ব্রাহ্মণবাড়িয়ার যে জমিদারবাড়িতে শুটিং করেছেন হুমায়ূন আহমেদ

৪৮০ শতাংশ জমির ওপর জমিদারবাড়িটি নির্মিত। বিশাল এই ভবনের কোথাও কোনো রডের গাঁথুনি নেই ।বাড়িটিতে আছে ৬০টি কক্ষ, হলঘর, নাচঘর, রংমহল, অতিথিশালা, বিচারালয়, মলপুকুর, খেলার মাঠ, স্মৃতিমঠ ও সীমানাপ্রাচীর। বাড়ির পশ্চিম পাশের শানবাঁধানো ঘাট গিয়ে নেমেছে তিতাস নদে। যে জমিদারবাড়িতে হয় চলচ্চিত্রের শুটিং।

জমিদারবাড়িটি নাসিরনগর উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে। নাসিরনগর থেকে মাধবপুর যাওয়ার পথে হরিপুর গ্রামের রাস্তার পশ্চিম পাশে তিতাস নদের পারে চোখে পড়ে দুই গম্বুজের তিনতলার এই বাড়ি।বাড়িটির পূর্ব পাশে নাসিরনগর-মাধবপুর সড়ক। অন্য পাশগুলোতে তিতাস নদের ফাঁকা জায়গা। অনেক বড় বারান্দা ডিঙিয়ে পৌঁছাতে হয় মূল বাড়িতে।

গ্রামের কোল ঘেঁষে বয়ে চলেছে তিতাস নদ। তিতাসের পূর্ব পারে ব্রিটিশ আমলে নির্মিত প্রায় ২০০ বছরের পুরোনো তিনতলার বিশাল বাড়ি। নান্দনিক স্থাপত্যশৈলীতে নির্মিত বাড়িটি দেখতে ভিড় জমান দর্শনার্থীরা। চলচ্চিত্রের শুটিংও হয়েছে এখানে। স্থানীয়দের মুখে এটি বড় বাড়ি। কাগজপত্রে নাম হরিপুর জমিদারবাড়ি। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলার হরিপুর ইউনিয়নের হরিণবেড় গ্রামে এর অবস্থান।

কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা বাড়িটি এখন অর্পিত সম্পত্তি। প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ জরাজীর্ণ অবস্থায় পড়ে থাকা পুরোনো এই বাড়ি সংরক্ষণের উদ্যোগ নিয়েছে। কয়েক বছর ধরে চলছে এর সংস্কারকাজ। সংস্কারের ছোঁয়ায় বদলে যাচ্ছে বাড়িটি, হচ্ছে বেশ দৃষ্টিনন্দন।

জমিদারবাড়িটি নাসিরনগর উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে। নাসিরনগর থেকে মাধবপুর যাওয়ার পথে হরিপুর গ্রামের রাস্তার পশ্চিম পাশে তিতাস নদের পারে চোখে পড়ে দুই গম্বুজের তিনতলার এই বাড়ি। বাড়িটির পূর্ব পাশে নাসিরনগর-মাধবপুর সড়ক। অন্য পাশগুলোতে তিতাস নদের ফাঁকা জায়গা। অনেক বড় বারান্দা ডিঙিয়ে পৌঁছাতে হয় মূল বাড়িতে।

সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অধীনে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের পুরাকীর্তির তালিকায় হরিপুর জমিদারবাড়ির নাম আছে। এ–সংক্রান্ত গেজেটে উল্লেখ করা হয়েছে, ১৯ শতকে গৌরী প্রসাদ রায় চৌধুরী ও কৃষ্ণ প্রসাদ রায় চৌধুরী এই জমিদারবাড়ি নির্মাণ করেন। কৃষ্ণ প্রসাদের মৃত্যুর পর বাড়িটির উত্তরাধিকারী হন হরিপদ রায় চৌধুরী ও শান্তি রায় চৌধুরী। তাঁদের কাছ থেকে বাড়ির মালিকানা ও জমিদারি আসে উপেন্দ্র রায় চৌধুরী ও হরেন্দ্র রায় চৌধুরীর কাছে। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর জমিদারি প্রথা উচ্ছেদ হলে তাঁরা কলকাতায় চলে যান।

 লাল ইট-সুরকির গাঁথুনি দিয়ে তৈরি ভবনের দুই পাশে দুটি সুউচ্চ গম্বুজ যেন জমিদারদের জৌলুশের জানান দেয়। একসময় ঐতিহ্যবাহী নৌকাবাইচ হরিপুর জমিদারবাড়ির নদীর ঘাট থেকেই শুরু হতো। এ বাড়িতে ১৯৯১ সালে বাংলা চলচ্চিত্র মধু মালতী, ২০০৮ সালে ব্রিটিশ-বাংলাদেশি চলচ্চিত্র দ্য লাস্ট ঠাকুর ও ২০১২ সালে নন্দিত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ পরিচালিত চলচ্চিত্র ঘেটুপুত্র কমলা চিত্রায়িত হয়েছে।সম্প্রতি জমিদারবাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, অনেক দর্শনার্থী এসেছেন। তাঁরা বাড়ির ভেতরে, ছাদে, মন্দিরের সামনে দাঁড়িয়ে ছবি তুলছিলেন। সেখানে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের চারজন দায়িত্বে আছেন। আর ছয়জন আনসার সদস্য আছেন নিরাপত্তার কাজে। দর্শনার্থীদের জন্য বাড়িটি সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত খোলা থাকে। তবে বর্ষাকালে বিকেল ৬টা পর্যন্ত খোলা রাখা হয়।

আরেফিন শোভন ও মো. সালমান নামের দুই দর্শনার্থী বলেন, তাঁরা অনেকবার জমিদারবাড়িটি দেখতে এসেছেন। খুবই দৃষ্টিনন্দন। মন ভালো করে দেওয়ার মতো একটি স্থান। তাঁরা যতবার আসেন, ততবারই ভালো লাগে।

সাত–আট বছর ধরে ধীরে ধীরে এই জমিদারবাড়ির সংস্কারকাজ চলছে বলে জানান প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগ এবং কুমিল্লার আঞ্চলিক পরিচালক এ কে এম সাইফুর রহমান। তিনি বলেন, সংস্কারকাজটি দীর্ঘমেয়াদি। ২০১৬ সালে এর কিছু সংস্কারকাজ হয়েছিল। গত বছর নতুন করে সংস্কার ও মেরামত কাজ শুরু হয়েছে এবং এখনো চলছে। বারান্দা, মন্দির, ছাদের সংস্কার ও মেরামত, ঘাটলার কাজ হয়েছে। পানি পুরোপুরি কমে গেলে ঘাটলার বাকি সিঁড়িগুলোর কাজ করা হবে। পেছনের দুই তলা ভবনের সংস্কারকাজ আগামী বছর করার পরিকল্পনা আছে। এখন দর্শনার্থীরা যে দিক দিয়ে বাড়িতে যান, সেটি বাড়ির প্রধান প্রবেশমুখ নয়। আগামী বছর বাড়ির প্রধান প্রবেশমুখের অংশের কাজ হবে।

সংস্কারকাজের সঙ্গে যুক্ত নূর মোহাম্মদ বলেন, মন্দিরের কক্ষ, বাড়ির দক্ষিণ–পূর্ব ও পশ্চিম দিকের কক্ষ ও ছাদের সংস্কারকাজ শেষ হয়েছে। তিনটি ভবনের ছাদ নির্মাণ ও সংস্কার করে চুন দেওয়া হয়েছে। আগের কাজের সঙ্গে মিল রেখে মন্দিরের সামনের কারুকাজটি ধীরে ধীরে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। ১২টি নতুন জানালা ও ১৩টি নতুন দরজা লাগানো হয়েছে।

নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আনসার সদস্য শিবলু দাস বলেন, ‘সাড়ে তিন মাস ধরে এখানে আছি। সপ্তাহের প্রতি শুক্রবার ও শনিবার দর্শনার্থী বেশি থাকে। আর বর্ষাকালে অনেক মানুষ নৌকায় আসে। বাড়িটি দেখার জন্য এখনো দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে লোকজন আসেন। তবে বর্ষা মৌসুমে তিতাসে যখন পানি থই থই করে, তখন বাড়িটির সৌন্দর্য বেড়ে যায়।’

Related Posts

About The Author