নিজস্ব প্রতিবেদক, এস এম শাহনূর – আখাউড়া ডট কম
যে কোন জনপদের ঐতিহ্যের স্মারক তাঁর অতীত জীবনের ইতিকথা। বাংলাদেশের প্রাচীনতম জনপদ সমতটের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসের সাথে এর ভূ-প্রকৃতির উৎপত্তি ও এতদ অঞ্চলে প্রথম বসবাসকারী জনগোষ্ঠীর জীবন গাঁথাও অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। এর পরিচয় জানতে হলে ফিরে যেতে হবে সহস্রাধিক বছরের নিরন্ধ্র পথে। কখনও কখনও আমাদের হৃদয়ে সতত প্রশ্ন দেখা দেয় কিভাবে ভাটি অঞ্চলের বুকে জেগে উঠা চরাভূমির প্রশস্ত ললাটে প্রতিভাত হয় ব্রাহ্মণবাড়িয়া নামের রক্তিম আভা; কোন সাধকের পুণ্যপাদস্পর্শে ধন্য হয়েছে এখানকার মাটি ও মানুষ; সৃষ্টি হয় ইতিহাসের এক স্বর্ণাধ্যয়।
বাংলা ভাটা বা ভাটি শব্দ থেকে ‘ভাটি অঞ্চল’’ নামের উৎপত্তি। বাংলাদেশ নদী মাতৃক দেশ। গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্রের মতো বৃহৎ নদীগুলো এবং তাদের অসংখ্য শাখা সমগ্র পূর্ব ও দক্ষিণ বাংলার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে এ অঞ্চলের অধিকাংশ এলাকাকেই বছরের অর্ধেকের চেয়ে বেশি সময় প্লাবিত করে। তাই গবেষকগণ বাংলার বিভিন্ন অংশকে ভাটিরূপে শনাক্ত করেন।
আকবরনামা ও বাহারিস্তান-ই-গায়েবীতে প্রদত্ত যুদ্ধ বিগ্রহের বিস্তারিত বিবরণের ভিত্তিতে ভাটি অঞ্চল হলো পশ্চিমে ইছামতি নদী, দক্ষিণে গঙ্গা (পদ্মা) নদী, পূর্বে ত্রিপুরা রাজ্য এবং উত্তরে বৃহত্তর ময়মনসিংহসহ উত্তর-পূর্বে সিলেটের বানিয়াচং। তিনটি বড় নদী গঙ্গা (পদ্মা), ব্রহ্মপুত্র এবং মেঘনা ও তাদের শাখা-প্রশাখা বিধৌত ঢাকা, ময়মনসিংহ, ত্রিপুরা ও সিলেট বেষ্টিত নিম্নাঞ্চল হলো ভাটি অঞ্চল।
ব্রাহ্মণ বাড়িয়া জেলার ৯টি উপজেলার নামকরণের ইতিকথা লিখতে গিয়ে পড়তে হয়েছে বহু গ্রন্থরাজি, শুনতে হয়েছে লৌকিত অলৌকি কল্প কাহিনী। স্থান নামগুলোর নামকরণের তথ্য উদঘাটন করতে গিয়ে বেরিয়ে এসেছে ভাটি অঞ্চলের ভূ-প্রকৃতির উৎপত্তির নানান তথ্য।
কালিদাস সাগরের বুকে জেগে উঠা চরই আজকের ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ইতিহাস অতি প্রাচীন। অসংখ্য কিংবদন্তী এবং ঐতিহাসিক ঘটনাবলী ও তথ্যাবলীতে সমৃদ্ধ। প্রাচীন ইতিহাস থেকে অনুমান করা হয়, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সমগ্র অঞ্চল এককালে নদীগর্ভে বিলীন ছিল। প্রাচীন জনপদ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার প্রাচীনত্ব সম্পর্কে বহু প্রমাণ পাওয়া যায়। মহাভারত প্রণেতা বেদব্যাসের ‘পদ্মপুরান’ গ্রন্থে জনশ্রুতি আছে, কালিদহ সায়র বা কালিদাস সাগরের তলদেশ থেকে ধীরে ধীরে স্থল ও জনপদে রূপান্তরিত হয় জেলার বৃহত্তর অংশ, তাও আবার একাদশ থেকে ষোড়শ শতকের মধ্যবর্তী সময়ে। প্রিয় পাঠক, আপনি কি ভাবছেন? আমাদের প্রিয় ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আসলেই কি এক সময় কালিদাস সাগরের তলদেশ নিমজ্জিত ছিল? কিংবা কালিদাস সাগরের তলদেশ থেকে ধীরে ধীরে জেগে উঠা চর? এমন ভাবনা যদি আপনার জিজ্ঞাসা হবে তবে আমার সাথে যোগ দিন। আর আবিস্কার করুন ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার ভূ-প্রকৃতির উৎপত্তি রহস্য।
- বিভিন্ন ইতিহাস ও প্রাচীন পান্ডুলিপি থেকে জানা যায়, বৃহত্তর সিলেট ও বৃহত্তর ময়মনসিংহের একটি বড় অংশ এক সময় কালীদহ সাগর’ (মতান্তরে লৌহিত্য সাগর) নামে একটি বিশাল জলরাশিতে নিমজ্জিত ছিল। পরবর্তীতে ভূ-প্রাকৃতিক বিবর্তনের ফলে তা পিরিচ আকৃতির নিন্ম সমতল ভুমিতে পরিণত হয়- যা পরিচিত হয় হাওর নামে। হাওর শব্দটির উৎপত্তিও সাগর থেকে সায়র; আর সায়র অপভ্রংশ হয়ে হাওর হয়েছে বলে ভাষা বিজ্ঞানীদের মত। অবশ্য, ‘হাওর’ নাম নিয়েও সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা রয়েছ। এ অঞ্চলের লোকেরা ‘স’ কে ‘হ’ বলে উচ্চারণ করে। তেমনি ‘সাগর’ কে বলে ‘হাগর’। এভাবেই ‘সাগর’ শব্দের বিকৃত রুপ হিসাবে ‘হাগর’ এবং ‘হাগর’ থেকে ‘হাওর’ শব্দের উৎপত্তি হয়। উল্লেখ, ভাটি অঞ্চল নামেও হাওরাঞ্চলের আরেকটি পরিচিতি রয়েছে। প্রসঙ্গত, দেশের সাতটি উপজেলা নিয়ে বিশাল হাওর এলাকা গঠিত। জেলা গুলো হচ্ছেঃ নেত্রকোণা, কিশোরগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, সিলেট, মৌলভী বাজার, হবিগঞ্জ ও ব্রাহ্মনবাড়িয়ার একাংশ।
একটা ছিল সোনার কন্যা, মেঘবরণ কেশ
ভাটি অঞ্চলে ছিল সেই কন্যার দেশ।
হ্যাঁ, এই ভাটি অঞ্চল ই হচ্ছে সুজলা-সুফলা-শস্য-শ্যামলা বলতে যা বুঝায় ঠিক তাই। পুরো অঞ্চলটাই এক সময় হাওর (সাগর) এলাকা হিসেবে পরিচিত ছিল। বিখ্যাত হাকালুকি ও টাঙ্গুয়ার হাওর এখানেই। কিশোরগঞ্জের ইটনা, মিঠামইন ও অষ্টগ্রাম এর পুরোটা, নিকলী, তাড়াইল ও করিমগঞ্জের কিছু অংশ, নেত্রকোণার খালিয়াজুড়ী, হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জ এবং সুনামগঞ্জের কিছু এলাকাজুড়ে এই হাওর বিস্তৃত। বর্ষায় বিস্তীর্ণ এলাকা পানিতে তলিয়ে মহাসাগরের রুপ নেয়। উত্তরদিকে তাকালে একেবারে মেঘালয় সীমান্ত পর্যন্ত প্রায় দুইশ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে শুধু পানি আর পানি। নিজের চোঁখে না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন। সুরমা নদীর একটি অংশ ধনু নদী নামে অবিভক্ত বাংলার প্রথম ব্যারিস্টার আনন্দমোহন বসুর জন্মস্থান ইটনা উপজেলার মধ্যে দিয়ে বয়ে গেছে। কিশোরগঞ্জ হতে দক্ষিণ-পূর্ব দিকে অষ্টগ্রাম উপজেলার অবস্থান। অষ্টগ্রাম উপজেলা আজো একটি হাওর বেষ্টিত যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন উপজেলা।
বাংলাদেশ ষড়ঋতুর দেশ। কিন্তু হাওরে ঋতু মাত্র দু’টি। একটি বর্ষা। অন্যটি হেমন্ত। বছরের প্রায় পাঁচ-ছ’মাস এখানে বর্ষা থাকে। বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ থেকে শুরু হয়ে বর্ষা শেষ হয় আশ্বিন-কার্তিকে। এ সময় হাওর সাগরের রুপ ফিরে পায়। পানিতে একাকার হয়ে যায় সব মাঠ-ঘাট। হাওর আমাদের শস্যভাণ্ডার ও মৎস্যভাণ্ডার। ভরা বর্ষা হচ্ছে হাওরের যৌবনকাল একই সাথে নিদানকাল। চারদিকে পানি, শুধু পানি, থৈ থৈ করে। টলমল, উচ্ছ্বাস জলে জলকেলি খেলে প্রকৃতি,পানির মধ্যে দাপাদাপি বড়ই আনন্দের। সমুদ্রের সাথে হাওরের পার্থক্য হচ্ছে সমুদ্রের গভীরে সাঁতার কাটা, ডুব দেয়া, মাছ ধরা বা ঘুরে বেড়ানোর সুযোগ খুব কম পাওয়া যায়।নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র মতে, এখানে প্রায় ৮ হাজার বর্গকিলোমিটার আয়তনের হাওর এলাকায় (প্রায়) ২০ মিলিয়ন লোক বসবাস করে। ভাটির বাংলায় রয়েছে মোট ৩৭৩টি হাওর। দেশের পূর্ব-উত্তরাংশের কিশোরগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, নেত্রকোনা, সিলেট, মৌলভীবাজার হবিগঞ্জ ও ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়ার ৫৭টি উপজেলা নিয়ে ভাটির বাংলার হাওর এলাকা গঠিত। হাওর হচ্ছে একটা বিশাল চ্যাপ্টা বাটির মতো, হাওরের আছে ব্যাঞ্জরিত নাম। টাঙুয়ার হাওর, হাকালুকি হাওর, শনির হাওর, টগার হাওর, মাটিয়ান হাওর, দেখার হাওর, হালির হাওর, সানুয়াডাকুয়া হাওর, শৈলচকরা হাওর, বড় হাওর, হৈমান হাওর, কড়চা হাওর, ধলা পাকনা হাওর, আঙ্গরখালি হাওর, নখলা হাওর, চন্দ্রসোনার থাল হাওর, ডিঙ্গাপুতা হাওর আরও কত নাম।
- কবে কোন অমানিশার অন্ধকার থেকে বেরিয়ে প্রথম আলোর মুখ দেখেছিল এই অঞ্চল? হয়েছিল প্রথম মানব বসতির সূচনা? এর উত্তর নিশ্চিত করে বলা কঠিন। ইতিহাস থেকে জানা যায়, লৌহিত্য সাগর থেকে নিম্ন সমভুমিতে (প্লাবন সমভূমি) পরিণত হওয়ার পরও বহু বছর বিরান পড়ে ছিল হাওর এলাকা। এরপর পলিমাটি বিধৌত এ উর্বর ভূমিতে প্রথম বসতি স্থাপন করে অস্ট্রো-মঙ্গোলিয়ান জাতি গোষ্ঠীর কোচ, হাজং, গারো ও খাসিয়া উপজাতিরা। এর মধ্যে কোচরাই ছিল সংখ্যাধিক্য। তারাই এসে প্রথম সেখানে অনেক উচু করে বাস্ত্তভিটা নির্মাণ করে এবং শুরু করে জমির চাষাবাদ এবং মাছ ধরার পেশা। এরপর এক সময় অঞ্চলটি কামরুপ রাজ্যের অধীনে চলে যায়। ততদিনে বিভিন্ন স্থানে প্রচার হয়ে যায় এ উর্বর ভূমির খবর। তাই সে ভূ সম্পত্তির মালিকানা পেতে উপজাতিদের পাশাপাশি অন্যান্য সম্প্রদায়ের লোকজনও ছুটে আসে সেখানে। আর এভাবেই হাওর জনপদে গড়ে ওঠেছিল বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর এক মিশ্র মেলবন্ধন। যাদের উত্তরসূরীদের নিয়ে হাওর অঞ্চল এখনও মাথা নুয়ে শুয়ে আছে হিজল-করচের ছায়ায়।
অনুমান করা হয়, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কিশোরগঞ্জ, কুমিল্লা, সুনামগঞ্জ ও সিলেট বিভাগের বেশীর ভাগ অঞ্চল এককালে কালিদহ সায়র বা কালিদাস সাগরের বুকে নিমজ্জিত ছিল যা কালে কালে পলি ভরাট জনিত কারণে ও ভূ-প্রাকৃতিক পরিবর্তনের সূত্র ধরে ভূখণ্ডে পরিণত হয়েছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও কুমিল্লার ভূগর্ভে বিস্তৃত এলাকা জুড়ে গ্যাস খনি, সুনামগঞ্জের ভূগর্ভে চুনা পাথরের খনি ও কয়লা আবিষ্কারের ফলে এরূপ চিন্তার সক্রিয় সমর্থন পাওয়া যাচ্ছে। সুনামগঞ্জের টেকেরঘাটে প্রাপ্ত চুনাপাথর এক ধরণের ক্যালসিয়াম যা সামুদ্রিক প্রাচীন শামুক ও শৈবাল দ্বারা সৃষ্ট। এতেও পূর্বোক্ত ধারণার পেছনে বৈজ্ঞানিক যোগ সূত্র খুঁজে পাওয়া যায়।এ ছাড়া এখানকার শত শত হাওরের গঠন প্রকৃতি (basin type) বিশ্লেষণ করেও এ মতের সমর্থন দৃঢ় ভিত্তিতে দাঁড়িয়ে যাচ্ছে। প্রায় সব ঐতিহাসিক সূত্র মতে, এতদ অঞ্চলের বিশাল ভূখণ্ড যে সাগর বক্ষ থেকে জেগে উঠেছে সে সাগরকে ‘কালিদহ’ সাগর বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। হাছন রাজার জ্যেষ্ঠ পুত্র খান বাহাদুর দেওয়ান গনিউর রাজা চৌধুরীর আত্মজীবনীমূলক রোজনামচাতেও এর উল্লেখ রয়েছে; রয়েছে বিভিন্ন আঞ্চলিক গান, পালা-পার্বণের অনুষ্ঠানগুলিতেও।
সিলেটের কালেক্টর মিঃ লিন্ডসের অষ্টাদশ শতাব্দীতে লিখিত বর্ণনা থেকেও এর সমর্থন পাওয়া যায়। তিনি লিখেছেন- “In the pre Historic days the southern part of Sadar Subdivision and the northern part of Moulivibazar and Habiganj Subdivision and nearly the entire Sunamganj Subdivision were a part of Bay of Bengal.”
মাটির ওপর জলের বসতি, জলে ওপর ঢেউ
ঢেউয়ের সাথে পবনের পিরিতি, নগরে জানে না কেউ”
হাওর শব্দটি সায়র (সাগর) থেকে এসেছে। বর্ষাকালে সিলেটের হাওরগুলো এখনো সে রূপই ধারণ করে। সুদূর অতীতে এই কালিদহ সাগর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল, যার উপর দিয়ে ১০১১ খ্রিষ্টাব্দে চৈনিক পরিব্রাজক হিউয়েন সাং জাহাজে করে সরাসরি তাম্রলিপ্ত থেকে সিলেট পৌঁছেছিলেন বলে তাঁর লেখা থেকে জানা যায়। তাঁর মতে, নহরী আজরক নামে একটি নদী কামরূপের পাহাড় থেকে উৎপন্ন হয়ে হাবাং শহরের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। এ নদী দিয়ে বাংলা ও গৌড়ে যাওয়া যেত। এ নদীকে প্রাচীন সুরমা বলে ঐতিহাসিকরা মনে করে থাকেন।
- ত্রিপুরার ইতিহাস থেকে জানা যায়, ১৪ তম শতাব্দী থেকে ১৫ তম শতাব্দীতে ত্রিপুরা রাজ্য উত্তর ও পশ্চিমে ব্রহ্মপুত্র নদ ও দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল, এছাড়াও সেই সময়ে ত্রিপুরা রাজ্যের মধ্যে পূর্বাঞ্চলীয় বঙ্গের এবং বার্মার কিছু অঞ্চল অন্তর্ভুক্ত ছিল। ত্রিপুরার উত্তর, দক্ষিণ ও পশ্চিমে বাংলাদেশ কর্তৃক বেষ্টিত; রাজ্যের পূর্বভাগে ভারতের অপর দুই রাজ্য অসম ও মিজোরাম অবস্থিত।
সুপ্রাচীন মহাকাব্য মহাভারতে এবং পুরাণে ত্রিপুরা নামটির উল্লেখ পাওয়া যায়। এরপর ১৪শ শতকে রচিত রাজমালাতেও ত্রিপুরার উল্লেখ পাওয়া গেছে। এটি ছিল ত্রিপুরার মাণিক্য রাজবংশের কাহিনী। মাণিক্য রাজবংশ ১৯৪৭ সালে ত্রিপুরা ভারতের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার পূর্বাবধি অঞ্চলটি ধারাবাহিকভাবে শাসন করে। কথিত আছে প্রায় ২৫০০ বছর ধরে ১৮৬জন রাজা এই অঞ্চলটি শাসন করেছেন। ভারতে ব্রিটিশ শাসনকালে ত্রিপুরা ছিল একটি স্বাধীন করদ রাজ্য। রাজ্যের সরকারি ভাষা বাংলা ও ককবরক। ত্রিপুরা শব্দটির উৎপত্তি রাজ্যের আদিবাসীদের অন্যতম ভাষা ককবরক থেকে এসেছ বলে অনেকে মনে করেন। ককবরক ভাষায় ‘তৈ’ হল জল। ‘প্রা’ হল নিকটে। জলের নিকটবর্তী স্থান তৈ-প্রা থেকে ধীরে ধীরে তেপ্রা, তিপ্রা এবং শেষে বাঙালি উচ্চারণে ত্রিপুরা হয়েছে বলে অনেকে মনে করেন।জলের নিকটবর্তী ত্রিপুরা বলতে কালিদাস সাগরের তীরবর্তী ত্রিপুরা রাজ্যকেই বোঝানো হয়েছে বলে আমার গবেষণায় প্রতীয়মান ।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সুলতানপুর একটি গ্রামের নাম-সুলতানপুর একটি ইউনিয়নের নাম। সমতট অঞ্চলের বর্তমান তিতাস পাড়ে, হাজার বছর পূর্বে অথৈ জলরাশির মধ্যে যে কয়টি অঞ্চল ভেসে উঠে ছিল সুলতানপুর গ্রামটি তারই একটি। ক্রমান্বয়ে ভেসে উঠা চর হয়ে উঠে সুজলা সুফলা। এমন সুন্দর চরটিতে আস্তে আস্তে বসতি গড়ে উঠে। বসতি স্থাপনকারীরা বেশির ভাগ ধনী ছিল। সুলতানপুর গ্রামের আনাচে কানাচে ইট-পাথরের অট্টালিকার ধ্বংশাবশেষ ইহার সাক্ষ্য বহন করে। এখানে বসতি স্থাপনকারীরা কষ্টি পাথরের মূর্তি স্থাপন করেছিল। বিগত ২০০৮ ইং সনে স্থানীয় একটি পুকুর খননের সময় প্রায় সাত মন ওজনের কষ্টি পাথরের মহাদেব মূর্তি পাওয়া গিয়াছে।
বাংলাদেশে এ পর্যন্ত পাওয়া মূর্তিগুলির মধ্যে এটাই বৃহৎ। এই মূর্তিটি কুমিল্লা যাদুঘরে সংরক্ষিত আছে। এছাড়াও স্বর্ণ ও মূর্তির ভাঙ্গা অংশ পাওয়া গিয়াছে। প্রবীণগণের কাছে জানা যায়, এখানে অন্যান্য সম্প্রদায়ের পাশাপাশি কোচ্ সম্প্রদায়ের বসতি ছিল। শতশত বৎসর ধরে বিবর্তনে ঐ সমস্ত জাতি গোষ্ঠি এক সময় বিলীন হয়ে যায়। আতঃপর বিভিন্ন প্রাচীন বসতি অঞ্চল থেকে ছেড়ে আসা লোকজন নতুন করে আবার বসতি স্থাপণ শুরু করে। ক্রমান্বয়ে আশ পাশের এলাকাও ভরাট হতে থাকে আর ঐ নতুন ভরাট অঞ্চলগুলিতে বসতি স্থাপন শুরু হয়। ঐ সমস্ত প্রাচীন জনপদের পরিচিতি বা নাম কী ছিল তা জানা যায়নি। সুলতানী আমলে এই জনপদটির নাম সুলতানপুর হয়েছে বলে প্রবীনেরা অভিমত প্রকাশ করেন। সুলতানী আমলেই এখানে মুসলিম সমাজ গড়ে উঠতে থাকে। সুলতানপুর জামে মসজিদটি প্রায় ৪০০ বৎসর পূর্বে নির্মিত হয়ে ছিল বলে জানা যায়।
আরও পড়ুনঃ ব্রাহ্মণবাড়িয়া হানাদার মুক্ত দিবস
যখন ব্রিটিশ দখলকারীরা কিছু গ্রাম মিলিয়ে ইউনিয়ন পরিষদ গঠন করতে থাকে তখন বৃহৎ গ্রাম হিসাবে বড় সুলতানপুর কে কেন্দ্র করে সুলতানপুর ইউনিয়ন পরিষদ গঠন করে আর এই ইউনিয়নের সাথে যুক্ত হয় পাশাপাশি পাতৈরহাতা, উরশীউড়া, শিলাউর, হাবলাউচ্চ এবং বিরামপুর মৌজা।
- মেঘনা, তিতাস আর ব্রহ্মপুত্রের বহমান বালুকা ও পলির সঞ্চয়ে প্রাচীন বাংলার সমতট জনপদে জেগে উঠেছিল এক ভবিষ্যৎ এর সমৃদ্ধ জনপদ, নাম তার ব্রাহ্মণবাড়িয়া। ১৬৬০ সালে অঙ্কিত ওলন্দাজ কোম্পানীর গভর্নর ভন ডেন ব্রুক(Van Den Brouke) এর মানচিত্র অনুযায়ী এবং ১৭৬১- ৮০ সালে জেমস্ রেনেল কর্তৃক অঙ্কিত মানচিত্র অনুযায়ী এটা নিশ্চিত হওয়া যায় যে সুরমা ও ব্রহ্মপুত্রের মিলিত স্রোত মেঘনা নাম ধারণ করে নবীনগরের পশ্চিম পাশ দিয়ে বর্তমানে যে ধারা বয়ে চলছে তা ১৭৪০ সালের পরবর্তী ধারা। তার আগে মেঘনার প্রবাহ ছিল নবীনগর ও বাঞ্ছারামপুর এর মধ্যবর্তী বিল সমৃদ্ধ এলাকার মধ্য দিয়ে (নদীর গতি পরিবর্তনের কারণে বিলভূমি সৃষ্টি) প্রবাহমান ছিল। প্রাচীন সোনারগাঁ সরকারের অধীনে যে ৬১ টি পরগনা ছিলো তার মধ্যে বলদাখাল পরগনাভুক্ত ছিল বর্তমান বাঞ্ছারামপুর। ব্রাহ্মণবাড়িয়া ছিল সরাইল পরগনার অন্তর্ভূত। ১৭৪০ সালের পরের কোন এক সময় মেঘনার প্রবাহমান বালু ও পলির সঞ্চয়ে উত্তরের ভেলানগর, রূপসদী, হোগলাকান্দা ও খাগকান্দা পর্যন্ত এক সুন্দর দ্বীপ জেগে উঠেছিল। (মুসলেম বঙ্গের সামাজিক ইতিহাস, মাওলানা আকরাম খা)।
নবী মুহাম্মদ মুস্তাফার (সা) [৫৭০খ্রীস্টাব্দ] দুনিয়ায় আগমনের বহুকাল পূর্বে বহুসংখ্যক আরব বণিক এদেশে (মালাবারে) আগমন করেছিলেন। তারা হরহামেশা এ পথ দিয়ে অর্থাৎ মালাবাদের উপর দিয়ে চট্টগ্রাম এবং সেখান থেকে সিলেট ও কামরূপ হয়ে চীন দেশে যাতায়াত করতেন।
- মেঘনা নদী ও ব্রহ্মপুত্র নদের মিলনস্থলে অষ্টাদশ শতাব্দীতে জেগে উঠা বালুরচর বর্তমান জনপদ ভৈরব। চরাঞ্চল ও জলাভূমিতে উলু-খাগড়ার বন জন্মানোর কারণে স্থানটির প্রথম নাম হয় উলুকান্দি। এলাকাটি ভাগলপুর দেওয়ানদের জমিদারীর অন্তর্ভুক্ত ছিল। নবীনগর উপজেলার বিটঘরের দেওয়ান ভৈরব চন্দ্র রায় ভাগলপুরের জমিদার দেওয়ান সৈয়দ আহমদ রেজা এর কাছ থেকে মৌখিক অনুমতি নিয়ে উলুকান্দি ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় জনবসতি শুরু করেন। জনবসতির পাশাপাশি একটি বাজার গড়ে উঠে। দেওয়ান ভৈরব চন্দ্র রায় তাঁর মা’র নামে বাজারটির নাম দেন কমলগঞ্জ যা প্রকাশ পায় ভৈরব বাজার নামে।
- কসবা উপজেলার একটি ইউনিয়নের নাম বাদৈর। হাতনির বিলের দক্ষিণ পাড়ে বাদৈর গ্রাম অবস্থিত। শত শত বছর আগে বন-বাদাড়ে পরিপূর্ণ ছিল এ গ্রাম। অনেকেই বলেছেন-তিনলাখ পীর থেকে পশ্চিমে নবীনগরের শাহপুর পর্যন্ত অবস্থিত পোড়া রাজার জাঙ্গাল। এটিকে লোকেরা বাঁধ বলত। কারণ বিলের দক্ষিণে অবস্থিত গ্রামগুলোর ফসল রক্ষা পেত বাঁধ থাকার কারণে। এ বাঁধ থেকে বাদৈর নামকরণ করা হয়েছে। এটি গ্রহণযোগ্য মত।
খেওড়া গ্রামের নামকরণঃ
ঐতিহাসিক তথ্য উপাত্ত থেকে পাওয়া যায় প্রাচীনকালে অত্র অঞ্চল ছিল জলমগ্ন যা কালিদহ সায়র বা কালিদাস সাগর নামে অভিহিত। আর এ কালিদহ সায়রের বুকে জেগে উঠা ছোটছোট চরগুলোতেই পরবর্তীতে আস্তে আস্তে জনবসতি গড়ে উঠে।ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কসবা উপজেলার অন্তর্গত আজকের খেওড়া নামক ঐতিহাসিক গ্রাম খানা (কালিদহ সায়রের বুকে জেগে উঠা চর) একসময় নূরনগর পরগণার একটি ব্যস্ততম খেয়া ঘাট ছাড়া আর কিছুই ছিলনা। বর্তমান ভারতের আগরতলা কিংবা ত্রিপুরা তথা নূরনগর পরগণা থেকে বরদাখাত পরগণার সাথে জল পথে যাতায়তের জন্য এ খেয়া ঘাট নদী বন্দর হিসাবে ব্যবহৃত হত। (কালিদহ সায়রের অস্তিত্ব বিলীন হয়ে শেষ পরিচয় সর্পিলাকার রাজার খালের জলযানের খেয়া ঘাট হিসাবেও ইহা বহুকাল ব্যবহৃত হয়েছে।) গায়ের অশিক্ষিত আর অর্ধ শিক্ষিত মানুষের মুখে এ খেয়া ঘাটের উচ্চারণ শোনা যেত খেওয়া (খেওয়া পাড় বা খেওয়া ঘাট)। যা পরবর্তীতে খেওয়া থেকে খেওড়া নাম ধারন করে।
গবেষণা ও বিভিন্ন নির্ভরশীল তথ্যের ভিত্তিতে জানা যায়, মেহারী ইউনিয়নের ৯টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৪, ৫ ও ৬ এই তিনটি ওয়ার্ডের অধিপতি শিমরাইল গ্রামে বর্তমানে প্রায় ২০ হাজার লোকের বসতি। তবে এ গ্রামের গোড়া পত্তন হয় আজ থেকে(প্রায়) ৪৫০ বছর পূর্বে। এখানে এক সময় ছিল(প্রায়) ১০কি.মি. প্রশস্থ অথৈ জলরাশির কালিদাস সায়র। ধারনা করা হয়, আনুমানিক ৭০০ বছর পূর্বে ত্রিপুরা (বর্তমান কুমিল্লা) রাজ্যের কিছু কিছু জায়গায় প্রাকৃতিক দূর্যোগের ফলে পাহাড় ধ্বংস হয়ে কালিদাস সায়র (বা কালিদহ সাগরের)সৃষ্টি হয়েছিল। কালের পরিক্রমায় এ সায়রের মাঝখানে সৃষ্টি হয় একটি লম্বা চর বা আইল। এ আইলকে অবলম্বন করে গড়ে উঠতে থাকে বসতি। সায়রের এক বিশেষ সীমা রেখা ধরে জনপদটি গড়ে উঠার কারণে নাম হয়েছিল “সিম আইল” যা কালক্রমে বিবর্তিত হয়ে সিমরাইল/শিমরাইল নাম ধারণ করে।
নোটঃ #আইল সংস্কৃত আলি শব্দ হতে ব্যুৎপন্ন। যার অর্থ পানি ধরে রাখার নিমিত্তে মাটির বাঁধ।[১]
আইল একটি আঞ্চলিক বাংলা শব্দ, যার অর্থ হয় কৃষি জমির সীমানা প্রাচীর। সাধারণত যেসব জমিতে চাষ হয় সেসব খন্ড খন্ড জমির সীমানা নির্ধারিত হয় এই আইল দ্বারা। আইল মুলত জমির পাশে মাটির ঢিবী দিয়ে সরু লাইন হিসাবে চিহ্নিত করা হয়। সীমানাঃ (বিশেষ্য পদ) সীমা, জমির প্রান্ত, চৌহদ্দি।
সরাইলের নামকরণ:
সরাইল নামকরণ নিয়ে দুটো মত প্রচলিত রয়েছে। আভিধানিক এবং ঐতিহাসিক বিচারে এলাকার লোকজনের নিকট দুটো মতই গ্রহনযোগ্যতা পেয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম একটি :সর অর্থ সরোবর বা হ্রদ। এটাকে ব্যাখ্যা করলে বুঝায় বিশাল জলাশয় অার অাইল শব্দের অর্থ বাঁধ বা উচুভূমি। অর্থাৎ প্রাচীনকালে এ এলাকা ছিল বিশাল জলরাশিতে ভরা এক জলমগ্ন স্হান। কালের বিবর্তনে এখানে ধীরে ধীরে বেশ কিছু চর পড়তে থাকে যা দূর থেকে জমির অাইল বা বাঁধের মত দেখাত। এতে করে বিশাল জলাশয়ের সরঃ জেগে উঠা আইলে বা ভূখন্ডে জনপদ গড়ে উঠতে থাকে অার তাই অর্থাৎ বিশাল জলরাশিতে জেগে উঠা ভূখন্ডে সরঃ+আইল = সরাইল নামে পরিচিতি পায়। ওই বিশাল জলরাশিকে কালীধর সায়র বা কালীদহ সাগর বলে গবেষকরা চিহ্নিত করেছেন, যা প্রাচীনকাল থেকে এ এলাকার বিভিন্ন অঞ্চলে কবি গান ও পুঁথি পাঠ অাসরের গাওয়া বন্দনা- গীতির শুরুতেই উল্লেখ পাওয়া যায়।
নবীনগর নামকরণ:
কথিত আছে, অতীতে এই অঞ্চল নদীগর্ভে বিলীন ছিল। পরবর্তীতে পলি জমে এখানে চর পড়ে। কিছু সংখ্যক লোক এখানে এসে বসতি স্থাপনের জন্য নতুন নতুন ঘর (অর্থাৎ নবীন ঘর) নির্মাণ করে। এই নবীন ঘরই কালক্রমে পরিবর্তিত হয়ে বর্তমানের নবীনগর নামের উৎপত্তি। আবার বলা হয়, সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমান এই চরে প্রথমে বসতি স্থাপন করলে তারা নবী হযরত মুহম্মদ (সাঃ) এর পবিত্র নামানুসারে এই জনপদের নাম রাখেন নবীনগর। তুলনামূলকভাবে দ্বিতীয় ধারার জনশ্রুতির স্বপক্ষে সত্যতা পাওয়া যায়। কারণ ভারতীয় উপমহাদেশের বিখ্যাত সুফি দরবেশ হযরত শাহজালাল (১২৭১ – ১৩৪১) রাহ: ৭০৩ হিজরী মোতাবেক ১৩০৩ ইংরেজী সালে ৩২ বছর বয়সে ইসলাম ধর্ম প্রচারের লক্ষ্যে অধুনা বাংলাদেশের সিলেট অঞ্চলে এসেছিলেন বলে ধারণা করা হয়। হযরত শাহজালাল (র:) ও তার সফরসঙ্গী ওলী আউলিয়ারা এ অঞ্চলের ওপর দিয়ে নদীপথে সিলেট যান বলে জনশ্রুতি আছে। ধারনা করা হচ্ছে, তাঁরা সে সময় যাত্রা বিরতি করে ইসলাম ধর্মের প্রচারের উদ্দেশ্যে এ অঞ্চলে কিছুকাল অবস্থান করেন। উপজেলার পূর্বাঞ্চলের বার আউলিয়ার বিল, তিন লাখ পীরের মাজার, নদী তীরবর্তী নাসিরাবাদ, শাহবাজপুর, নবীনগরসহ বিভিন্ন গ্রামের ইসলামী নামকরণের প্রবনতা দ্বিতীয় জনমতকেই জোরালো করে।
নবীনগর উপজেলার ২০নং কাইতলা দক্ষিণ ইউনিয়নের ৯টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১ থেকে ৭ পর্যন্ত এই সাতটি ওয়ার্ডের অধিপতি কাইতলা গ্রামে বর্তমানে প্রায় ২০ হাজার লোকের বসতি। তবে এ গ্রামের গোড়া পত্তন হয় আজ থেকে(প্রায়) ৪৫০ বছর পূর্বে।কালের বিবর্তনে কালিদাস সায়রের মাঝখানে জেগে উঠে অসংখ্য ছোট ছোট চর। এই চর গুলো এক সময় হয়ে উঠে জেলেদের কর্মমুখর আশ্রয়স্থল। আর এ চর গুলোর মধ্যে কৈবর্ত নামক জেলে সম্প্রদায় যেখানে প্রথম বসতি স্থাপন করে সেটিই আজকের কাইতলা গ্রাম। জল থেকে জাল, জাল থেকে জেলে। তাহলে কি কৈবর্ত থেকে কৈতলা>কাইতলা শব্দের উৎপত্তি?
উপরোক্ত লিখাটুকু অধ্যয়নে অনেকের মনে এমন ধারনা জন্ম নেওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়। মূল রহস্য জানতে হলে আপনাকে আরেকটু সময় ও ধৈর্য সহকারে কাইতলা গ্রামের নামকরণের ইতিকথা পাঠ করতে হবে। তবে এ কথা সত্য যে আলোচ্য জনপদে প্রথম কৈবর্ত সম্প্রদায়ের লোকজনই বসবাস শুরু করে। কাইতলা নামক জনপদে প্রথম বসবাসকারী কৈবর্ত সম্প্রদায় সম্পর্কে কিছু তথ্য জেনে নিই। তাতে জানা হবে কালিদাস সাগরের হালচাল।
কৈবর্ত হিন্দুদের চতুর্বর্ণের অন্তর্ভুক্ত একটি উপবর্ণ। এরা মূলত মৎস্যজীবী সম্প্রদায়। বৈদিক যুগে ভারতে কৃষিজীবী, পশুপালনকারী, শিকারি প্রভৃতি পেশাজীবী মানুষের পাশাপাশি মৎস্যজীবী সম্প্রদায়ের লোকজনও ছিল। ব্রহ্মবৈবর্তপুরাণে উল্লিখিত ঊনত্রিশটি শূদ্র জাতির মধ্যে কৈবর্ত একটি
হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় লিখেছেন –
কৈবর্ত অর্থ দাশ, ধীবর। যারা মৎস্য শিকার করে, তারা কৈবর্ত।
(বঙ্গীয় শব্দকোষ, ১ম খন্ড)
জ্ঞানেন্দ্রমোহন দাসও তাঁর বাঙ্গালা ভাষার অভিধানে প্রায় একই কথা বলেছেন। রাজশেখর বসু চলন্তিকায় বলছেন – ‘কৈবর্ত মানে হিন্দুজাতি বিশেষ। জেলে।’ কাজী আবদুল ওদুদ লিখেছেন – ‘কৈবর্ত : যে জলে বাস করে, জলের সহিত বিশেষ সম্বন্ধযুক্ত হিন্দুজাতি বিশেষ।’ (ব্যবহারিক শব্দকোষ)
আবু ইসহাক সমকালীন বাংলাভাষার অভিধানে বলেছেন – ‘কৈবর্ত অর্থ জেলে, ধীবর, মেছো।’
ভারতকোষে আছে – ‘কে বৃত্তির্যেষাং ইতি কৈবর্ত।’ ‘কে’ শব্দের অর্থ জল। জলে যাদের জীবিকা, তারা কৈবর্ত।
একাদশ-দ্বাদশ শতকে বাংলাদেশে কৈবর্তদের বলা হতো ‘কেবট্ট’। (সদুক্তি কর্ণামৃত নামক কাব্য সংকলন)
প্রাচীনকাল থেকে ভাটির দেশ খ্যাত বাংলায় অসংখ্য নদী-নালা, খাল-বিল থাকায় দেশটি ছিল মাছে ভরা। তাই এ দেশে মৎস্যজীবী সম্প্রদায় গড়ে উঠেছিল। সৃষ্টি হয়েছিল “মাছে ভাতে বাঙালী” প্রবাদ। বাংলায় পাল আমলে (৭৫০-১১৬০) কৈবর্ত নামে একটি ধনবান ও বিত্তবান উপবর্ণ ছিল। তাদের কেউ রাজা, কেউ বা বণিক ছিল। তারা পরবর্তীকালে একটি শক্তিশালী উপবর্ণ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। উত্তরবঙ্গে কৈবর্তরা দিব্যকের নেতৃত্বে দ্বিতীয় মহীপালের (১০৭১-৭২) বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে, যা ‘কৈবর্ত বিদ্রোহ’ নামে পরিচিত। এ বিদ্রোহে জয়ী হয়ে তারা কিছুকালের জন্য একটি কৈবর্তরাজ্য প্রতিষ্ঠা করেছিল। ব্রহ্মবৈবর্তপুরাণে কৈবর্তদের মৎস্যজীবী বলা হয়েছে। বাংলাদেশের সিলেট, ময়মনসিংহ ও ঢাকা অঞ্চলের মৎস্যজীবী ধীবর ও জালিকরা কৈবর্ত হিসেবে পরিচিত। বর্তমানে বাংলাদেশের মৎস্যজীবীরা মালো, বর্মণ, রাজবংশী, কৈবর্ত গঙ্গাপুত্র, জলপুত্র, জলদাস ও দাস হিসেবে পরিচয় দিয়ে থাকে। তবে এখন তাদের অনেকেই লেখাপড়া শিখে পৈতৃক পেশা ত্যাগ করে ব্যবসা ও চাকরী করছে। কৈবর্তদের নিয়ে বাংলাভাষায় বেশ কিছু কালজয়ী উপন্যাস রচিত হয়েছে। এ-জাতীয় উপন্যাসগুলোর মূল উপজীব্য কৈবর্ত-সমাজজীবন। কৈবর্ত-জনগোষ্ঠীর জীবনসংগ্রামের পরিচয় এসব উপন্যাসে স্পষ্ট। বাংলা সাহিত্যে এ-বিষয়ে যে কয়েকটি স্মরণীয় উপন্যাস রচিত হয়েছে সেগুলো হলো – মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের পদ্মানদীর মাঝি (১৯৩৬), অমরেন্দ্র ঘোষের চরকাশেম (১৯৪৯), অদ্বৈত মল্লবর্মণের তিতাস একটি নদীর নাম (১৯৫৬), সমরেশ বসুর গঙ্গা (১৯৫৭), সত্যেন সেনের বিদ্রোহী কৈবর্ত (১৯৬৯), সাধন চট্টোপাধ্যায়ের গহিন গাঙ (১৯৮০), শামসুদ্দীন আবুল কালামের সমুদ্র বাসর (১৯৮৬), মহাশ্বেতা দেবীর কৈবর্ত খন্ড (১৯৯৪), ঘনশ্যাম চৌধুরীর অবগাহন (২০০০) ও শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায়ের গঙ্গা একটি নদীর নাম (২০০২)। উপরোক্ত বিষয়গুলো অধ্যয়নেও প্রতীয়মান এতদ এলাকা এক সময় বিশাল জলরাশিতে নিমজ্জিত ছিল।
নাসিরনগর উপজেলা সদরে অবস্থিত ডাক বাংলো ঘেষে উত্তর এবং পশ্চিম এলাকা বিস্তৃত বিশাল মেদিনী হাওর। অপূর্ব সৌন্দর্যের অধিকারী এ হাওর সহসা মানুষের মন আকৃষ্ট করে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ঘেরা এ হাওরকে প্রকৃতি ষড়ঋতুতে নানা রূপে বিভিন্ন আঙ্গিকে সাজিয়ে দেয় যেন শিল্পীর তুলিতে রঙে রঙে, কখনো সবুজের গালিচা, কখনো কুয়াশার চাদরে আবৃত, তীব্র খরায় খাঁ খাঁ মাঠ, আবার আষাঢ় শ্রাবণের ঢলে বর্ষার বাঁধ ভাঙ্গা স্রোতে থৈ থৈ জলে টইটুম্বুর।বিশাল এই মেদিনী হাওর অনেক ছোট ছোট হাওরের সম্মিলিত রূপ-যেমন বাল্যাজুড়ি, শিংজুড়ি, উত্তর বাল্যা ইত্যাদির মিলিত নাম মেদিনী হাওর। এই হাওরের পরিপূর্ণ সৌন্দর্য দেখা দেয় বর্ষা মৌসুমে। চারদিকে অগাধ জলরাশি। উত্তর ও পশ্চিম দিকের গ্রামগুলো সবুজে সবুজময়। রবীন্দ্রনাথের ভাষায় বলা যায়-
পরপারে দেখি আঁকা
তরু ছায়ামসী মাখা,
গ্রাম খানি মেঘে ঢাকা
প্রভাত বেলা।
সত্যিকার অর্থে মাছমা, গোয়ালনগর, ভিটাডুবি, রামপুর, কৃষ্ণপুর, লাখাই প্রমুখ দূরের গ্রামগুলো মনে হয় জলের উপর ভাসছে। বিশাল এলাকা জুড়ে বিস্তৃত মেদিনী হাওর কালিদহ সাগরের সংকোচিত রূপ বলে মনে করা হয়।
আশুগঞ্জ নামকরণ:
সবুজ শ্যামল পাখি ডাকা ছায়া সুনিবিড় মেঘনা পাড়ের আজকের বিখ্যাত আশুগঞ্জের প্রতিষ্ঠাকাল প্রায় একশত একুশ বছর পূর্বে। আশুগঞ্জ পতিষ্ঠার পূর্বে মেঘনার পূর্ব পাড়ের জনগণ ভৈরব বাজারে গিয়েই তাদের দৈনন্দিন কেনাবেচা করত। প্রতি বুধবার বসত ভৈরবের সপ্তাহিক হাট। ভৈরব বাজারের তদানীন্তন মালিক ভৈরব বাবু কর্তৃক আরোপিত করভারে মেঘনার পূর্ব পাড়ের ক্রেতা-বিক্রেতারা অতিষ্ট হয়ে মেঘনার পূর্ব পাড়ে সৈকতের বালিকণা তথা সোনারামপুর মাঠের উপর হাট বসিয়ে নেয়। প্রতি বুধবারে নদী সৈকতের চিকচিক বালিকণার উপর হাট বসেই চললো। তখন অত্র এলাকা সরাইল পরগনার জমিদারের অধীন ছিল। তৎকালীন সরাইল পরগনার জমিদার কাশিম বাজারের মহারাজা আশুতোষ নাথ রায় আশাব্যঞ্জক এ সংবাদ জানতে পেরে তিনি উদ্যোক্তাদের ডেকে পাঠান। উদ্যোক্তাগণ মহারাজার ডাকে সাড়া দিয়ে নিজেদের দুর্গতি অবসানের জন্য মহারাজার নামের সাথে মিল রেখে ঐ হাটকে ‘‘আশুগঞ্জ’’ নামকরণ করেন। নদী সৈকতের চিকচিক বালিকণার উপর হাট থেকেই আজকের আশুগঞ্জ যা একসময় নদীগর্ভে বিলীন ছিল বলে প্রতীয়মান।
শাহবাজপুর টাউন:
সরাইল উপজেলার অন্তর্গত একটি আধুনিক উন্নয়ন মূখী প্রশাসনিক অঞ্চল। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষে স্বপ্ন বাস্তবায়নের স্যাটেলাইট নগরীর কয়েকটির মাঝে এটি হচ্ছে একটি আধুনিক ব্যস্ততম জনপদ। এই অঞ্চলটি একটি প্রাচীন জনপদ। বৌদ্ধ যুগে এই অঞ্চলটি একসময় বিশাল রাজ্য ছিল, যখন বিশ্বখ্যাত পরিব্রাজক হিউ-এন-সাং চীন থেকে এ অঞ্চলে পদব্রজে সফরে এসেছিলেন তখন এই এলাকার নাম ছিল সমতট। পরবর্তীকালে মুসলিম শাসনামলে এর নাম পরিবর্তন করা হয়, ভেঙ্গে ফেলা হয় এই রাজ্যকে এবং গঠন করা হয় কয়েকটি পরগনায়, রাজ্যের সমতট জনপদ কে শাহবাজ নামে নামকরণ করা হয়, পালাক্রমে শাহবাজ থেকে শাহবাজপুর তথা শাহবাজপুর টাউন।
এই অঞ্চলের জনপদ হওয়া নিয়ে মত বিভেদ ও দুটি ধারার জনশ্রুতির প্রচলন রয়েছে। প্রথম ধারার জনশ্রুতি অনুসারে প্রাচীন ইতিহাসে মুসলিম শাসনামল শাসনকালে সরাইল প্রাচীন জনপদ বলে এ জনশ্রুতি হয়। অন্যদিকে দ্বিতীয় ধারার জনশ্রুতি অনুসারে মুসলিম শাসনামলে মোগল সম্রাট আকবরের শাসনামলের প্রতিনিধি, উনচল্লিশটি নৌবহরের অধিনায়ক শাহবাজ আলীর পরিকল্পনার সময় কালে রাজ্যের শাসনকার্যের রাজধানী করেন এই শাহবাজপুর জনপদে, তবে ইংরেজ শাসনামলে ভারত বর্ষের প্রথম ম্যাপ রোনাল্ড রে প্রণীত মানচিত্রে এই অঞ্চলের নাম গুরুত্বের সাথে উল্লেখ থাকায় এর প্রাচীনত্ব প্রমাণিত হয়। সাধারণত জলপথ বা কোন যোগাযোগের কেন্দ্রে জনপদ নগর/টাউন গড়ে উঠে; কিন্তু সরাইল নদীর কাছে হলেও নদীপথ বা যোগাযোগের কেন্দ্রে অবস্থিত নয়। তুলনামূলকভাবে দ্বিতীয় ধারার জনশ্রুতির স্বপক্ষে সত্যতা পাওয়া যায়। ব্রিটিশ আমল থেকে শাহবাজপুর তিতাস নদীর তীরে বন্দরনগরী ব্যবসাকেন্দ্র হিসেবে সুপরিচিত ছিল। উনচল্লিশটি নৌবহরের অধিনায়ক শাহবাজ আলীর শাসনকার্যের রাজধানী যেখানে স্থাপন করা হয় সেখানে তার আশে পাশে নিশ্চয়ই বিশাল জলরাশি ছিল বলে ধারনা করা হয়।
কিশোরগঞ্জ:
কিশোরগঞ্জের ইতিহাস সুপ্রাচীন। এখানে প্রাচীনকাল থেকেই একটি সুগঠিত গোষ্ঠী আছে এবং এখনও তা বিরাজ করছে। ষষ্ঠ শতকে বত্রিশ এর বাসিন্দা কৃষ্ণদাস প্রামাণিকের ছেলে নন্দকিশোর ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে একটি গঞ্জ প্রতিষ্ঠা করেন; এ গঞ্জ থেকেই কালক্রমে নন্দকিশোরের গঞ্জ বা ‘কিশোরগঞ্জ’-এর উৎপত্তি হয়। একাদশ ও দ্বাদশ শতকে পাল, বর্মণ ও সেন শাসকরা এ অঞ্চলে রাজত্ব করে। তাদের পর ছোট ছোট স্বাধীন গোত্র কোচ, হাজং, গারো এবং রাজবংশীরা এখানে বসবাস করে। ১৪৯১ সালে ময়মনসিংহের অধিকাংশ অঞ্চল ফিরোজ শাহ-এর অধীনে থাকলেও কিশোরগঞ্জ সেই মুসলিম শাসনের বাইরে রয়ে যায়। পরবর্তীতে মুঘল সম্রাট আকবরের সময়কালে বেশিরভাগ অঞ্চল মুঘল সাম্রাজ্যের অধীনে থাকলেও জঙ্গলবাড়ি ও এগারসিন্দুর কোচ ও অহম শাসকদের অধীনে রয়ে যায়। ১৫৩৮ সালে এগারসিন্দুরের অহম শাসক মুঘলদের কাছে ও ১৫৮০ সালে জঙ্গলবাড়ির কোচ শাসক ঈসা খাঁর কাছে পরাজিত হয়। ১৫৮০ সালে বার ভূঁইয়াদের প্রধান ঈসা খাঁ এগারসিন্দুরে আকবরের সেনাপতি মান সিংহকে পরাজিত করেন। ঈসা খাঁর মৃত্যুর পর জঙ্গলবাড়ি ও এগারসিন্দুর তার পুত্র মুসা খাঁর অধীনে আসে কিন্তু ১৫৯৯ সালে তিনি মুঘলদের কাছে পরাজিত হন।
বাংলাদেশের সপ্তম বৃহত্তম শহর ময়মনসিংহ। বাংলাদেশের প্রধান শহরগুলোর মধ্যে এটি অন্যতম। জেলার প্রায় কেন্দ্রভাগে পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে অবস্থিত এটি। ১৭৭৯-তে প্রকাশিত রেনেল এর ম্যাপে মোমেসিং নামটি বর্তমান ‘ময়মনসিংহ’ অঞ্চলকেই নির্দেশ করে। তার আগে আইন-ই-আকবরীতে ‘মিহমানশাহী’ এবং ‘মনমনিসিংহ’ সরকার বাজুহার পরগনা হিসাবে লিখিত আছে; যা বর্তমান ময়মনসিংহকেই ধরা যায়। ময়মনসিংহ জেলায় জালের মত ছড়িয়ে রয়েছে অনেকগুলো নদী। এত এত নদী প্রমাণ করে একসময় এ এলাকা পানির নিচ থেকে জেগে উঠেছে।
সেগুলো হচ্ছে পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদী, কাঁচামাটিয়া নদী, মঘা নদী, সোয়াইন নদী, বানার নদী, বাইলান নদী, দইনা নদী, পাগারিয়া নদী, সুতিয়া নদী, কাওরাইদ নদী, সুরিয়া নদী, মগড়া নদী, বাথাইল নদী, নরসুন্দা নদী, নিতাই নদী, কংস নদী, খাড়িয়া নদী, দেয়ার নদী, ভোগাই নদী, বান্দসা নদী, মালিজি নদী, ধলাই নদী, কাকুড়িয়া নদী, দেওর নদী, বাজান নদী, নাগেশ্বরী নদী, আখিলা নদী, মিয়াবুয়া নদী, কাতামদারী নদী, সিরখালি নদী, খিরু নদী, বাজুয়া নদী, লালতি নদী, চোরখাই নদী, বাড়েরা নদী, হিংরাজানি নদী, আয়মন নদী, দেওরা নদী, থাডোকুড়া নদী, মেদুয়ারি নদী, জলগভা নদী, মাহারী নদী।
মেঘনা, তিতাস, বুড়ি ও কুলকুলিয়া ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার প্রধান নদীগুলোর অন্যতম।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া এ জেলার প্রধান প্রধান শাখা নদী গুলো হল-
১.হুরল, ২.সিংরা কালাছড়া, ৩.বালুয়া, ৪.আউলিয়া জুড়ি (আলিয়াজুড়ি নদী), ৫.পাগলা, ৬.ডোল ভাঙ্গা, ৭.বলভদ্র (সম্ভবত বলভদ্রা নদী। লংগন আর বলভদ্রা একই হিসেবে দেখানো হয়েছে একটি সূত্রে ), ৮.বিজনা, ৯.লংঘন (সম্ভবত লংগন নদী), ১০.লহুর (সম্ভবত লহর নদী), ১১.রোপা, ১২.সোনাই ও ১৩.ছিনাইহানি প্রভৃতি।
এবার উপজেলাভিত্তিক নদীর নাম জানা যাক:
- কসবা উপজেলা: ১.তিতাস, ২.সালদা, ৩.বিজনা, ৪.সিনাই, ৫.সাঙ্গুর, ৬.বুড়ি, ৭.কালিয়ারা নদী।
উল্লেখযোগ্য কিছু খালঃ ১.রাজার খাল, ২.অদের খাল।
উল্লেখযোগ্য কিছু বিলঃ ১.হাতনীর বিল, ২.সিমরাইলের বিল ও ৩.কুটির বিল।
- নবীনগর উপজেলা: ১.বুড়ি, ২.তিতাস নদী, ৩.মেঘনা, ৪.যবনাই, ৫.পাগলা ও ৬.ভাটা।
- নাসিরনগর উপজেলা: ১.মেঘনা, ২.লঙ্গন (সম্ভবত লংগন নদী), ৩.ধলেশ্বরী, ৪.খয়রাতি, ৫.খাস্তি ও চিকনদিয়া, ৬.বলভদ্র (সম্ভবত বলভদ্রা নদী। লংগন ও বলভদ্রা একই নদী হিসেবে দেখানো হয়েছে একটি সূত্রে) ও তিতাসের শাখা নদী – ৭.বেমালিয়া ও ৮.হারাল নদী।
- সরাইল উপজেলা: ১.মেঘনা, ২.তিতাস, ৩.বগদিয়া ও ৪.ভৈরব নদী।
উল্লেখযোগ্য কিছু বিলঃ ১.আকাশী বিল ২.শাপলা বিল
- আশুগঞ্জ উপজেলা: ১.মেঘনা।
- বাঞ্ছারামপুর উপজেলা: ১.মেঘনা ও ২.তিতাস।
উল্লেখযোগ্য কিছু বিলঃ ১.চন্দন বিল ও ২.বামন্ধার বিল।
- আখাউড়া উপজেলা: ১.হাওড়া ও ২.তিতাস নদী।
উল্লেখযোগ্য কিছু বিলঃ ১.ঘাগুটিয়া বিল ২.মিনারকুট বিল ও ৩.পিপুলি বিল।
- বিজয়নগর উপজেলা: ১.আউলিয়া জুড়ি নদী (আলিয়াজুড়ি নদী)।
উল্লেখযোগ্য বিলঃ ১.ছত্তরপুর (ছতুরপুর) শাপলা বিল।
- ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলা: ১.তিতাস নদী, ও ২.আউলিয়া জুড়ি নদী (আলিয়াজুড়ি নদী – সামান্য অংশ)।
উল্লেখযোগ্য খালঃ ১.কুরুলিয়া খাল (এন্ডারসন খাল)।
কিছু নদী ও খালের বিশেষ তথ্যাদিঃ
১. সালদা নদী –
- সালদা নদী ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের পাহাড়ি অঞ্চল থেকে উৎপত্তি লাভ করে কুমিল্লা জেলার ব্রাহ্মণপাড়ার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। তারপর এটি কিছুদুর প্রবাহিত হয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কসবা উপজেলার বুড়ি নদীতে পতিত হয়েছে। এটি একটি আন্তঃসীমান্ত নদী, নদীটির দৈর্ঘ্য ২৩ কিলোমিটার।
- ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সালদা অববাহিকায় বন্যা প্রবণ এলাকা ৫২ বর্গ কিলোমিটার (২০ বর্গমাইল)। (সালদা অববাহিকায় বন্যা প্রবণ এলাকার তথ্যসূত্রঃ বই ‘বাংলাদেশের নদীমালা – প্রকৌশলী আবদুল ওয়াজেদ’)
২. বেমালিয়া নদী –
- কুন্ডার দক্ষিণ-পশ্চিম দিক হয়ে মহিষবেড়-এর উত্তর দিক দিয়ে পশ্চিম দিকে প্রবহমান রয়েছে তিতাসের শাখা নদী – বেমালিয়া।
৩. তিতাস –
- তিতাস নদীর উৎপত্তি ভারতীয় অঙ্গরাজ্য ত্রিপুরার রাজধানী আগরতলার কাছাকাছি কোথাও। পরে এটি সেখান থেকে প্রবাহিত হয়ে বাংলাদেশের ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আখাউড়া উপজেলা দিয়ে প্রবেশ করে দেশে। পরে এটি শাহবাজপুর টাউন অঞ্চল হয়ে ভৈরব-আশুগঞ্জের সীমানা ঘেঁষে বহমান অন্যতম বৃহৎ নদী মেঘনার সাথে মিশে গেছে।
- এখানে উল্লেখ্য যে, প্রকৌশলী আবদুল ওয়াজেদ রচিত ‘বাংলাদেশের নদীমালা’ বইটিতে মেঘনা নদীর শাখা নদী হিসেবে দেখানো হয়েছে তিতাস নদীকে। আরও বলা হয়েছে যে, মেঘনা হতে ছোট ছোট শাখা বেরিয়ে (তিতাস সহ কিছু নদীর নাম বলা হয়েছে) ত্রিপুরার বিভিন্ন পাহাড়ি নদীর পানি বহন করে পুনরায় মেঘনাতে পড়েছে।
- এটি বাংলাদেশ-ভারতের আন্তঃসীমানা সংশ্লিষ্ট নদী হিসেবে পরিচিত, এর গড় দৈর্ঘ্য প্রায় ৯৮ কিলোমিটার।
- ত্রিপুরায় বাংলা ভাষায় ‘হাওড়া নদী’ এবং স্থানীয় কোকবোরোক ভাষায় ‘সাঈদ্রা নদী’ নামে তিতাস নদীর নামকরণ করা হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশে নদীটি ”তিতাস নদী” হিসেবে পরিচিতি পায়। উল্লেখ্য, হাওড়া নদীকে আলাদা নদী হিসেবেও বিবেচনা করা হয়।
( তিতাস মেঘনার শাখা নদী ও মেঘনা থেকে বেরিয়ে ত্রিপুরা হয়ে পুনরায় মেঘনাতে পড়ার তথ্যসূত্রঃ বই ‘বাংলাদেশের নদীমালা – প্রকৌশলী আবদুল ওয়াজেদ’)
৪. পুরনো তিতাস নদী –
- এই নামে একটি নদীর উল্লেখ আছে উইকিপিডিয়ার ‘বাংলাদেশের নদীর তালিকা [ বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)- দক্ষিণ – পূর্বাঞ্চলের নদী] ‘ শীর্ষক তালিকা নিবন্ধে।
- কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও নরসিংদী জেলার একটি নদী,নদীটির দৈর্ঘ্য ৫৭ কিলোমিটার।
- এটি নরসিংদী সদর উপজেলা, নবীনগর উপজেলা, মুরাদনগর উপজেলা, হোমনা উপজেলা এবং বাঞ্ছারামপুর উপজেলা দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।
৫. বুড়ি নদী –
- কুমিল্লা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার একটি নদী, নদীটির দৈর্ঘ্য ২৬ কিলোমিটার।
- কুমিল্লা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নূরনগর ও বরদাখাত পরগনার মাঝখান দিয়ে বিল-ঝিলের উপর দিয়ে সর্পিলাকারে বয়ে চলা মুরাদনগর-কসবা-নবীনগরের সম্মিলন পয়েন্ট এই বুড়িনদী।
- বুড়ি নদীর উৎস হল সালদা নদী, নদীটি নবীনগরের লঞ্চঘাট সংলগ্ন তিতাসের সাথে মিশেছে।
- উল্লেখ্য, প্রকৌশলী আবদুল ওয়াজেদ রচিত ‘বাংলাদেশের নদীমালা’ বইয়ে বুড়ী নদীকে গোমতী নদীর একটি শাখা নদী হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এখানে একটি তথ্য উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, গোমতী নদী কুমিল্লা জেলার প্রধান নদী ও পাহাড়ি নদী।
- বর্তমানে নদীটি অদৃশ্যপ্রায় – খাল, ডোবা, বসতভিটা ও কৃষি জমিতে পরিণত হয়েছে। বুড়ি নদীটি নবীনগর উপজেলা থেকে কসবা উপজেলার কুটি হয়ে ধরখার পর্যন্ত প্রবাহমান ছিল। বর্তমানে নদীর প্রায় ১৯ কি.মি. ভরাট হয়ে গেছে।
(বুড়ি নদী গোমতী নদীর শাখা নদী এবং কুমিল্লার প্রধান নদী ও পাহাড়ি নদীর সূত্রঃ বই ‘ বাংলাদেশের নদীমালা – প্রকৌশলী আবদুল ওয়াজেদ ‘)
৬. লহর নদী –
- ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও হবিগঞ্জ জেলার একটি নদী,এটি একটি আন্তঃসীমান্ত নদী। নদীটির দৈর্ঘ্য ২০ কিলোমিটার।
৭. লংগন বা, বলভদ্রা নদী –
- লংগন নদী বা বলভদ্রা নদী ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও হবিগঞ্জ জেলার একটি নদী,নদীটির দৈর্ঘ্য ৩৮ কিলোমিটার।
৮. সোনাই নদী –
- সোনাই নদী ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও হবিগঞ্জ জেলার একটি নদী। এটি একটি আন্তঃসীমান্ত নদী,নদীটির দৈর্ঘ্য ২৪/৩০ কিলোমিটার।
- সোনাই নদী ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের পাহাড়ি অঞ্চল থেকে উৎপত্তি লাভ করে হবিগঞ্জ জেলার মাধবপুর উপজেলা দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। তারপর এটি মাধবপুর উপজেলার খাস্তি নদীতে পড়েছে।
৯. হাওড়া নদী –
- ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার একটি নদী, এটি একটি পাহাড়ি নদী । আর পাহাড়ি নদীগুলো সঙ্গত কারণে বন্যা প্রবণ।
- এটি বাংলাদেশ – ভারতের মধ্যকার আন্তঃসীমান্ত নদী, বাংলাদেশে ব্রাহ্মণবাড়িয়া অংশে এর দৈর্ঘ্য ১০ কিলোমিটার ও ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য অংশে ৫০ কিলোমিটার।
- নদীটিতে সারাবছর পানিপ্রবাহ থাকে না। তবে এই নদীতে জোয়ারভাটার প্রভাব আছে, জুলাই – আগস্টে বেশি পানিপ্রবাহের সময় প্রবাহের পরিমাণ দাঁড়ায় ৯৮ ঘনমিটার / সেকেন্ড।
- উৎপত্তি ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের পাহাড়ি অঞ্চল থেকে, বাংলাদেশে প্রবেশ আখাউড়া উপজেলা দিয়ে আর কিছুদূর প্রবাহিত হয়ে উপজেলার তিতাস নদীতে (ধরখার – উজানিস্বারের কাছাকাছি) পতিত হয়েছে।
(পতিত হবার তথ্যসূত্র নিশ্চিতকরণেঃগুগল ম্যাপ, পাহাড়ি নদী ও বন্যা প্রবণ তথ্যসূত্রঃ বই ‘বাংলাদেশের নদীমালা – প্রকৌশলী আবদুল ওয়াজেদ’)
১০. পাগলা নদী –
- পাগলা নদীর সম্ভাব্য উৎপত্তিস্থল পুরাতন কৃষ্ণনগর লঞ্চঘাটে প্রবেশের পূর্বে অবস্থিত ত্রি-মোহনা এবং সম্ভাব্য সমাপ্তি ঐতিহ্যবাহী বাইশমৌজা বাজারের নিকটে মেঘনা নদী। (গুগলম্যাপ)
১১. আউলিয়া জুড়ি নদী (আলিয়াজুড়ি নদী)
- আউলিয়া জুড়ি নদীটি জেলা শহরের শিমরাইল কান্দির ‘গাও – গেরাম রেস্টুরেন্ট ও বিনোদন পার্ক ‘ এর সামান্য উত্তর – পূর্বে তিতাস নদীর কাছাকাছি স্থান থেকে শুরু হয়েছে এবং মনিপুর, লক্ষীমুড়া,চম্পকনগর হয়ে ভিটিদাউদপুর পর্যন্ত গেছে। এরপর নদীটির অস্তিত্ব গুগল ম্যাপে পাওয়া যায় না।
- গুগল ম্যাপে নাম আলিয়াজুড়ি নদী। কেউ কেউ অবশ্য একে তিতাস / তিতাসের শাখা নদী / মনিপুরী নদী প্রভৃতি নামেও ডাকে।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ খালঃ
১. কুরুলিয়া খাল (এন্ডারসন খাল) –
- ত্রিপুরা রাজ্যের পাহাড়ি ঢলের তোড়ের আঘাত থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরকে রক্ষার জন্য এবং শহরের দুই দিকের তিতাসের মধ্যে সংযোগ স্থাপনের জন্য (জনশ্রুতি) বৃটিশ আমলে মহকুমা প্রশাসক এন্ডারসন স্বেচ্ছাশ্রমে শিমরাইল কান্দি ও ভাদুঘর অংশের তিতাস নদী থেকে কাউতলি,উলচাপাড়া হয়ে আমিনপুরের কাছাকাছি তিতাস নদী পর্যন্ত কৃত্রিম খালটি খনন করান।
- তখন নাম ছিল এন্ডারসন খাল, এখন নাম কুরুলিয়া খাল।
২. অদের খাল –
- নবীনগর উপজেলার সর্ব দক্ষিণের শেষ সীমানা এবং কসবা উপজেলার উত্তরের শেষ সীমানার (বল্লভপুর ও শিমরাইল গ্রামের) মধ্য দিয়ে পূর্ব থেকে পশ্চিম দিকে কূলকূল করে বয়ে যাওয়া স্রোতধারার নাম অদের খাল।
- গাজীরহাট – বাঙ্গরা৷ সংযোগ ব্রিজ থেকে দক্ষিণে-বৈলঘর, হাটখোলা, সাহগোদা, চন্দনাইল গ্রাম এবং উত্তরে–রাজাবাড়ী, ইসাপুরা, সাতমোড়া, বাউচাইল ,শাহপুর গ্রাম রেখে ঠিক পশ্চিম দিকে প্রবাহিত হয়ে পিপিরা বাজার নৌকা ঘাটে তিতাস নদীর সাথে মিলিত হয়েছে।
গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিলঃ
১. ঘাগুটিয়া ও মিনারকুট বিল –
- আখাউড়া উপজেলার মনিয়ন্দ ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী গ্রাম ঘাগুটিয়া। সেখানে রয়েছে নজরকাড়া পদ্মফুলের বিশাল সমাহার, ঘাগুটিয়ার পদ্মবিল বলা হলেও বিল মূলত ২ টি – ঘাগুটিয়া ও মিনারকুট বিল। (বিভিন্ন সূত্রে পাওয়া তথ্য)
২. আকাশী হাওড় / বিল –
- সরাইল উপজেলার কালিকচ্ছ ইউনিয়নের ধরন্তি এলাকায় রয়েছে আকাশী হাওড় / আকাশী বিল।
- পশ্চিমে বিশাল মেঘনা ও পূর্বে তিতাস নদী আর মাঝখানে রয়েছে এই হাওড় / বিল,বর্ষাকালে পানিতে পরিপূর্ণ হয়ে গেলেই এটি মিনি কক্সবাজার হয়ে ওঠে এবং প্রচুর মানুষের আনাগোনা হয়। [OFFROAD BANGLADESH: Nayeem এবং বিডিলাইভ২৪]
৩. ছত্তরপুর (ছতুরপুর) শাপলা বিল –
- ছত্তরপুর (ছতুরপুর) শাপলা বিলটি বিজয়নগর উপজেলার ছত্তরপুরে অবস্থিত। বিলটিতে বর্ষাকালে অনেক লাল শাপলা ফুটে এবং অনেকেই দেখতে যায়। (বিভিন্ন সূত্র – বিশেষ করে Wish For Better Brahmanbaria গ্রুপ )
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার এতগুলো নদী, খাল ও বিল কী প্রমাণ করে? অতীতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আসলেই কি সমতল ভূমি ছিল? নাকি কালিদাস সাগর থেকে জেগে উঠা ছোট ছোট চরের সমষ্টি?
গ্রন্থপঞ্জি:
- Ghulam Husain Salim, The Riyazussalatin, (tr. Maulavi Abdus Salam), The Asiatic Society, Calcutta, 1902; Mirza Nathan,
- Baharistan-i-Ghaybi, (tr. M.I. Borah), Vol. 1, Government of Assam, Assam, 1936; Abul Fazl Allami,
- The Ain-i-Akbari, (tr. H. Blochmann), New Delhi, 1965(Second edition);
- Abul Fazl Allami, The Akbarnama, (tr. H. Beveridge), Vol. III, Ess Ess Publications, Delhi, 1977;
- আবদুল করিম বাংলার ইতিহাস: মোগল আমল, ইন্সটিটিউট অব বাংলাদেশ স্টাডিজ, রাজশাহী, ১৯৯২।
- বঙ্গীয় শব্দকোষ।। হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়।
- মুসলেম বঙ্গের সামাজিক ইতিহাস।।মাওলানা আকরাম খাঁ
- পদ্মপুরান।। বেদব্যাস
- রাজমালা।।কৈলাস চন্দ্র সিংহ
- ব্রাহ্মণবাড়িয়া নামকরণের ইতিকথা।। এস এম শাহনূর
- বাংলাদেশের লোকজ সংস্কৃতি গ্রন্থমালা:ব্রাহ্মণবাড়িয়া-শামসুজ্জামান খান।
- অপারেশন কিল এন্ড বার্ন:যুদ্ধাপরাধ (কুমিল্লা,ব্রাহ্মণবাড়িয়া,চাঁদপুর) দলিলপত্র-আবুল কাশেম হৃদয়।
- ভাষা-আন্দোলনের ঐতিহাসিক পটভূমিকা এবং ভাষা-আন্দোলনে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-এডভোকেট আবদুস সামাদ।
- ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ইতিবৃত্ত-মুহাম্মদ মুসা।
- যাঁদের জন্য ব্রাহ্মণবাড়িয়া ধন্য-রেজাউল করিম।
- ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার ইতিহাস-আমির হোসেন।
- ব্রাহ্মণবাড়িয়া চাঁদপুর কুমিল্লা ইতিহাস পরিক্রমা-অধ্যাপক সৈয়দ আব্দুস সাত্তার
- ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ইতিহাস ও ঐতিহ্য-সিরাজুল করিম
- ব্রাহ্মণবাড়িয়ার উলামা-মাশায়েখ জীবন ও কর্ম-মাওলানা মুনীরুল ইসলাম
- ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নদী, খাল ও বিল (একটি গবেষণা কর্ম)→ মোঃ ইব্রাহিম (তথ্য সংগ্রহ ও লিপিবদ্ধকরণ)
- উইকিপিডিয়া
লেখক: এস এম শাহনূর
(কবি, মুক্তিযুদ্ধ, লোকজ সংস্কৃতি ও ইতিহাস গবেষক)