নিজস্ব প্রতিবেদক, মোঃ সাইফুল আলম – আখাউড়া ডট কম
বাংলাদেশের যেকয়টি স্থল বন্দর রয়েছে তারমধ্যে একটি বিশেষ স্থান করে নিয়েছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আখাউড়া স্থলবন্দর। স্থানীয়রা অনেকেই এই বন্দরকে আখাউড়া বর্ডার বা আখাউড়া চেক পোস্ট বলেন। ১৯৯৪ সালে চালু হওয়া এই স্থল বন্দরটি প্রতিবেশি দেশ ভারতের ত্রিপুরা, আসাম, মেঘালয়সহ ৭টি রাজ্যে প্রবেশের অন্যতম প্রবেশ দ্বার। ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহর থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দূরে এই বন্দর। আখাউড়া স্থলবন্দরটি ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প সাহিত্য, রাজনৈতিক ও পারিপার্শ্বিক দিক থেকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
ভারতের সেভেন সিস্টার্স অঙ্গরাজ্যের সঙ্গে যুক্ত আখাউড়া স্থলবন্দরটি চাঙা হয়ে উঠছে প্রতিদিন। নানান ধরনের মানুষ ও ভিজিটর আসেন এখানে। ভারতে প্রবেশ, ঘুরতে যাওয়া, পণ্য আনা নেয়া ছাড়াও অনেকেই চিকিৎসার জন্য এখন আখাউড়া স্থলবন্দর বেশী ব্যাবহার হচ্ছে। এই স্থলবন্দর দিয়ে প্রতিদিন মাছ, পাথর, সিমেন্ট, ইট, বালি, শুটকী, প্লাস্টিক সামগ্রী, তুলাসহ প্রায় ৪২টি বাংলাদেশি পণ্য ভারতে রফতানি হতো। এসব পণ্য রফতানি করে প্রতিদিন বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা আয় করে বাংলাদেশ।
ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে ট্রানজিট চুক্তি সাক্ষরিত হওয়ায় এই স্থল বন্দরের গুরুত্ব ও পণ্য পরিবহনের পরিমান প্রচুর বেড়েগেছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায় গত ১৯শে এপ্রিল ২০১১ থেকে আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে পন্য পরিবহন আনুষ্ঠানিক ভাবে শুরু হয়। পন্য পরিবহন হলেও এর মাশুল নেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
আশে পাশের এলাকা থেকে অনেকেই বিকেল বেলা ঘুরতে যান আখাউড়া স্থলবন্দর এলাকায়। সুলতানপুর থেকে আখাউড়া স্থলবন্দর পর্যন্ত বাইপাস সড়ক হবার পর থেকে এই এলাকার উন্নয়ন আরও বেশী নজরে আসে। ব্যবসা-বাণিজ্যর ব্যাপক প্রসার ঘটে। দোকান পাট, মার্কেট ও বাজারের আধুনিকায়ন হয়। আশে পাশের এলাকার জমির দামও কয়েকগুন বেড়ে যায়। জীবন যাপন ও ব্যক্তি মান আরও বাড়ে।
আখাউড়া স্থলবন্দর হল দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল দিয়ে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের কেন্দ্রবিন্দু। বর্তমানে রফতানির পর এবার আমদানির দ্বারও পুরোপুরি খুলে গেছে। সব ধরনের পণ্য আসবে এই বন্দর দিয়ে। এই ঘোষণায় স্থলবন্দরের ব্যবসায়ীদের মাঝে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা বিরাজ করছে।
ব্যবসায়ীরা জানান, চালু হওয়ার প্রায় ২৭ বছর পর আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে সব ধরনের পণ্য আমদানির দ্বার উন্মোচন হলো। দীর্ঘদিন ধরে এই স্থলবন্দরটি দিয়ে শুঁটকি, হিমায়িত মাছ, সিমেন্ট, সয়াবিন, প্লাস্টিক পণ্য, কয়লাসহ প্রায় ৪২টি পণ্য রফতানি হয়ে আসছিল। আর নামে মাত্র আমদানি হতো বোল্ডপাথর, সিএনজি অটোপার্টস, ফুলের ঝাড়ু, সাতকরা, তরল রাবারসহ কয়েকটি পণ্য। তবে চাহিদা না থাকায় এসব পণ্য আমদানিতে আগ্রহ ছিল না বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের। এরই মধ্যে ভারতের ব্যবসায়ীরা আমদানি কমিয়ে দেওয়ায় শতভাগ রফতানিমুখি বন্দরটি অনেকটাই ঝিমিয়ে পরে।
গত ৯ ফেব্রুয়ারি স্থানীয় সংসদ সদস্য আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের মাধ্যমে স্থলবন্দরের ব্যবসায়ীদের কাছে খবর আসে, নিষিদ্ধ ঘোষিত পণ্য ছাড়া এই স্থলবন্দর দিয়ে সব রকমের পণ্য আমদানির অনুমোদন হয়েছে। এই খবরে স্থলবন্দরের ব্যবসায়ীরা উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন। শিগগিরই এই ঘোষণা বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে স্থলবন্দরটি প্রাণচঞ্চল হয়ে উঠবে বলে মনে করেন বন্দর সংশ্লিষ্টরা।
আখাউড়া স্থলবন্দরের ব্যবসায়ী আব্বাস ভূইয়া বলেন, ‘আমাদের ২৭ বছরের স্বপ্ন আমাদের মন্ত্রী (স্থানীয় সংসদ সদস্য ও আইনমন্ত্রী আনিসুল হক) পূরণ করেছেন। খবরটি আমাদের আখাউড়া পৌরসভার মেয়র তাকজিল খলিফা কাজল গত ৯ ফেব্রুয়ারি আইনমন্ত্রীর পক্ষ থেকে স্থলবন্দরে জানান। এরপর থেকে ব্যবসায়ীদের মাঝে আনন্দ-উচ্ছ্বাস বিরাজ করছে। ব্যবসায়ীরা স্থলবন্দরে মিষ্টি মুখ করিয়ে একে অপরের সঙ্গে আনন্দ ভাগাভাগি করেন।’
যাই হোক, আমাদের প্রানের দেশ আমাদের প্রানের ভূমির উন্নয়নের জন্যই এই স্থলবন্দর। এই বন্দরের সফল কার্যক্রম চালনায় শুধুমাত্র আখাউড়ার বাসিন্দাই না দেশের অনেকেই সুফল পাচ্ছেন।