ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় স্ত্রী ও তাঁর আগের ঘরের সন্তানকে হত্যার ঘটনায় বাচ্চু মিয়া (৪২) নামের এক ব্যক্তিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে ওই ব্যক্তিকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও এক বছরের কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়েছে। বুধবার দুপুরে জেলা ও দায়রা জজ মো. মঈন উদ্দীন এ রায় দেন।
দণ্ডপ্রাপ্ত বাচ্চু মিয়া হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার মাঝিসাইল গ্রামের মৃত ফজলু মিয়ার ছেলে। ২০১৬ সালের ১৯ অক্টোবর ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদরের বুধল ইউনিয়নের মালিহাতা গ্রাম থেকে বাচ্চু মিয়ার স্ত্রী স্বরুপা আক্তার (৩০) ও তাঁর আগের ঘরের মেয়ে মারুফা আক্তারের (১০) ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় পরদিন স্বরুপা আক্তারের ভাই সরাইল উপজেলার কুট্টাপাড়া গ্রামের মো. হেলাল মিয়া বাদী হয়ে সদর থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। মামলায় স্বরুপার স্বামী বাচ্চু মিয়া ও বাচ্চুর আগের স্ত্রী তানজিনাকে আসামি করা হয়। তবে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় আদালত তানজিনাকে বেকসুর খালাস দিয়েছেন।
মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণ সূত্রে জানা যায়, ২০০৬ সালে সরাইল উপজেলার পানিশ্বর এলাকার সাববাড়ির মালম মিয়ার সঙ্গে স্বরুপার বিয়ে হয়। তাঁদের মারুফা আক্তার নামে একটি মেয়েসন্তান ছিল। ২০১৫ সালে মালমের সঙ্গে স্বরুপার ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। এর পর থেকে মারুফা মায়ের সঙ্গে থাকতেন। পরে মারুফা বিভিন্ন জায়গায় নির্মাণশ্রমিক হিসেবে কাজ করেছিলেন। এ অবস্থায় বাচ্চুর সঙ্গে স্বরুপার পরিচয় হয়। পরিবারের কাউকে না জানিয়ে বাচ্চুকে বিয়ে করেন মারুফা। বাচ্চুর আগের সংসারে স্ত্রী ও দুটি মেয়েসন্তান ছিল। তাঁদের নিয়ে বাচ্চু ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার মালিহাতা গ্রামে ভাড়া বাসায় থাকতেন। এদিকে বাচ্চুকে বিয়ের পর সরাইল উপজেলার কোট্টাপাড়ার একটি বয়লার মিলে কাজ শুরু করেন স্বরুপা।
২০১৬ সালের ১৯ অক্টোবর সকাল আটটার দিকে বয়লার মিলে স্বরুপা ও মারুফার খোঁজে যান স্বরুপার ভাই হেলাল মিয়া। তাঁদের খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না বলে হেলালকে জানান মিলমালিক। অনেক খোঁজাখুঁজি করেও তাঁদের কোনো সন্ধান পাননি হেলাল। পরে ওই দিন সদর উপজেলার মালিহাতা গ্রামে বাচ্চুর ভাড়া বাসা থেকে স্বরুপা ও মারুফার ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
স্বরুপা ও তাঁর মেয়েকে হত্যার দায় স্বীকার করে ২০১৭ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন বাচ্চু। তাতে জানা যায়, ভাত নিয়ে যাওয়ার কথা বলে বাড়িতে ডেকে নিয়ে পরিকল্পিতভাবে স্বরুপা ও মারুফাকে হত্যা করে লাশ ঝুলিয়ে ঘরে তালা ঝুলিয়ে দেন বাচ্চু। ২০১৭ সালের ১৮ এপ্রিল এ হত্যা মামলায় অভিযোগপত্র জমা দেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উপপরিদর্শক মো. আনিছ আল মাহমুদ। বুধবার রায় ঘোষণা করা হলো।