আখাউড়ায় টিকটক করা নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে নববধূকে কুপিয়ে হত্যা, স্বামী গ্রেপ্তার

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলায় টিকটক করা ও মুঠোফোনে অন্য ছেলেদের সঙ্গে কথা বলা নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে স্বামীর বিরুদ্ধে নববধূকে কুপিয়ে হত্যা করেছেন বলে অভিযোগ করেছেন ওই নারীর ভাই। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে আখাউড়ার হীরাপুর মধ্যপাড়া এলাকায় ওই নারীকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটে।

এ ঘটনায় করা মামলায় বুধবার বেলা ১১টার দিকে আখাউড়া উপজেলার দক্ষিণ ইউনিয়নের হীরাপুর বড় মুড়া সীমান্ত দিয়ে ভারতে পালানোর সময় বিজিবি ও আখাউড়া থানা-পুলিশ নিহত নারীর স্বামী আবদুল হামিদকে (২৮) গ্রেপ্তার করে।

নিহত গৃহবধূ হলেন তাছলিমা আক্তার (২২)। তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার বাসুদেব ইউনিয়নের বাসুদেব গ্রামের মৃত আবদুর রাজ্জাকের ছোট মেয়ে ও আখাউড়ার হীরাপুর মধ্যপাড়ার সৌদিপ্রবাসী আবদুল হামিদের স্ত্রী। জিজ্ঞাসাবাদের পুলিশের কাছে স্ত্রীকে হত্যার কথা স্বীকার করেছেন তিনি।

এ ঘটনায় নিহত গৃহবধূর ভাই আবদুল কুদ্দুস বাদী হয়ে আখাউড়া থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। মামলায় আবদুল হামিদকে প্রধান আসামি করা হয় এবং অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে আরও কয়েকজনকে।

পরিবারের বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, সাত-আট মাস আগে মুঠোফোনে সৌদিপ্রবাসী আবদুল হামিদের সঙ্গে তাছলিমার বিয়ে হয়। সম্প্রতি ছুটিতে দেশে আসেন হামিদ। গত শুক্রবার দুই পরিবারের লোকজন হামিদ ও তাছলিমার বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করেন। ওই দিন নববধূ তাছলিমাকে শ্বশুরবাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। গতকাল দুপুরে হঠাৎ স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কথা-কাটাকাটি জেরে তাছলিমা ছুরিকাঘাতে মারা যান।

২৫ বিজিবি (সরাইল) ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরমান আরিফ বলেন, আজ বুধবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে সীমান্ত এলাকা অতিক্রম করার সময় টহলরত বিজিবি সদস্যরা আসামিকে আটক করেছে। পরে আখাউড়া থানায় তাঁকে সোপর্দ করা হয়।

আখাউড়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশের কাছে স্ত্রীকে হত্যার কথা স্বীকার করেছেন আবদুল হামিদ। হামিদ জানিয়েছেন, তাঁর স্ত্রী মুঠোফোনে টিকটক করতেন। সেই সঙ্গে অন্য ছেলেদের সঙ্গে মুঠোফোনে চ্যাটিং করতেন বলে তাঁর সন্দেহ ছিল। এ নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে দ্বন্দ্ব চলছিল। গতকাল সকালে বাবার বাড়িতে যেতে চাইলে তাছলিমাকে যেতে দেননি তিনি (হামিদ)। এর পর বাজার থেকে ৩০০ টাকা দিয়ে ছুরি কিনে বাড়ি ফেরেন। দুপুরে কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে সেই ছুরি দিয়ে স্ত্রীর গলা, পেট ও হাতে আঘাত করেন। পরে ঘটনাস্থলেই তাঁর মৃত্যু হয়। চিৎকার শুনে প্রতিবেশীরা এসে তাছলিমার রক্তাক্ত লাশ দেখতে পান।

আরও পড়ুন

খবর পেয়ে নিহত তাছলিমার ভাই আবদুল কুদ্দুছ গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে বোনের শ্বশুরবাড়িতে যান। বোনের রক্তাক্ত লাশ দেখে ভগ্নিপতিকে আটকের চেষ্টা করেন তিনি। এ সময় হামিদ তাঁকেও ছুরিকাঘাত করে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে গিয়েছিলেন।
আবদুল কুদ্দুছ সাংবাদিকদের বলেন, ‘চার দিন আগে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বামীর সংসারে যায় বোন। তাঁর হাতে লাগানো মেহেদির রং এখনো শুকায়নি। এর মধ্যে সৌদিপ্রবাসী স্বামী নৃশংসভাবে তাঁকে হত্যা করল। আমি আমার বোনের হত্যার বিচার চাই।’  
গ্রেপ্তার আবদুল হামিদকে আদালতের মাধ্যমে জেলা কারাগারে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন আখাউড়া থানার ওসি মো. নুরে আলম।

Related Posts

About The Author