিকভাবে সহযোগীতা করেন তবে নিশ্চয় দেশের সর্বত্র মাটির পাত্রকে খাবারের পাত্র হিসেবে পৌছিয়ে দিতে পারবে বলে মনে করেন।
পালপাড়া বাসী সকলে একযোগে, এক বাক্যে প্লাষ্টিকের পাত্রকে বর্জন করার ঘোষনা দেন এবং সকলের কাছে মাটির পাত্রকে ব্যবহার করার অহবান করেন।
সিংগারবিল ইউপি’র সংরক্ষিত আসনের মহিলা মেম্বার মোছাম্মদ সুহেদা খাতুন বলেন, আমরা আজ থেকে প্লাষ্টিকের পাত্র বর্জন ঘোষনা করলাম। ওয়ার্ড মেম্বার মোঃ আঃ রশিদ বলেন, কেমিক্যাল মিশ্রিত যে সমম্ত পলিথিন বানানো ও প্লাষ্টিকের পণ্য বানানো হয় আজ থেকে এ জাতীয় সমস্ত কিছু বর্জন ঘোষনাসহ মাটির পাত্রকে খাবারের পাত্র হিসেব ব্যবহারের অঙ্গিকার করেন।
সিংগারবিল বাজার কমিটির সভাপতি আবুল ফায়েজ ভূইয়া প্লাষ্টিকের সকল প্রকার পণ্য বর্জন করার ঘোষনার সাথে সাথে আজ থেকে অন্যান্যদেরও প্লাষ্টিক ব্যবহার না করার জন্য সচেতন করবেন এবং তিনি তারঁ নিজ উদ্দোগে পাড়ায় পাড়ায় সেমিনারের আয়োজন করবেন বলেও ঘোষনা দেন।
আরও পড়ুনঃ ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আইনজীবী সমিতির নতুন সভাপতি তানভীর, সম্পাদক বাবুল
এআরডি’র প্রধান উপদেষ্টা মোহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমানের সভাপতিত্বে ইকো- ফেমিনিজম প্রকল্পের আওতায় “খাবারের পাত্র হিসেবে প্লাষ্টিক ও পলিথিন ব্যবহারের ক্ষতিকারক প্রভাব” শীর্ষক সেমিনার আয়োজনে পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিদর্শক মোঃ জুবায়ের হোসেন প্রধান অতিথির বক্তব্যে বলেন, আমরা নিজেরাই পলিথিন বা প্লাষ্টিক ব্যবহারের চাহিদা তৈরী করছি। আজকাল আমরা বাজারে যাওয়ার সময় বাড়ি থেকে ব্যাগ না নিয়ে যাওয়ার ফলে বাজার থেকে সদাই করার পর প্লাষ্টিকের ব্যাগে করে নিয়ে আসতে হয়। প্লাষ্টিকের পাত্রে যদি গরম খাবার রাখা হয় তবে মনে রাখতে হবে যে, ঐ পাত্রে রাখা খাবারের সাথে প্লাষ্টিকে থাকা কিছু কেমিক্যাল যা খাবারের সাথে মুখে চলে যায়, যার দরুন শ্বাসকষ্ট, এলার্জি সহ ক্যান্সার হয় এবং এতে করে অনেক মানুষ মারা যাচ্ছে।
তাই এ মুহূর্ত থেকে সবাইকে অনুরোধ করব যেন খাবার পাত্র হিসেবে প্লাষ্টিক নয় বরং মাটির পাত্রকে গ্রহন করে। যেখানে থাকবেনা কোন রোগ বালাইযের সম্ভানা। তিনি উপস্থিত পালপাড়ার সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলেন আপনারা যদি বিভিন্ন পাড়া- মহল্লা থেকে শুরু করে ইউনিয়ন, উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে নানান সময়ে মেলার আয়োজন করতে পারেন তবে, এতে করে সবার মাঝে প্রচার, প্রকাশ ও প্রসার ঘটবে। সভায় সকলের প্রতি তিনি প্লাষ্টিক ও পলিথিন বর্জন করার আহবান জানিয়ে মাটির পাত্রকে খাবারের পাত্র হিসেবে ব্যবহার করার অনুরোধ করেন।
উক্ত সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মী মোঃ জায়েদুর রহমান, মোহাম্মদ আলমগীর উসমান ভূইয়া, জসীম উদ্দীন, মতি পাল, পালপাড়ার শতাধিক উপকারভোগী ও এলাকার অন্যান্য গন্যমান্য ব্যক্তি বর্গ।