নিজস্ব প্রতিবেদক, মোঃ সাইফুল আলম – আখাউড়া ডট কম
বাংলাদেশ রেলওয়ে সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় আখাউড়া নাম হলেও সবাই রেল স্কুল নামেই চেনে। রেলওয়ে স্কুল ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সবচেয়ে আদি ও পুরাতন স্কুল গুলোর মধ্যে অন্যতম। এই বিদ্যালয়টি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আখাউড়া থানায় অবস্থিত।
কিছুদিন আগেই ১০০ বছরে পা দিল বাংলাদেশ রেলওয়ে সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় আখাউড়া। ১৯২০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় প্রানপ্রিয় এই স্কুলটি। ২০২০ সালে সুবর্ণজয়ন্তীর মাধ্যমে একশ বছর পূর্তি পালন করে শিক্ষক, স্টাফ, প্রাক্তন ও বর্তমান শিক্ষার্থীসহ জেলা ও দেশের শুভাকাঙ্ক্ষীরা। শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেছেন এই বিদ্যালয় থেকে বের হয়ে আসা দেশ বরেণ্য সব সিটিজেনরা।
বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের চট্টগ্রাম বিভাগের একটি প্রশাসনিক অঞ্চল হল এই ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা। আর আখাউড়া হল এর অন্যতম উপজেলা। এই অঞ্চলে অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। তবে আদি ও পুরাতন স্কুল হিসেবে ”বাংলাদেশ রেলওয়ে সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় আখাউড়া” বা “রেলওয়ে স্কুল” গর্ব করার একটি বিষয়। যুগ যুগ ধরে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকবে এই স্কুলটি এমনটিই সবার প্রত্যাশা। উপজেলার সংখ্যানুসারে ব্রাহ্মণবাড়িয়া বাংলাদেশের একটি “এ” শ্রেণীভুক্ত জেলা। শিক্ষা ও সংস্কৃতির পীঠস্থান রূপে পরিচিত ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলাকে বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক রাজধানী বলা হয়। আর তাইতো এখানের সবার আগে যে স্কুলের নামটি মুখে আসে তা হল ”বাংলাদেশ রেলওয়ে সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় আখাউড়া”।
বাংলাদেশ রেলওয়ে সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় আখাউড়া বা রেলওয়ে স্কুলঃ
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অন্নদা সরকারী উচ্চ বিদ্যালয় অনেক আদি একটি স্কুল হলেও এই এলাকায় রেলওয়ে স্কুল এটিই প্রথম। ১৯২০ সালে প্রতিষ্ঠা লাভ করে আমাদের প্রানের রেলওয়ে স্কুল আখাউড়া। প্রায় ২০০০ ছাত্র ছাত্রী নিয়ে মুখর এই স্কুল। আখাউড়া রেলওয়ে জংশনের উত্তর পাশে আখাউড়া-সিলেট রেল লাইনের পাশ ঘেসেই অবস্থিত এই স্কুল। বর্তমানে এই স্কুলের ঠিক উত্তর পাশে দিয়ে নির্মিত হয়েছে আখাউড়া-আগরতলা বাইপাস রোড। ৫৮ জন শিক্ষক ও স্টাফ নিয়ে কর্মচঞ্চল এই স্কুল যার প্রধান শিক্ষক এম এ আজাদ। তিনি বিদায়ী প্রধান শিক্ষক মোঃ রকিব খান খাদেম। এছাড়া ২০১৭ সালে অবসরে যান এই বিদ্যালয়ের প্রানপ্রিয় অফিস সহকারী জনাব হুমায়ুন কবির। ”শিক্ষাই আলো” এই শ্লোগান নিয়ে বীরদর্পে চলছে এই বিদ্যালয়। প্রথম শ্রেণী থেকে ১০ম শ্রেণী পর্যন্ত বিদ্যালয়টি কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে সব সময়ই ভালো ফলাফল করে আসছে। বিজ্ঞান, ব্যবসায় ও মানবিক বিভাগে সমান দক্ষতা রয়েছে এখানকার শিক্ষার্থীদের। এই স্কুলের শিক্ষার্থীরা বাঘের মতো ভয় পেত যে শিক্ষক কে তার নাম তোফাজ্জল হোসেন। ইংরেজির দক্ষ এই শিক্ষক কিছুদিন আগে মৃত্যুবরন করেন। অজস্র শিক্ষার্থী ও অভিভাবক চোখের জল ফেলেছেন তার জন্য। বাংলাদেশ রেলওয়ে সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় আখাউড়া এর অন্যতম সুপার ট্যালেন্টেড গনিত শিক্ষক মৃণাল কান্তি স্যার।
সাদা ও নীলের কম্বিনেশনে এই স্কুলের সামনেই রয়েছে মসজিদ, দোকান পাঠ এবং রেলওয়ে কলোনি। এই স্কুলের প্রধান খেলা গুলোর মধ্যে রয়েছে ফুটবল, ক্রিকেট ও ব্যাড মিন্টন। প্রতি বছরই বিজয় দিবস ও অন্যান্য সময় খেলার আয়োজন করা হয়ে থাকে। কুমিল্লা বোর্ডের অধীনে এই বিদ্যালয়টি শিক্ষা মন্ত্রণালয় ছাড়াও রেলওয়ে মন্ত্রণালয় নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন। প্রাণের স্কুলে নিয়মিত ইফতার অনুষ্ঠান আয়োজনের পাশাপাশি এই স্কুলের এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ ৫ পাওয়া শিক্ষার্থীদের সংখ্যা দিন দিন উল্লেখ করার মতো।
আরও পড়ুনঃ আখাউড়ার শহীদ স্মৃতি ডিগ্রি কলেজ ও সরকারি করন
আশে পাশের এলাকাগুলোর বেশীর ভাগ মানুষের প্রথম চয়েজ থাকে এই স্কুলে ভর্তি হবার। শিক্ষকরা ও সেরাটা দিয়ে থাকেন। আর তাইতো প্রতি বছর বাংলাদেশ রেলওয়ে সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় আখাউড়া সেরাদের তালিকায় স্থান করে নেয়। কোনদিন সুযোগ পেলে ঘুরে যাবেন রেলওয়ে স্কুলের মাঠ প্রাঙ্গন থেকে। শেষ করবো এই স্কুলের প্রাক্তন এলামনাই সদস্য বদরুল ইসলাম মাসুদ এর একটি লিখা দিয়ে।
মোরা একবৃন্তের ফুল
(রেল স্কুলের ব্যাচ ৮৮ এর বন্ধুদের প্রতি)
মোরা এক বৃন্তের ফুল গো মোরা এক বৃন্তের ফুল
সুখে দুঃখে, হাসি-কান্নায় কিংবা চাপা অভিমান,
খুনসুটি আর লুকিয়ে তাকানো, অবুঝ মনের আকুলি বিকুলি
সবই আমাদের স্মৃতিময়, সে যে মোদের রেল স্কুল।
নানা পথের, নানা মতের, নানা রঙের নানা জন
একই মোহনায় মিশেছি- পড়ালেখাই প্রধান আয়োজন,
মাঝে মধ্যে রুমাল চুরি, পাঁচগুটি কিংবা চোর-পুলিশ খেলা
পড়ার মাঝে ডুবে থাকা, পড়ার ফাঁকে সখি-সখা
নানা রঙের দিনগুলি-সে যে মোদের ছেলে (এবং মেয়ে) বেলা।
স্যারের পড়া, বড়ই কড়া, কাদের স্যারের বেতের বাড়ি
নতুন স্যারের চা-পান, দোয়া-দরুদ কিংবা দুষ্টুমী
নতুন আপার কড়া শাসন, মৃদু স্বরে কিছুটা বকুনি
কিংবা শামছি আপার সোহাগমাখা পড়া- ভুলবো কি করে তুমি-আমি!
ড্রইং স্যারের ছবি আঁকা কিংবা বেতের বাড়ি
শরফুদ্দীন স্যারের কড়াকড়ি কিংবা বোরহান স্যারের চোখ রাঙানি
জামান স্যারের আদর সোহাগ ভুলবো কি করে
এসব ভাবলে এখনও আসে চোখের পানি….
নুরুন্নাহার আপার পরিমিত কথা, ক্লাশটা ছিল বেশ
বুড়ি আপা বেজায় কড়া, কথায় কথায় পিটুনি
আ-হা, এখন ভাবি কেমন ছিল তখনকার লেখাপড়া
প্রতিযোগিতা, ফার্স্ট হতে হবে- তাই যত খাটুনি..
খুব সকালে বই-খাতা হাতে স্কুলের পথে হাঁটা
ফুরাতে চায় না পথ, কখন যে শেষ হবে রাস্তাটা
ভাবতে ভাবতে পথে আরো মিলে যেত কাউকে
পাশাপাশি, কাছাকাছি মনের কথা, না বলা কথা কি করে বলি ‘তাকে’।
ক্লাশের ফাঁকে দুষ্টুমী আর একে-ওকে ক্ষেপানো
আ-হা কত না সুখের সে সব দিন!
মনে পড়ে যায়, একা নিরালায়, পথের বাঁকে
যদি ফিরে পেতাম সেসব সোনালী সুদিন….
স্কুলের সেই কৃষ্ণচূড়া কিংবা কষ (আকন্দ) গাছ
ছাদের উপর ঘুরে বেড়ানো কিংবা কানামাছি
বন্ধুরা সব কেমন আছে- কোথায় আছে কে?
সোনালী অতীত, আবার যেতে চাই খুব কাছাকাছি।
কত না নাম, কতনা স্মৃতি কত না খুনসুটি
নামের মাঝে হাতড়ে স্মৃতি, খুঁজে বেড়াই
এর সাথে ওর, ওর সাথে এর কতনা ‘ভাব’
এসব এখন ভাবতে গেলে শুধুই লজ্জা পাই!
শৈশব-শৈশব উতরানো প্রথম কৈশোর
একসাথে, একপাতে একান্ত একান্তে
কিংবা দলবেঁধে চলা, কথা বলা, খেলার মাঠের স্মৃতি
সুখের সেসব দিন, মনে পড়ে, বারে বারে অজান্তে!