ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় এক হাজারের বেশি বিদ্যালয় শহীদ মিনারবিহীন

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় এক হাজারের বেশি বিদ্যালয় শহীদ মিনারবিহীন। ভাষা আন্দোলনের ৭১ বছর অতিবাহিত হলেও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের ১ হাজার ১০৫টি বিদ্যালয়ে কোনো শহীদ মিনার নেই। শহীদ মিনার না থাকায় জেলার অনেক শিক্ষার্থী আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের ইতিহাস ও মূল্যবোধ সম্পর্কে জানার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

বিদ্যালয় শহীদ মিনারবিহীন

শিক্ষক ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকারি অনুদানের অভাবে এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ না নেওয়ায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নির্মাণ হচ্ছে না। যাইহোক, কোনো বিদ্যালয় শহীদ মিনারবিহীন থাকলেও, কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা স্থানীয় উপকরণ যেমন কলাগাছ, বাঁশ, কাঠ, কাগজ এবং কোকশিট দিয়ে একটি অস্থায়ী মিনার তৈরি করে এবং ১লা ফেব্রুয়ারি শ্রদ্ধা নিবেদন করে।

জেলার প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের তথ্যমতে, ৯টি জেলায় প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে মোট ১ হাজার ৪১২টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। জেলার অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে একটি বেসরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, একটি সরকারি কলেজ এবং তিনটি বেসরকারি নার্সিং স্কুল, একটি হোমিওপ্যাথিক কলেজ, একটি সরকারি কলেজ এবং পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট, পাশাপাশি ৫-৭ টি বেসরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট এবং ৩টি কারিগরি কলেজ। ৮৭টি কিন্ডারগার্টেন স্কুল রয়েছে। সব মিলিয়ে জেলার ১৫১৭টি বিদ্যালয়ের মধ্যে মাত্র ৪১২টিতে একটি শহীদ মিনার রয়েছে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় এক হাজারের বেশি বিদ্যালয় শহীদ মিনারবিহীন।

জেলার মোট বিদ্যালয়ের মধ্যে ১০৭৮টি প্রাথমিক বিদ্যালয় ছিল, এর মধ্যে ৮৭৮টি বিদ্যালয়ে একটি শহীদ মিনার নেই। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে মাত্র ২২৯টি শহীদ নামের স্থায়ী মিনার রয়েছে। এ ছাড়া জেলার ২৬৪টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ১৫৩টিতে শহীদ মিনার নেই। ৫৯টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে একটি কলেজ ডিগ্রি বা তার বেশি, ৩০টিতে শহীদ মিনার রয়েছে। উপরন্তু, অধিকাংশ কিন্ডারগার্টেনে শহীদ মিনার নেই।

নাসিরনগর জেলার তিলপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্র শিক্ষক সঞ্জয় দেব জানান, তার বিদ্যালয়ে কোনো শহীদ মিনার নেই। তবে স্কুলের শিক্ষার্থীরা তাদের সংগ্রহ করা বিভিন্ন সামগ্রী ব্যবহার করে শহীদ মিনার নির্মাণ করেছে। মঙ্গলবার সকালে স্মৃতিস্তম্ভের কাছে ভাষা শহীদদের প্রতি পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়। তবে শিগগিরই শহীদ মিনার স্থাপনের বিষয়ে স্থানীয় জনগণ ও বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতিসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আতুকোন্ডা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নাজমুল হোসেন জানান, মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৫৩৪। বিদ্যালয়টি পুরাতন হওয়া সত্ত্বেও এখানে কোনো শহীদ মিনার নেই। তবে শিগগিরই স্থানীয়রা শহীদ মিনারটি নির্মাণ করবেন বলে জানান তিনি। ফেব্রুয়ারির প্রথম দিনে, তার স্কুল সকালের নামাজের সময় শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণে অংশ নেয়নি। তবে এদিনে ভাষা শহীদদের আত্মত্যাগ ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণ, প্রবন্ধ প্রতিযোগিতা, কবিতা পাঠ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উৎসবের অংশ হিসেবে রয়েছে।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা খোরশেদ আলম বলেন, প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার স্থাপনে সরকারি কোনো অর্থায়ন নেই। শহীদ মিনারটি মূলত স্থানীয়রা নির্মাণ করেন। জেলার যেসব বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার রয়েছে সেগুলো বিভিন্ন সূত্রের সহায়তায় নির্মাণ করা হয়েছে।

জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জুলফিকার হোসেন জানান, এসব প্রতিষ্ঠানসহ জেলায় মাধ্যমিক বিদ্যালয়, মাদ্রাসা ও বেসরকারি কলেজ রয়েছে ২৬৪টি। তবে অধিকাংশ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার স্থাপন করা হয়নি। মূলত সরকারি অর্থের অভাবে প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার স্থাপন করা যাচ্ছে না। তবে স্কুলগুলোতে শহীদ মিনার স্থাপনে স্থানীয় বাসিন্দা ও বিভিন্ন প্রকল্প সাহায্য করেছে।

সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) ব্রাহ্মণবাড়িয়া শাখার সভাপতি আবদুন নূর বলেন, ভাষা আন্দোলন ও শহীদদের ক্ষয়ক্ষতি কখনো ভোলার নয়। বাংলাদেশের ভাষা আন্দোলন ও স্বাধীনতার গৌরবময় ইতিহাস শিশু-কিশোর ও তরুণ-তরুণীদের সবসময় স্মরণ করিয়ে দিতে হবে। এই বিষয়ে প্রথম পদক্ষেপ স্কুল।

ফলে ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ দেশের প্রতিটি বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার স্থাপনে অংশগ্রহণ করতে হবে। পরবর্তীকালে, তরুণরা ভাষা পরিবর্তন, মাতৃভাষা দিবস এবং শহীদ মিনারের গুরুত্ব অনুধাবন করবে।

তুরস্ক-সিরিয়ায় ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা ১৭৯৭ জন (akhaura.local)

Related Posts

About The Author