ঘরে ঢুকলেই মায়ের জন্য বুক ফেটে যায়

চট্টগ্রামের পটিয়া পৌরসভার পাইকপাড়া মহাজনবাড়ির ৭০ বছর বয়সী সন্ধ্যা দাশ মাঝেমধ্যেই বিভিন্ন মন্দিরে পূজা-অর্চনা করতে যেতেন। কখনো কখনো চার থেকে পাঁচ দিন মন্দিরেই থেকে যেতেন। আবার চলে আসতেন বাড়িতে। গত ৩০ এপ্রিল পটিয়ার পাশের উপজেলা চন্দনাইশ পৌরসভার পশ্চিম হারলা সুচিয়া লোকনাথ মন্দিরে গিয়েছিলেন সন্ধ্যা দাশ।

সেখানে দুই দিন থেকে গত ২ মে সকালে মন্দির থেকে বাড়ির উদ্দেশে রওনাও দিয়েছিলেন। তবে আর তিনি বাড়ি ফেরেননি।

তিন মাস ধরে মা সন্ধ্যা দাশকে খুঁজে বেড়াচ্ছেন অপু দাশ (৪০)। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘এমন কোনো জায়গা নেই, যেখানে যাইনি। যে যেখানে যেতে বলেছে, সেখানে গিয়েছি। খুঁজেছি, কিন্তু কোথাও মাকে পেলাম না। চেষ্টার কোনো কমতি রাখিনি। কবে যে মাকে পাব, তা-ও জানি না। ঘরে ঢুকলেই মায়ের জন্য বুক ফেটে যায়।’ অপু বলেন, অন্যান্য বার পূজা-অর্চনার জন্য চার থেকে পাঁচ দিন মন্দিরে থাকলেও এবার দুই দিন থেকেই ২ মে সকালে মন্দির থেকে বাড়ির উদ্দেশে রওনা দেন তাঁর মা।

বের হওয়ার আগে মন্দিরের এক পূজারির ফোন থেকে ছেলের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি বলেন, মা প্রতিবারই একা একা ফিরে আসেন, তাই মায়ের বাড়ি ফেরা নিয়ে কোনো দুশ্চিন্তা জাগেনি তাঁর মনে। প্রতিদিনের মতো কর্মস্থল থেকে সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরে দেখেন মা তখনো বাড়িতে পৌঁছাননি। অথচ মন্দির থেকে তাঁদের বাড়িতে আসতে লাগে ৪০ থেকে ৫০ মিনিট সময় লাগে।

সন্ধ্যার পর রাত নামে, কিন্তু মা আর ঘরে আসেন না। দুশ্চিন্তা ভর করে অপুর মনে। আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে খোঁজ নেন, পাড়া-প্রতিবেশীদের কাছ থেকে খবর নেন। চারপাশ থেকে শুধু হতাশার খবর আসতে থাকে। কোথাও যাননি সন্ধ্যা দাশ। সারা রাত অস্থিরতার মধ্যে কাটানোর পর ভোরের আলো ফুটতেই অপু ছুটে যান মন্দিরটিতে। কিন্তু মা সেখানে নেই। পূজারিরা বলেন, আগের দিনই মন্দির থেকে তাঁর মা বাড়িতে চলে গেছেন।

গত শুক্রবার চট্টগ্রাম নগরের এক আত্মীয়ের বাসায় কথা হয় অপু দাশের সঙ্গে। তিনি বলেন, মা ধর্মকর্ম করতে ভালোবাসেন। বিভিন্ন মন্দিরে যেতেন। থাকতেন। তাঁর বিশ্বাস, মা হয়তো কোনো একটি মন্দিরে আছেন। তাই চট্টগ্রাম শহর ও উপজেলার বিভিন্ন মন্দির, নারায়ণগঞ্জের লোকনাথ ব্রহ্মচারীর আশ্রম ও মন্দিরে গিয়েছিলেন। কিন্তু কোথাও মা নেই।

অপেক্ষায় আছেন, মাকে কবে ফিরে পাবেন উল্লেখ করে অপু বলেন, কোথাও মায়ের মতো কাউকে দেখা গেছে, এমন খবর পেলেই কারখানা থেকে বেরিয়ে পড়েন। কখনো একা, কখনো আত্মীয়দের নিয়ে দ্রুত ছুটে যান সেখানে। কিন্তু দিন শেষে হতাশা নিয়ে ফিরতে হয়।

তিনি বলেন, প্রথম ১৫ থেকে ২০ দিন কর্মস্থলেই যাননি। এখনো মাঝেমধ্যে টানা চার থেকে পাঁচ দিন অনুপস্থিত থাকেন। অফিসের লোকজন খুব সহযোগিতা করছেন।

তাঁর মা শারীরিকভাবে সুস্থ জানিয়ে অপু দাশ বলেন, তবে বয়সের কারণে স্মৃতিশক্তি কমে গেছে। কোনো কিছু সহজে মনে রাখতে পারেন না।

অপু দাশ বলেন, ‘আমার তিন সন্তানকে এত আদর করত মা, এখন তাঁকে (মা) না পেয়ে বাচ্চারা মনমরা হয়ে থাকে। ঘরে ঢুকলে কিছুই আর ভালো লাগে না। নিজেকে বড় অসহায় মনে হয়। বুক ফেটে যায়। মাকে ছাড়া থাকার যন্ত্রণা কাউকে বোঝাতে পারব না!’

মায়ের নিখোঁজ থাকার ঘটনায় থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন অপু। এ বিষয়ে জানতে আজ বৃহস্পতিবার সকালে পটিয়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) জয়ন্ত চন্দ্র দাশের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হয়। এ ব্যাপারে পরে কথা বলবেন বলে জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।

Related Posts

About The Author

Add Comment