প্রতি যাত্রীর জন্যে টিকেটে দুইটি করে লাগেজ নেয়ার বিধিবিধান উল্লেখ করে দেয়ার পরও প্রবাসী বাংলাদেশিদের কাছ থেকে একটি লাগেজের নিয়ম দেখিয়ে কুয়েত এয়ারওয়েজ কর্মীদের বাড়তি ক্যাশ অর্থ আদায়ের অভিযোগ এসেছে সম্প্রতি।ঘটনাটি ঘটেছে যুক্তরাষ্ট্রের আটলান্টা থেকে বাংলাদেশে বেড়াতে যাওয়া বাংলাদেশি আমেরিকান নাগরিক রাসেল ভুঁইয়া পরিবারের ক্ষেত্রে ঢাকা এয়ারপোর্টের টিকেট কাউণ্টারে।
আটলান্টার টাকার অটো বডি শপ এর স্বত্বাধিকারী প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী রাসেল ভুঁইয়া গত সামারে ঈদের আনন্দ স্বজনদের সাথে উপভোগ করতে স্ত্রী সন্তান ও এক বন্ধুসহ পাঁচ সদস্যের পরিবার নিয়ে গিয়েছিলেন বাংলাদেশে। নিউ ইয়র্ক থেকে নামীদামী প্রতিষ্ঠিত ট্র্যাভেল এজেন্সী এয়ার সেভিংসএর কাছ থেকে ই টিকেট ক্রয় করে বহাল তবিয়তেই আটলান্টা থেকে কানেটিং ফ্লাইট হয়ে পরে নিউইয়র্ক থেকে কুয়েত এয়ারওয়েজ যোগে ঢাকা পৌঁছেছিলেন তিনি। সামারের ছুটি ও ঈদের আনন্দ স্বদেশের সকল আত্মীয় স্বজনদের সাথে উপভোগ করার পর বিধি বাম হল যুক্তরাষ্ট্রে ফেরার পথে গত ৩ আগস্ট ঢাকা এয়ারপোর্টে।
রাসেল ভুঁইয়া তিক্ত অভিজ্ঞতা নিয়ে আটলান্টায় প্রত্যাবর্তনের পর তীব্র হতাশা ও ক্ষুব্ধ চিত্তে এই প্রতিবেদককে জানান, ই টিকেটে পরিস্কার ইংরেজী হরফে প্রতি যাত্রীর জন্যে দুইটি করে লাগেজ বহনের উল্লেখ থাকা সত্ত্বেও ঢাকা এয়ারপোর্টের টিকেট কাউণ্টারের কর্তব্যরত কুয়েত এয়ারওয়েজের বাংলাদেশী কর্মচারী প্রতি যাত্রীর জন্যে মাত্র একটি করে লাগেজ বহনের বিধানের উল্লেখ করে বাড়তি দ্বিতীয় কাগেজের জন্যে একশত চল্লিশ ডলার অর্থাৎ বাংলাদেশি মুদ্রায় এগার হাজার তিন শত টাকা হিসেবে পাঁচজনের পাঁচটি লাগেজের জন্যে মোট ছাপ্পান্ন হাজার পাঁচশত টাকা অর্থাৎ সাত শত ডলার ক্যাশ মুদ্রা পরিশোধের জন্যে চাপ দিয়েছিলেন।
রাসেল ভুঁইয়া আকস্মিকভাবে এধরনের আচরণের হতবাক ও একটি লাগেজের বিধানটি সম্পূর্ণ অবৈধ বলে চ্যালেঞ্জ করলেও জনৈক কুয়েত বিমানের ঐ কর্মচারী উক্ত অর্থ আদায়ের ব্যাপারে অটল থাকেন এবং ক্যাশ অর্থ পরিশোধ না করলে একটি করেই লাগেজ নিয়ে যেতে হবে বলে পরিস্কার ভাষায় জানিয়ে দেন।রাসেল বলেন, সে সময় ভাগ্য কিছুটা আমার পক্ষে ছিল বলে প্লেনটা ছাড়তে প্রায় তিন ঘণ্টা বিলম্ব হয়েছিল। ফলে আমি ওদের সিনিয়র কর্মকর্তা ও সুপারভাইজারের সাথে কথা বলার জন্যে অনুরোধ জানালাম। কিন্তু তাতেও কাজ হল না, কাউন্টারের কর্মচারীটি বললেন, সুপারভাইজার এখন অফ ডিউটিতে আছেন, কারো সাথেই কথা হবেনা।
এরপর রাসেল তাঁর স্মার্ট ফোন থেকে ই-টিকেটের কপিতে যে দুইটি করে লাগেজ নেয়ার নির্দেশনা দেয়া আছে এবং আটলান্টা থেকে তাঁরা দুইটি করেই লাগেজ নিয়ে এসেছেন, সেটি সচক্ষে দেখানোর প্রাণপন চেষ্টা চালালেন। কিন্তু তাতেও কাজ হল না। উত্তরে কর্মচারী জানালেন, আপনার টিকেটে কি লেখা আছে, সেটা আমার জানার জানার বিষয় না, আমার কম্পিউটারে যা লেখা আছে, সেইটাই আমি ফলো করবো।রাসেল ছেড়ে দেবার পাত্র নন। তিনি এবারে সরাসরি কুয়েত এয়ার ওয়েজের হেড অফিসে ফোন লাগালেন, কিন্তু দুভাগ্য, কেউ ফোন ধরছিল না। পরে তিনি কুয়েত এয়ারওয়েজের নিজস্ব ওয়েব সাইট থেকে তাঁদের পুরো টিকেটের সমস্ত তথ্যাবলি বের করে সেখান থেকে আবারও দুইটি লাগেজ বহনের নির্দেশনাটি কর্মচারীর চোখের সামনে তুলে ধরলেন। রাসেল বললেন, আল্লাহর অশেষ রহমত নাজিল হল মনে হয় শেষ মেশ, কিন্তু কর্মচারীটির ক্যাশ অর্থ আদায়ের আকাংখাটি সফল না হাওয়ায় তার ক্ষমতাকে কিছুটা ঘুরিয়ে নিম রাজী হলেন এই সর্তে যে, আটলান্টা পর্যন্ত দেয়া যাবেনা, নিউ ইয়র্ক পর্যন্ত দেয়া যাবে।
রাসেল বললেন, শেষে মন্দের ভালো হিসেবে নিউ ইয়র্ক পর্যন্তই দুইটি করে লাগেজ নিয়ে এলাম । তাঁর ভাষায়, ছেড়ে দ্যা মা কেঁদে বাঁচি। ফলে সেই যাত্রায় রাসেল ভুঁইয়া নিউ ইয়র্ক থেকে বাকী পাঁচটি লাগেজ বিধি থাকা সত্ত্বেও অতিরিক্ত ফী পরিশোধ করে আটলান্টায় ফিরে এসেছেন।রাসেলের মতে, কুয়েত এয়ারওয়েজের ঢাকা এয়ারপোর্টের কাউণ্টারে এভাবেই অসংখ্য প্রবাসীদের কাছ থেকে অবৈধভাবে বাড়তি অর্থ কামিয়ে নিচ্ছে বাংলাদেশি কুয়েত এয়ারওয়েজ কর্মচারীরা। আর রাসেলের মত যারা এইভাবে প্রতিবাদী হয়ে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিতে সক্ষম হচ্ছেন, শুধুমাত্র তাঁরাই কোনরকমে পরিত্রান পেয়ে যাচ্ছেন।রাসেল ভুঁইয়া এই প্রতিবেদকে পরে জানালেন যে, তিনি আটলান্টা ফিরেই কুয়েত এয়ারওয়েজ প্রধান অফিসে অভিযোগ দাখিল করেছেন এবং কর্তৃপক্ষ রাসেলকে এই ঘটনাটির সুষ্ঠু তদন্ত করে তাঁর প্রতিকার করবে বলে আশ্বাস দিলেও আজ পর্যন্ত কোন আপ ডেট পান নি বলে জানান।
পরিশেষে রাসেল যুক্তরাষ্ট্রের সকল প্রবাসীদেরকে কুয়েত এয়ারওয়েজে ভ্রমণের ব্যাপারে বিশেষ করে ঢাকা এয়ারপোর্টের সেইসব কর্মচারীদের হয়রানি থেকে নিরাপদ থাকতে সতর্কতা অবলম্বনের আহবান জানিয়েছেন।