নিজস্ব প্রতিবেদক, মোঃ সাইফুল আলম – আখাউড়া ডট কম
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার অন্যতম প্রানকেন্দ্র হল আখাউড়া উপজেলা। ৬ ডিসেম্বর পালিত হয় আখাউড়া মুক্ত দিবস। ভৌগলিক, রাজনৈতিক ও বাণিজ্যের কারণ ছাড়াও রয়েছে নানান আকর্ষণীয় বিষয়। রেলওয়ে জংশন, স্থল-বন্দরসহ রয়েছে অনেক পর্যটন কেন্দ্র। আর তাইতো অন্যান্য এলাকার চেয়ে আখাউড়া উপজেলা এদেশে এক বিশেষ স্থান দখল করে আছে।
পাশেই ভারতের ত্রিপুরা ও তার রাজধানী আগরতলা। পূর্বাঞ্চলের প্রবেশদ্বার খ্যাত ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলা পাক হানাদারদের সাথে চলে নানানমুখী যুদ্ধ ও সংঘর্ষ। অনেক ঘটনার পর ১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর শত্রুমুক্ত হয় আমাদের এই আখাউড়া।
”৬ ডিসেম্বর আখাউড়া মুক্ত দিবস” পালিত হয় তার পর থেকেই। সকাল সাড়ে ১০টায় জাতীয় সঙ্গীতের মাধ্যমে উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা, মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযোদ্ধার সন্তানেরা স্থানীয় ডাকঘরের সামনে জাতীয় পতাকা ও মুক্তিযোদ্ধার সংসদ সন্তান কমান্ডের পতাকা উত্তোলন করেন। আখাউড়া কেন্দ্রীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়। আর এভাবেই শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। জাতির বীর সন্তানদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন।
মুক্তিযুদ্ধের সময় এটি ছিল ২ নং সেক্টরের অধীনে। এস ফোর্সের অধিনায়ক লে. কর্নেল সফিউল্লাহর তত্ত্বাবধানে এই যুদ্ধ চলতে থাকে। যুদ্ধকালীন ৩০ নভেম্বর ও পহেলা ডিসেম্বর আখাউড়া উত্তরে সীমান্তবর্তী আজমপুর, রাজাপুর, সিঙ্গারবিল, মিরাশানি এলাকায় পাকিস্তানী বাহিনীর সাথে মুক্তিবাহিনীর যুদ্ধ হয়। টানা ৩ দিন চলে এই যুদ্ধ। এই যুদ্ধ অন্তত ৩৫ পাক সেনা নিহত হয়। বন্দী করা হয় ৫ জনকে। মুক্তি বাহিনীর নায়েক সুবেদার আশরাফ আলী খান এ সময় শহীদ হন। আহত হয় অনেক মুক্তিযোদ্ধা। মুক্তিযোদ্ধাদের মারমুখী আক্রমণে পাক বাহিনী দাঁড়াতে পারেনি। তারা তখন পিছু হটতে শুরু করে। পরে ৩ ডিসেম্বর রাতে মুক্তিবাহিনী আজমপুরে অবস্থান নিলে সেখানেও যুদ্ধ হয়। ওই যুদ্ধে পাক হানাদার বাহিনীর ১১জন সেনা নিহত হয়। মুক্তিবাহিনীর ২ সিপাহী ও ১ নায়েক সুবেদার শহীদ হন।
স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা জানান ১৯৭১ সালে ৭ মার্চ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ভাষণের পর থেকে আখাউড়ার সর্বস্তরের জনগণ মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন। মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনার জন্য দেশ প্রেমিক জনতা, বুদ্ধিজীবী, ছাত্র, যুবক, শ্রমিকসহ সর্বস্তরের জনগণের উপস্থিতিতে আখাউড়ায় গঠন করা হয় সর্ব দলীয় সংগ্রাম পরিষদ। ওই পরিষদের নেতৃত্বে ছিলেন কাজী ওয়াহেদুর রহমান লিলু মিয়া।
৪ এবং ৫ ডিসেম্বর অবিরাম যুদ্ধে পাক হানাদার বাহিনীর প্রায় ১৭০ জন সেনা নিহত হয়। তখন গোটা আখাউড়া এলাকা মুক্তিবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। ৬ ডিসেম্বর আখাউড়া পুরোপুরি হানাদার মুক্ত হয়। আখাউড়ার খরমপুর, দেবগ্রাম, তারাগন, নয়াদিল, দরুইন, টানমান্দাইল, গঙ্গাসাগর, কর্ণেল বাজার, মনিয়ন্দসহ বিভিন্ন স্থানে পাকিস্তানী বাহিনীর সাথে মুক্তিবাহিনীর যুদ্ধ হয়। বীর শ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামাল আখাউড়া দরুইনের মাটিতেই শহীদ হন।
গত বছর বর্ণিল আয়োজনে এইদিনটি পালন করা হয়েছিল। ওইদিন আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আবুল কাসেম ভ্ইূয়া, উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ নূর এ আলম, উপজেলা আওয়ামীলীগের আহবায়ক অধ্যক্ষ মো: জয়নাল আবেদীন, মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের সাবেক কমান্ডার সৈয়দ জামসেদ শাহ্, উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো: মেজবা উল ইসলাম, থানা অফিসার ইনচার্জ মো: রসুল আহমেদ নিজামী ও মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ডের সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন স্বাধীন প্রমুখ। এইবছরও প্রস্তুতি চলছে দিবসটি পালনের।