নিজস্ব প্রতিবেদক, মোঃ সাইফুল আলম – আখাউড়া ডট কম
বাংলাদেশের সবচেয়ে আরামদায়ক ও অন্য পরিবহণের ভ্রমণ ব্যয়ের তুলনায় সস্তা হল ট্রেনে ভ্রমণ। বেশিরভাগ মানুষের পছন্দের তালিকায় ট্রেনে যাতায়াত সবার আগে থাকে। বিশেষ করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও আখাউড়া বাসির পছন্দের তালিকায় এক নম্বরে থাকে। মানুষ সিকিউর অনুভব করেন। তাই দাঁড়িয়ে হলেও ট্রেনে যাতায়াত করতে চান অনেকে।
এই জেলার অধিকাংশ মানুষেরই অজানা কখন কিভাবে গড়ে উঠেছিল আখাউড়া রেলওয়ে জংশন। মূলত এটি প্রথমে গড়ে উঠে একটি স্টেশন হিসেবে। প্রথম দাবী উঠায় আসামের চা উৎপাদনকারীরা। তারা চেয়েছিল চট্টগ্রাম বন্দরের সাথে একটি রেলপথ সংযোগের জন্য। তারই ফলশ্রুতিতে আসাম বেঙ্গল রেলওয়ে ১৮৯১ সালে বঙ্গের পূর্বাঞ্চলে একটি রেলওয়ে ট্রাক নির্মাণ শুরু করে। চট্টগ্রাম এবং কুমিল্লায় ১৫০ কিলোমিটার এর একটি পথ ১৮৯৫ সালে চালু করা হয়।
এরপর আসাম বেঙ্গল রেলওয়ে কোম্পানি এদেশে রেলপথ নির্মাণের দায়িত্ব নেয় ১৮৯২ সালে। ১৮৯৫ সালের ১ জুলাই চট্টগ্রাম থেকে কুমিল্লা ১৫০ কিমি মিটারগেজ লাইন এবং লাকসাম থেকে চাঁদপুর পর্যন্ত ৬৯ কিমি রেললাইন জনসাধারণের জন্য খোলা হয়।
তাহলে সাধারণভাবেই প্রশ্ন তোলা হয় কখন জংশন হিসেবে হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে এই স্টেশন। মূলত কুমিল্লা-আখাউড়া-শাহবাজপুর রেলপথ স্থাপন করা হয় ১৮৯৬ সালে। এসময় কুমিল্লা-আখাউড়া-শাহবাজপুর লাইনের স্টেশন হিসেবে আখাউড়া রেলওয়ে স্টেশন তৈরি করা হয়। এবং আখাউড়া থেকে টঙ্গী পর্যন্ত রেললাইন তৈরি হলে আখাউড়া জংশন স্টেশনে পরিণত হয়।
পরবর্তীতে ১৯১০ এবং ১৯১৪ সালের মধ্যে টঙ্গী-আখাউড়া লাইন নির্মাণ করা হয় মেঘনা নদীর পশ্চিম তীরের রেল ব্যবস্থার সাথে পূর্ব প্রান্তকে সংযোগ করার জন্য। একাধিক রেলপথের সমন্বয় থাকা আখাউড়া জংশন রেলওয়ে স্টেশনটি আখাউড়া-কুলাউড়া-ছাতক রেলপথেরও অন্তর্ভুক্ত। এই স্টেশন থেকে চারটি দিকে রেলপথ গেছে, যথা: উত্তর-পূর্বে আখাউড়া–শায়েস্তাগঞ্জ–কুলাউড়া রেলপথ, উত্তর-পশ্চিমে আখাউড়া–ভৈরব–টঙ্গী রেলপথ এবং দক্ষিণ-পূর্বে আখাউড়া–আগরতলা (ভারত সংযোগ) রেলপথ ও দক্ষিণে আখাউড়া–লাকসাম–চট্টগ্রাম রেলপথ।
প্রসঙ্গত ভারত সরকার ও বাংলাদেশ সরকার আগরতলার সঙ্গে আখাউড়ার মধ্যে রেল সংযোগ ঘটাতে ১৪ কিমি আখাউড়া–আগরতলা রেলপথ তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আগরতলা থেকে কলকাতার মাঝে দূরত্ব কমানোর জন্য এই লাইন তৈরি করা হচ্ছে। ট্রেন যাবে আগরতলা রেলওয়ে স্টেশন হয়ে সিদ্ধিআশ্রম, বাধারঘাট, চাড়িপারা, নিশ্চিন্তপুর হয়ে বাংলাদেশের গঙ্গাসাগর রেলওয়ে স্টেশন। সেখান থেকে যাবে আখাউড়া জংশন।
আখাউড়া জংশন রেলওয়ে স্টেশন দিয়ে চলাচলকারী ট্রেনের সংখ্যা কম নয়। চলুন জেনে নিই কি কি আন্তঃনগর ও মেইল ট্রেন চলাচল করে এই ট্র্যাক দিয়ে।
১। সূবর্ণ এক্সপ্রেস, ২। পাহাড়িকা এক্সপ্রেস, ৩। মহানগর প্রভাতী\গোধুলী এক্সপ্রেস, ৪। উদয়ন এক্সপ্রেস, ৫। উপকূল এক্সপ্রেস, ৬। মহানগর এক্সপ্রেস, ৭। তূর্ণা এক্সপ্রেস, ৮। বিজয় এক্সপ্রেস, ৯। সোনার বাংলা এক্সপ্রেস, ১০। ময়মনসিংহ এক্সপ্রেস, ১১। সুরমা এক্সপ্রেস, ১২। কর্ণফুলী এক্সপ্রেস, ১৩। ঢাকা\চট্টগ্রাম মেইল, ১৪। ঢাকা\নোয়াখালী এক্সপ্রেস, ১৫। কুমিল্লা কমিউটার, ১৬। তিতাস এক্সপ্রেস, ১৭। চট্টলা এক্সপ্রেস, ১৮। সিলেট কমিউটার, ১৯। জালালাবাদ এক্সপ্রেস, ২০। কুশিয়ারা এক্সপ্রেস ও ২১। লোকাল ট্রেন।
পূর্ব অঞ্চলের রেল যোগাযোগের মিলন কেন্দ্র বলা হয় এই জংশনকে। বাংলাদেশের অন্যতম ৫টি বড় রেল জংশনের মধ্যে এটি একটি। এছাড়া এর কাছাকাছিই রয়েছে আখাউড়া স্থলবন্দরটি। এই বন্দরটি প্রায় শতভাগ রপ্তানিমূখি। প্রতিদিন এই বন্দর দিয়ে উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্য ত্রিপুরাসহ কয়েকটি রাজ্যে মানুষ যাতায়াত করে এবং পণ্য আমদানি রপ্তানি করে। এর জন্যও অনেকেই এই জংশন ব্যাবহার করে থাকে।