দেড় মাস চালু থাকার পর এবার কারিগরি কারণে বন্ধ হয়ে গেল বাগেরহাটের রামপাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র। গত বছরের ডিসেম্বরে একটি ইউনিট উৎপাদনে আসার পর এ পর্যন্ত কয়েক দফায় বন্ধ হয়েছে ভারত-বাংলাদেশ যৌথ মালিকানায় নির্মিত কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটি। এবার কেন্দ্রটিতে বিদ্যুৎ উৎপাদন এক সপ্তাহের মতো বন্ধ থাকতে পারে।
রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র সূত্র বলছে, গত শুক্রবার রাতে কেন্দ্রে যান্ত্রিক ত্রুটি ধরা পড়ে। এরপর বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ করে দেওয়া হয়। এখন এটি পুনরায় চালু করতে কারিগরি ত্রুটি সারানোর কাজ চলছে। একই সঙ্গে নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণের কাজও করা হচ্ছে। টানা এক সপ্তাহ বৃষ্টি কম থাকায় বর্তমানে বিদ্যুতের চাহিদা কম। তাই এ সময় এটি বন্ধ থাকায় তেমন ঘাটতি তৈরি হবে না।
এর আগে ১৫ এপ্রিল বিদ্যুৎকেন্দ্রটি যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে বন্ধ হয়ে যায়। চার দিন পর এটি আবার চালু হয়। কিন্তু ডলার–সংকটে কয়লা আমদানি করতে না পারায় ২৪ এপ্রিল এটি আবার বন্ধ করা হয়। ২৩ দিন পর ১৬ মে রাতে কেন্দ্রটিতে আবার বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয়। তবে আপাতত কেন্দ্রটিতে কয়লা সরবরাহের ঘাটতি নেই।
বিদ্যুৎকেন্দ্রটি পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া পার্টনারশিপ পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেডের (বিআইএফপিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাঈদ একরাম উল্লাহ আজ প্রথম আলোকে বলেন, বিদ্যুৎকেন্দ্রটি দেড় মাস ধরে টানা চলছিল। রক্ষণাবেক্ষণের জন্য এখন নিয়মিত পরিদর্শনের সময় হয়েছে। এর মধ্যে ছোটখাটো কিছু যান্ত্রিক ত্রুটিও ধরা পড়েছে। এক সপ্তাহের মধ্যে এটি আবার চালু করা হতে পারে।
চুক্তির প্রায় ১০ বছর পর গত বছরের ২৩ ডিসেম্বর রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিট থেকে বাণিজ্যিকভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হয়। কিন্তু কয়লার অভাবে ১৪ জানুয়ারি বন্ধ হয়ে যায় উৎপাদন। মূলত ডলার-সংকটে ঋণপত্র খুলতে না পারায় কয়লা আমদানি নিয়ে জটিলতা দেখা দেয়। একপর্যায়ে কয়লার অভাবে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি বন্ধ হয়ে যায়। এক মাস পর আবার উৎপাদনে ফেরে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি। বিদ্যুৎকেন্দ্রটির একটি ইউনিট থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে দিনে পাঁচ হাজার টন কয়লা লাগে। একটি জাহাজ এলে এক সপ্তাহের মতো বিদ্যুৎকেন্দ্রটির উৎপাদন সচল রাখা যায়।
রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রে ৬৬০ মেগাওয়াট ক্ষমতার দুটি ইউনিট আছে। শুরু থেকেই এটি উৎপাদনে আসার সময় দফায় দফায় পিছিয়েছে। এরপর প্রথমটি চালুর পর এ পর্যন্ত দুই দফা কয়লার কারণে এবং দুই দফা কারিগরি কারণে বন্ধ করা হয়েছে। আর গত ২৯ জুন দ্বিতীয় ইউনিট বিদ্যুৎ সঞ্চালনের জাতীয় গ্রিডের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। এটি থেকে বাণিজ্যিকভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হতে আরও অন্তত দুই মাস লাগতে পারে।
রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র সূত্র বলছে, বিদ্যুৎকেন্দ্রের দুটি ইউনিট চালু হলে দিনে কয়লা লাগবে ১০ হাজার টন। বর্তমানে তাদের ছয় লাখ টন কয়লার ক্রয়াদেশ দেওয়া আছে।
নতুন করে ডাকা দরপত্রে অংশ নিয়ে আরও ৬০ লাখ টন কয়লার ক্রয়াদেশ পেয়েছে দেশের বেসরকারি খাতের শীর্ষস্থানীয় একটি ব্যবসায়িক গ্রুপ। শুরু থেকে তারাই এই কেন্দ্রে কয়লা সরবরাহ করছে। ৬০ লাখ টন কয়লা দিয়ে আগামী তিন বছর রামপাল কেন্দ্রে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাবে। ইন্দোনেশিয়া থেকে আনা হচ্ছে এসব কয়লা।
২০১০ সালে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত সমঝোতা স্মারকের আওতায় রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্প নেওয়া হয়। ২০১২ সালে গঠিত হয় বিআইএফপিসিএল।
২০১৩ সালে পিডিবির সঙ্গে বিদ্যুৎ কেনার চুক্তি হয় ওই কোম্পানির। ২০১৬ সালের মধ্যে নির্মাণকাজ শুরুর কথা থাকলেও সেটি হয় ২০১৭ সালে। ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদনে যাওয়ার কথা ছিল কেন্দ্রটির। সুন্দরবনের কাছে এই বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ নিয়ে শুরু থেকেই আপত্তি জানিয়ে আসছেন পরিবেশবাদীরা।