বিদ্যুৎহীন ঝড়ে , অর্ধশতাধিক গ্রাম নাসিরনগরের।

ঝড়ে ঘরের টিন উড়ে এসে পড়েছে ফসলি জমিতে। সোমবার সকালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলা সদরে ।
রোববার রাত সাড়ে সাতটা থেকে রাত নয়টা পর্যন্ত নাসিরনগর উপজেলার ওপর দিয়ে কালবৈশাখী বয়ে যায়। জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঝড়ে উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের অন্তত ৪০টি বসতঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। উপজেলার বেরুইন গ্রামে বিদ্যুতের ৭টি বড় খুঁটিসহ ১৫টি খুঁটি উপড়ে পড়েছে। বিভিন্ন এলাকার অন্তত ৩০টি স্থানে বড় বড় গাছ ভেঙে বিদ্যুতের তারের ওপর পড়েছে। এর মধ্যে উপজেলা সদরের বিভিন্ন স্থানে ১০ থেকে ১২টি বড় গাছ ভেঙে বিদ্যুৎ সঞ্চালন তারের ওপর পড়েছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলায় কালবৈশাখীতে অন্তত ৪০টি বসতঘর, কয়েকটি দোকানপাটসহ হাঁস-মুরগির খামার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিদ্যুতের খুঁটি, মিটার ও সঞ্চালন লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে ভেঙে পড়েছে পুরো উপজেলার বিদ্যুৎ সরবরাহব্যবস্থা। উপজেলার আটটি ফিডারের মধ্যে আজ সোমবার বিকেল চারটা পর্যন্ত চারটি ফিডারে আংশিক বিদ্যুৎ সরবরাহ করা সম্ভব হয়েছে। তবে এখনো উপজেলার অন্তত ৬৬টি গ্রাম বিদ্যুৎহীন।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, কালবৈশাখীতে উপজেলা সদরে ৯টি, কুলিকুন্ডায় ৩, দাঁতমণ্ডলে ১০, নাসিরপুরে ৫, ধনকুড়ায় ৪ ও মন্নরপুর গ্রামে ৮ থেকে ১০টি ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উপজেলায় অন্তত ২০০ থেকে ২৫০টি মিটার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে উপজেলা সদরের নাসিরপুর গ্রামেই আছে ৪০টি মিটার। কালবৈশাখীতে উপজেলায় ১৩২টি গ্রামের জন্য থাকা ৮টি ফিডারে গতকাল রাত থেকে আজ বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ ছিল। বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে চারটি ফিডারে আংশিক বিদ্যুৎ সরবরাহ করা সম্ভব হয়েছে। এখনো উপজেলার অর্ধেকের বেশি গ্রামে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা সম্ভব হয়নি।

স্থানীয় লোকজন জানান, ঝড়ে অনেকের টিনশেড ঘরের চালা প্রায় দুই কিলোমিটার দূরে উড়িয়ে নিয়ে গেছে। ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিটি গ্রামের গাছপালা ভেঙে বিদ্যুতের তারের ওপর ঝুলে ছিল। কিছু কিছু এলাকায় কয়েকটি শতবর্ষী কৃষ্ণচূড়াগাছের গোড়া ঝড়ে উপড়ে গেছে।

দাঁতমণ্ডল গ্রামের আলী মিয়া বলেন, ঝড় তাঁর একটি নতুন আধপাকা টিনশেডের ঘর উড়িয়ে দুই কিলোমিটার দূরে নিয়ে গেছে। এতে প্রায় ৩ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।

নাসিরনগর পল্লী বিদ্যুৎ কার্যালয়ের উপমহাব্যবস্থাপক মো. আমজাদ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, কালবৈশাখীতে উপজেলার বিদ্যুৎব্যবস্থা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। উপজেলার বেরুইন গ্রামে বিদ্যুতের ৭টিসহ মোট ১৫টি বড় খুঁটি ভেঙে গেছে। ২০০ থেকে ২৫০টি মিটার, ৩০টি স্থানের বিদ্যুতের তারের ওপর গাছ ভেঙে পড়েছে। এর মধ্যে উপজেলা সদরের নাসিরপুর গ্রামে ৪০টি বড় গাছ এবং উপজেলা সদরেই ১০ থেকে ১২টি বড় গাছ ভেঙে বিদ্যুতের তারের ওপর পড়েছে।

আমজাদ হোসেন বলেন, উপজেলায় মোট আটটি ফিডার রয়েছে। বিকেল সাড়ে চারটা পর্যন্ত চারটি ফিডারে আংশিক বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া সম্ভব হয়েছে। এখনো উপজেলার অর্ধেকের বেশি এলাকা বিদ্যুৎহীন রয়েছে। তাঁদের লোকজন কাজ করছেন। পুরো উপজেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে রাত পর্যন্ত সময় লেগে যাবে।

এদিকে কালবৈশাখীতে জেলার বিজয়নগর উপজেলায় অন্তত ১১টি বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

Related Posts

About The Author