নিজস্ব প্রতিবেদক, এস এম শাহনূর – আখাউড়া ডট কম
ঋতুরাজ বসন্তের শুরু, সেই সাথে শুরু হলো বাঙালির সেরা উৎসব বইমেলা। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৫ ফেব্রুয়ারি অমর একুশে বইমেলা ২০২২ এর শুভ উদ্বোধন করলেন। প্রতিদিন বাড়ছে দর্শনার্থী, যুক্ত হচ্ছে নতুন বই, বাড়ছে কবি লেখকদের আনাগোনা।
মেলায় করোনাকালীন সামাজিক দূরত্ব উপেক্ষিত, তবে সকলেরই মাস্ক পরিধান করা উচিৎ। ভাসমান হকারের কথা বাদ দিলে মেলায় চার শ্রেণির মানুষ দেখতে পাবেন। এঁরা হলেন উৎসুক দর্শনার্থী, মুগ্ধ পাঠক, নিবেদিত বিক্রয়কর্মী ও পরোপকারী লেখক সমাজ। উক্ত চার শ্রেণির মানুষের কাছে আমার কিছু নিবেদন।
১। সকল প্রকার দর্শনার্থীদের মনে রাখতে হবে এটি বিশেষ এক ধরনের মেলা, যেখানে মহাকালের জ্ঞান পুঞ্জিভূত। আপনি ইচ্ছে করলে বই না কিনেও বহুকালের পুঞ্জিভূত জ্ঞানসাগরে ডুব দিয়ে আসতে পারেন। এতে আপনার শরীরের ময়লা পরিস্কার না হলেও মন পরিশুদ্ধ হবে।
২। মেলায় বই কেনার উদ্দেশ্যে যারা যান, সবাই ব্যক্তি জীবনে বইয়ের পাঠক। এঁরা সারা বছরই কোনো না কোন বই কিনে থাকেন। বইমেলার জন্য নূন্যতম একটি বাজেট রাখেন। মেলা থেকে নিজের জন্য, পরিবার, বন্ধু ও নিকটাত্মীয়দের জন্য পছন্দের বই সংগ্রহ করেন। নৈমিত্তিক প্রয়োজনে আপনি অনেক পয়সা খরচ করেন, এবার বইমেলায় অন্যবারের চেয়ে ২/৪টি বই বেশি কিনুন। ভাবছেন, পছন্দের বইটির মূল্য বেশি? মনে রাখুন, আর সবকিছুর সাথে পাল্লা দিয়ে বইয়ের মূল্য বাড়ানো হয়না। আরেকটি কথা, আপনার পরিচিত বা প্রিয় লেখকের সাথে দেখা হলে বিনামূল্যে বই আশা করবেন না। এটা আপনার পাঠক চিত্তকে অপমান করার শামিল।
৩। দেশের স্বনামধন্য প্রকাশক, পরিবেশক ও বই বিক্রেতাগণের পাশাপাশি বহু সংগঠনেরও মেলায় স্টল রয়েছে। নান্দনিকভাবে সাজানো হয়েছে বিপণীগুলো। মেলা উপলক্ষে অনুসন্ধিৎসু পাঠক, ক্রেতা ও দর্শনার্থীদের সুবিধার্থে প্রায় সকল স্টলেই খন্ডকালীন স্মার্ট/বিনয়ী অতিরিক্ত বিক্রয়কর্মী নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। আপনাকেই বলছি, মনে রাখবেন বই এমন কোনো পণ্য নয় যে, পঁচে যাবে, গলে যাবে, লোকসান হবে, কাস্টমারকে জোরপূর্বক গলাধঃকরণ করাতে হবে। বইক্রেতা কখনো কাস্টমার নয়। ব্যবসা বা শুধু মুনাফা অর্জনের জন্য কোন প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান মেলায় স্টল বরাদ্দ নেননি। ব্যবসার সাথে ব্যবসায়িক সুনাম ও জাতির প্রতি দায়বদ্ধতার বিষয়টিও ওতপ্রোতভাবে জড়িত।
৪। যে কোন সমাজ ও রাষ্ট্রের সবচেয়ে প্রতিভাবান মানুষটি কিন্তু একজন কবি, একজন লেখক, একজন গবেষক ও একজন শিল্পী। যাঁরা নিজের জন্য নয় বরং সময়ের প্রয়োজনে পরার্থে নিজের মেধা, সময় ও শ্রম বিনিয়োগ করেন। বিনিময়ে যা চান, তা অতি নগণ্য। যা চান, তার নাম সুনাম ও স্বীকৃতি। বইমেলার আরেক নাম লেখক পাঠক ও প্রকাশকের মিলন মেলা। এখানে প্রিয় লেখকের হাত থেকে অটোগ্রাফ সম্বলিত বই নেওয়া যায়। সরাসরি ভাব বিনিময়ের সুযোগ থাকে। লেখক মাত্রই মনে রাখি, পরিচিত কাউকে নিজের বই কেনার জন্য পিড়াপিড়ি নয়। তবে চাইলে আপনার উপস্থিতিতে সর্বোচ্চ ছাড়ে তাকে বইটি দিতে পারেন। এতে লেখকের প্রতি পাঠক/ক্রেতার অতিরিক্ত শ্রদ্ধা ও আকর্ষণ বাড়বে।
আরও পড়ুনঃ মহান ভাষা আন্দোলনে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অবদান
বইমেলায় যারা আসেন সকলের প্রতি আহবান, অনন্ত একটি বই কিনুন। অমর একুশে বইমেলার সুফল জাতীয় জীবনে প্রতিফলিত হোক। জাতি হোক আলোকিত।
লেখক: এস এম শাহনূর
কবি ও গবেষক।