গতকাল বুঝেছি,ছেলের লাশ বহন করা বাবার জন্য যে কত কঠিন

একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে বাক্‌রুদ্ধ মা শারমিন আক্তার। কারও সঙ্গে কোনো কথাবার্তা বলছেন না।আবার চেতনা ফিরলে ডুকরে কেঁদে উঠছেন। কিছুক্ষণ পর পর জ্ঞানও হারাচ্ছেন। তানভিরকে এনে দেওয়ার জন্য স্বজনদের কাছে মিনতি করছেন।

ট্রেন থেকে পড়ে মারা যাওয়া ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলার দেবগ্রামের তানভির মিয়া ওরফে সোহেলের (২২) বাড়িতে দেখা যায় এই চিত্র। তানভির এই গ্রামের মেরাজ মিয়া ও শারমিন আক্তার দম্পতির সন্তান। দালালের মাধ্যমে তাঁর মালয়েশিয়া যাওয়ার প্রস্তুতি চলছিল। গত শুক্রবার সকালে বা দুপুরে ফ্লাইট হওয়ার কথা ছিল। এর মধ্যে ফ্লাইট বাতিলের কথা জানানো হয়। বাড়ি থেকে ঢাকায় গিয়ে ব্যর্থ হয়ে শুক্রবার বিকেলে আন্তনগর উপকূল এক্সপ্রেস ট্রেনে তানভিরকে সঙ্গে তাঁর বাবা আখাউড়ায় ফিরছিলেন। পথে কিশোরগঞ্জের ভৈরব রেলসেতু অতিক্রমের সময় ট্রেনের দরজা থেকে মেঘনা নদীতে পড়ে নিখোঁজ হন তানভির। পরে তাঁর লাশ প্রায় ৪৪ ঘণ্টা পর গতকাল রোববার দুপুরে উদ্ধার করা হয়।

আরও পড়ুন

মালয়েশিয়ার উদ্দেশে ঘর থেকে বের হয়ে যাওয়ার সময় মাকে অনেক আদর করে গিয়েছিল তানভির। মা সেই সব কথাই বলছেন, আর আহাজারি করছেন। গতকাল সন্ধ্যা ছয়টার দিকে তানভিরের লাশ গ্রামের বাড়ি আখাউড়ার দেবগ্রামে পৌঁছায়। মাগরিবের নামাজের পর তাঁর জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর পারিবারিক কবরস্থানে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে লাশ দাফন করা হয়।

তানভিরের বাবা মেরাজ মিয়া বলেন, ‘ছেলের লাশ বহন করে গতকাল রাতে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করেছি। ছেলের লাশ বহন করা বাবার জন্য যে কত কঠিন, তা গতকাল বুঝেছি। আমার স্ত্রী ছেলের শোকে কাতর হয়ে আছে। ট্রেনে ছেলের একই বগিতে আমিও ছিলাম। কিন্তু আসন থেকে উঠে কেন দরজার সামনে গিয়ে দাঁড়াল, সে বিষয়ে ছেলে আমাকে কিছু বলেনি। তারপর যা হলো, তা তো সবারই জানা।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘যার মাধ্যমে ছেলেকে মালয়েশিয়া পাঠাতে চেয়েছিলাম, তারা কেউ কোনো খোঁজখবর নেয়নি। তারা বাড়ি ছেড়ে পালিয়েছে। কোথায় আছে জানি না।’

Related Posts

About The Author